অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

গ্রামের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষ কলিমদ্দি। মাঠে একখন্ড জমি আছে তার। সেখানে চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করে। কিছুদিন ধরে শুনছে তাদের পাড়ার রহিম মিয়া এই জমি জোর করে দখল নেবে। কলিমদ্দির বাবা এই জমি রহিম মিয়ার শ্বশুরের কাছ থেকে ১৫ বছর আগে খরিদ করেছিল। কলিমদ্দির বাবা মারা গেছেন প্রায় ১০ বছর। রহিম মিয়া পাড়ার লোকের কাছে বলে বেড়াচ্ছে যে, তার শ্বশুর তার স্ত্রীকে এই জমি দান করে গেছে। রহিম মিয়ার ছেলে কলেজে পড়ে, রাজনীতি করে, দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কলিমদ্দি রীতিমতো রহিম মিয়ার বিরুদ্ধে ক্যানভ্যাস করেছে। তাই রহিম মিয়া হয়রানি করার জন্য কলিমদ্দির জমি দখল করে শায়েস্তা করতে চায়।

কলিমদ্দি এই অবস্থায় দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মামলা করতে পারে। আদালত ঘোষণা দিতে পারে এই জমির স্বত্ব দখলকার কলিমদ্দি। এই জমিতে রহিম মিয়া কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। উলেস্নখ্য, যদি রহিম মিয়া ইতোমধ্যে কলিমদ্দির জমি জোর করে দখল করে নিত তবে আর ঘোষণামূলক মামলা হতো না। তখন উচ্ছেদের মামলা করতে হতো। সে ক্ষেত্রে এই মামলা আর ঘোষণামূলক মামলা থাকত না। বিভিন্ন ঘটনার ওপর ঘোষণামূলক মামলা করা যায়।

ফাতেমা ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করে। সে মাঝেমধ্যে বাড়ি আসে। পাশের বাড়ির ছেলে আসাদ তাকে পছন্দ করে, বিয়েও করতে চায়। ছেলের বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো কিন্তু ফাতেমারা খুব গরিব। ছেলের বাবা প্রভাবশালী, ফাতেমাকে পছন্দ করে না। এলাকার মাওলানাকে দিয়ে ফতোয়া দিয়ে দিল ফাতেমা খারাপ মেয়ে মানুষ। সে ঢাকায় গিয়ে খারাপ কাজ করে। সে আর গ্রামে আসতে পারবে না। ফাতেমা গ্রামে আসতে পারবে এই মর্মে ঘোষণামূলক ডিক্রি পেতে পারে।

নমিনির অনুপস্থিতে মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা কে পাবে?

আগা খান খোকসা পাইলট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, স্কুলের অন্য সদস্যরা তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগা খান ঘোষণামূলক মামলা করতে পারে। আদালত ঘোষণা দিতে পারে যে, আগা খান খোকসা পাইলট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বৈধ সদস্য।

মাওলানা সোবহান ওয়াক্‌ফ করা জামে মসজিদের মোতাওয়ালিস্ন। তাকে বাদ দিয়ে বেআইনিভাবে মাওলানা আশরাফকে মোতাওয়ালিস্নর কাজ করানো হচ্ছে। মাওলানা সোবহান ঘোষণামূলক মামলা করে আদালত থেকে ঘোষণা পেতে পারে যে, সে-ই প্রকৃত মোতাওয়ালিস্ন। এ রকম হাজারো অন্যায় কাজের প্রতিকার ঘোষণামূলক মোকদ্দমা করে আদালত থেকে পাওয়া যায়।

আমরা স্বত্বের মোকদ্দমা বা টাইটেল সু্যটের কথা প্রায় সবাই জানি। স্বত্বের মোকদ্দমাও এক ধরনের ঘোষণামূলক মামলা। স্বত্ব নিয়ে গোলমাল থাকলে স্বত্বের মোকদ্দমা করতে হয়। আদালত বাদী বা বিবাদীর পক্ষে স্বত্বের ঘোষণা দিয়ে স্বত্বের মোকদ্দমার নিষ্পত্তি করতে পারে।

জমিতে যার স্বত্ব আছে সে বিনা বাধায় তার জমি ভোগ-দখল করার অধিকারী। আবার যার আইনগত অধিকার আছে, যেমন লিজ নিয়েছে সেও বিনা বাধায় ভোগ-দখল করার অধিকারী। সে অধিকারে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। বাধা সৃষ্টি করলে আদালতে মামলা করে অধিকার সম্পর্কে ঘোষণা পাওয়া যায়। এই জাতীয় মামলাকে ঘোষণামূলক মামলা বলে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারামতে এ মোকদ্দমা করতে হয়।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ঊসধরষ:ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স