শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন লাভে বিবেচ্য বিষয়

দেশের কারাগারগুলোয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি আটক আছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামির পাশাপাশি বেশির ভাগই আছেন বিচারাধীন মামলার আসামি হিসাবে। জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্তদের জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী
নতুনধারা
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন প্রদান করা হচ্ছে আদালতের এখতিয়ার। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত স্বাধীন হলেও জুডিশিয়াল মাইন্ড তথা সূ² বিচার-বিবেচনার ওপর নিভর্র করতে হয়।

সাধারণত আমাদের দেশের আদালতগুলোয় জামিন অযোগ্য মামলায় অভিযুক্ত বা অপরাধীকে বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করে জামিনের আদেশ দিয়ে থাকে। অভিযুক্ত বা আসামির বিরুদ্ধে, আনীত অভিযোগের গুরুত্ব কতটুকু বা যুক্তিসঙ্গত কিনা। এজাহার নামীয় নাকি সন্ধিগ্ন। স্থায়ী ঠিকানা ও পরিচিতি আছে কিনা। ১৬ বছরের কমবয়স্ক কিনা। স্ত্রীলোক কিনা। অসুস্থ বা অক্ষম কিনা তথা শিশু, বৃদ্ধ, নারী কিংবা হীনবল কিনা। ফৌজদারি কাযির্বধির ১৬৪ ধারায় নিজেকে জড়িয়ে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কিনা। দুগ্ধপোষ্য শিশুসন্তান আছে কিনা। দাগি, দুধর্ষর্ বা অভ্যাসগত অপরাধী কিনা। দুনার্মবিহীন কিনা। ডাক্তারি সনদমতে আসামি রোগাক্রান্ত বা জখমপ্রাপ্ত কিনা। ছাত্র বা পরীক্ষাথীর্ কিনা। আসামি শনাক্তকরণ মহড়ায় সাক্ষী আসামিকে শনাক্ত করেছে কিনা। বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা বা পূবর্শত্রæতা আছে কিনা। আসামি দীঘির্দন হাজতে আছে কিংবা আসামি জেলহাজতে থাকায় তার পরিবারের লোকজন অথার্ভাবে বা অনাহারে আছে কিনা। আসামিকে জামিন দিলে মামলার তদন্তে কোনোরকম বিঘœ সৃষ্টি করবে কিনা বা মামলার আলামত- সাক্ষ্য নষ্ট বা মামলা পরিচালনায় অন্য কোনো সমস্যা করবে কিনা। আসামি জামিন পেলে পলাতক হবে কিনা। আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমপর্ণকারী বা পুলিশ কতৃর্ক গ্রেপ্তারকৃত কিনা। মামলার সহযোগী আসামি জামিনে আছে কিনা। মামলায় আপস-মীমাংসার সম্ভাবনা আছে কিনা। আসামি কোনো দায়িত্বশীল পদে বা চাকরিতে আছে কিনা। মামলার তদন্তে (১৮০ দিনেরও) বেশি দেরি হচ্ছে কিনা। বিচারে (৩৬০ দিনেরও বেশি) দেরি হচ্ছে কিনা। প্রথমবারের অপরাধ করেছে কিনা। অপরাধ প্রমাণিত হলে যে শাস্তি বা কারাদÐ হতো তার চেয়ে বেশি সময় জেলহাজতে আছে কিনা। আসামির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কাযির্বধির ১৬১ ধারা মতে পুলিশি তদন্তে কেউ সাক্ষ্য দিয়েছে কিনা। আসামির কাছ থেকে কোনো অবৈধ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে কিনা। জামিন পেলে আসামি সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাবে কিনা। জামিন না পেলে আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে কিনা।

জামিন শুনানিতে পক্ষদ্বয়ের বিজ্ঞ কৌশলীর উত্থাপিত যুক্তিতকর্ও জামিনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। উল্লিখিত বিষয়গুলো বললেই যে জামিন পাওয়া যাবে বা আদালত জামিন দিতে বাধ্য তা কিন্তু নয়। জামিন-অযোগ্য মামলায় অভিযুক্ত বা আসামির জামিন আদালতের সন্তুষ্টির উপর নিভর্র করে।

কোথায় জামিন আবেদন করতে হয়?

জামিন পেতে হলে প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হতে হয়। সেখানে জামিন আবেদন করতে হয়। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করতে হয়। সেখানেও জামিন নামঞ্জুর হলে সুপ্রিম কোটের্র হাইকোটর্ বিভাগে জামিন আবেদন করতে হয়। হাইকোটর্ বিভাগে জামিন নামঞ্জুর হলে সবের্শষ ভরসা আপিল বিভাগে জামিন চাইতে হবে। এর প্রতিটি ধাপের যে কোনো একটি আদালতে জামিনের আদেশ হলে অভিযুক্ত বা আসামি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন। যদি না এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ বা বিরোধী পক্ষ আপিল করে। কোনো অফিসার বা আদালত কোনো ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিলে তার সেই আদেশের কারণ লিপিবদ্ধ করতে হয়।

আগাম জামিন

ফৌজদারি কাযির্বধির অধীনে আগাম জামিন বা গ্রেপ্তারের পূবর্বতীর্ জামিন নামে আরেক ধরনের জামিনের ব্যবস্থা আছে। যখন গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনায় বা গ্রেপ্তার হওয়ার অনুমানে কোনো ব্যক্তিকে জামিন প্রদান করা হয়, তখন তাকে আগাম জামিন বলে। জামিনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবে আগাম জামিন দেয়া হয়। যখন কোনো ব্যক্তির কাছে বিশ্বাস করার এমন কারণ থাকে যে, তিনি কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোটর্ বিভাগে বা দায়রা আদালতে নিদেের্শর জন্য আবেদন করলে আদালত যথাথর্ মনে করলে ওই ব্যক্তিকে আগাম জামিন প্রদান করতে পারেন।

আগাম জামিন অনুমোদন করার জন্য আইনের বিধানে কোনো নিদির্ষ্ট ধারা নেই। ফৌজদারি কাযির্বধির ৪৯৮ ধারাকে ব্যাখ্যা করে পরে আগাম জামিন দেয়া অব্যাহত রাখেন আদালত। তাই আগাম জামিনের জন্য ফৌজদারি কাযির্বধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হয়। আগাম জামিন পেতে আবেদনকারীকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি আশু গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন। তাকে দেখাতে হয় যে, গ্রেপ্তারের ফলে তার সুনাম এবং স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তবে আসামি যেন দেশত্যাগ করতে না পারে এবং আদালতের নিদের্শমাত্র হাজির হতে পারে, আগাম জামিন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আদালত সেদিকে সতকর্ থাকে।

উল্লেখ্য, মামলায় জামিন পেলেও আদালত যে কোনো সময় জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তির জামিন বাতিলের আদেশ দিতে পারেন।

লেখক : আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোটর্

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<35267 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1