শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মানিতে শিশুদের অপরাধ যখন শাস্তিযোগ্য

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ২৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ধর্ষকের বয়স প্রশ্নে জার্মানিতে চলছে তুমুল বিতর্ক। এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পাঁচ কিশোরের বিরুদ্ধে। কিন্তু বর্তমান আইনে তাদের সবাইকে শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়।

সম্প্রতি জার্মানির মু্যলহাইম শহরের এক খেলার মাঠের পেছনের ঝোপে এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ পাঁচ কিশোরের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ১৪ আর বাকি দুজনের বয়স ১২ বছর। পোষা কুকুরকে অনুসরণ করে স্থানীয় কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই কিশোরের কাছ থেকে ১৮ বছর বয়সী তরুণীকে উদ্ধার করেন। বাকি তিন কিশোর তখন ঘটনাস্থলে ছিল না। পরে পুলিশ জানতে পারে এ ঘটনায় পাঁচজন জড়িত। পাঁচজনই বেলজিয়ান বংশোদ্ভূত স্কুলছাত্র। সবাইকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তাদের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়। তবে এরপর এক ১৪ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জার্মানির আইন অনুযায়ী, বয়স ১৪ বছরের কম হলে কাউকে কোনো অপরাধের জন্য দায়ী করা যায় না, দায় নিতে হয় সংশ্লিষ্ট কিশোরের বাবা-মা, আইনি অভিভাবক বা স্থানীয় যুব উন্নয়ন কার্যালয়কে। ফলে ঘোরতর অভিযোগ উঠলেও কার্যত সন্দেহভাজন ধর্ষকদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা যাবে না।

এমন আইন থাকলে কি কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা কমানো যাবে? অপরাধ কমানো যাবে? জার্মানির পুলিশ ইউনিয়ন (জিডিপি) তা মনে করে না। তারা ইতোমধ্যে কিশোরদের অভিযুক্ত করার নূ্যনতম বয়স ১৪ থেকে কমিয়ে ১২ বছর করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু জার্মানির বিচারকদের সংগঠনের বিরোধিতা করেছে।

আপাতত পাঁচ সন্দেহভাজনের মধ্যে একজনকেই আটক রেখেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আগেও দুবার যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

একেক দেশে একেক আইন

২০১২ সালে দিলিস্নতে ধর্ষণের পর চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিলে গুরুতর আহত হন নির্ভয়া। পরে তার মৃতু্য হয়। অভিযুক্তদের একজনের বয়স আঠারোর কম হওয়ায় তাকে পাঠানো হয় সংশোধন কেন্দ্রে। ভারতের মতো অনেক দেশেই এখনো অপ্রাপ্তবয়স্কদের কঠোর শাস্তির আওতায় নেয়ার আইন নেই।

ইউরোপ বা পশ্চিমের সব দেশেও আইন এক নয়। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বয়স ১০ হলেই কাউকে অপরাধের জন্য দায়ী করা যায়। স্কটল্যান্ডে কিছু ক্ষেত্রে বয়স আট হলেও দায় এড়ানো যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত করার নূ্যনতম বয়স ১১। তবে সেখানে ৫০টি রাজ্যের অনেকগুলোতেই আবার নূ্যনতম কোনো বয়স নির্ধারণ করা নেই, যার অর্থ, চাইলে যে কোনো বয়সের কিশোরকেই শাস্তি দেয়া সম্ভব।

জার্মানিতে আইনি সহায়তা

জার্মানিতে রয়েছে লাখো রকমের বিমা। সেগুলোর একটি হ"েছ আইনি সহায়তা পাওয়ার বিমা। মানে আপনি অধিকারের জন্য লড়তে চাইলে পাবেন আইনজীবী এবং অন্যান্য সুবিধা। জার্মানিতে দাঁড়ায় আইনি খরচ বিমা বেশ জনপ্রিয়।

জার্মানরা মূলত দুটি কারণে এই বিমা করেন। প্রথমত, আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে যাতে সেটা দ্রম্নত পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে মামলা মোকাদ্দমার খরচ অনেক। বিমা থাকলে সেই খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়। বিমা থাকার কারণে কারও অধিকার ভঙ্গ হলে বা কেউ যদি কোনো অন্যায়ের শিকার হন, তাহলে সহজেই তিনি আদালতের দ্বারস্' হতে পারেন। এই সুযোগ আছে বলে সাধারণ মানুষ অনেকটাই আশ্বস্ত থাকেন। ফলে অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েও আদালতের শরণাপন্ন হন অনেকে। এই তো জার্মানিতে শুধু সন্দেহের বশে কাউকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ নেই। পুলিশের মতা খুবই সীমিত। নেহাত যদি কাউকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয় তবে আইনশ"ড়খলা বাহিনী শুধু অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার পর সেটা করতে পারে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সন্দেহভাজনকে আদালতে তুলতে হয়।

আর সন্দেহভাজন কাউকে নিয়ে 'মিডিয়া ট্রায়ালের' সুযোগও নেই। কেননা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যমে তার পুরো নাম, ছবি বা তার ঠিকানা কিংবা পরিবারের পরিচয় প্রকাশের সুযোগ নেই। একজন ব্যক্তির গোপনীয়তা আইন দিয়ে কঠোরভাবে সুরতি।

জার্মানিতে ম"তু্যদন্ড নেই। শাস্তি প্রদানের েেত্র অপরাধীকে শোধরানোর সুযোগ আছে কিনা সেটা বিশেষভাবে বিবেচনায় আনা হয়। লঘু অপরাধের েেত্র শাস্তি হিসেবে সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগও দেয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59372 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1