বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনে অপরাধ ও সাজা

অহেতুক নিষ্ঠুরতা থেকে জীবজন্তুদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য আমাদের একটি সুন্দর আইনও রয়েছে, যেটি প্রণীত হয়েছে ১৯২০ সালে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা গা-সওয়া হয়ে যাওয়ায় জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনের প্রয়োগ দীঘর্ একশ বছরেও হয়ে ওঠেনি। ১৯২০ সালের এ আইনে ‘জীবজন্তু’ বলতে যে কোনো গৃহপালিত বা ধৃত জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। আইনটির ৪ থেকে ১২ক ধারায় বেশ কিছু অপরাধের সংজ্ঞা এবং তার সাজার বিধান বলা হয়েছে। লিখেছেন সরকার মারুফ
নতুনধারা
  ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জীবজন্তুর প্রতি যে কোনো রকমের নিষ্ঠুর আচরণ এবং নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা জন্তু বিক্রি করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে আইনটির ৪ ধারায়। নিষ্ঠুরতার বেশকিছু উপায়কে এখানে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: কোনো জন্তুকে অতিরিক্ত পরিমাণ হঁাটানো, নিদর্য় ও অপ্রয়োজনীয় মারধর কিংবা অন্য কোনোভাবে বাজে ব্যবহার করা নিষ্ঠুরতার অন্তভুর্ক্ত। আবার জীবজন্তুকে অপ্রয়োজনীয় কষ্ট ও দুভোের্গর মুখে ঠেলে দিয়ে বঁাধা, আটক রাখা কিংবা বহন করাও নিষ্ঠুরতা।

কোনো জন্তুকে অঙ্গহানি করে, অনাহারে-তৃষ্ণায় রেখে বিক্রি করা বা বিক্রির জন্য মজুদ রাখাও এই ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তির অধীনে যদি কোনো মৃত জীবজন্তু পাওয়া যায় যার মৃত্যু ঘটেছে নিষ্ঠুরতার কারণে সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকেও এই ধারার অধীনে শাস্তি পেতে হবে। ৪ ধারার অধীনে নিষ্ঠুরতার সাজা তিন মাসের কারাদÐ বা একশ টাকা বা উভয়দÐ।

গাদাগাদি করে জীবজন্তু রাখা : কোনো স্থানে জীবজন্তুকে অতিরিক্ত পরিমাণে রেখে তাদের কষ্ট দিলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের দেশে বিভিন্ন পশুর খামারে, কোরবানির হাটে কিংবা কোরবানির সময় ট্রাকে বোঝাই করে আনার সময় পশুকে এভাবে কষ্ট দিতে দেখা যায়। এভাবে পশুকে শাস্তি দেয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে (পশুর মালিক, দখলদার, ঠিকাদার) এ আইনের ৫ ধারা অধীনে তিন মাসের কারাদÐ বা একশ টাকা বা উভয়দÐ দেয়া হতে পারে।

অপ্রয়োজনীয় নিষ্ঠুরতায় জন্তু হত্যা : অপ্রয়োজনীয় নিষ্ঠুর উপায় অবলম্বন করে জন্তু হত্যা করা এই আইনের ৭ ধারার অধীনে ছয় মাসের কারাদÐ বা দুইশ টাকা অথর্দÐ বা উভয় দÐে দÐযোগ্য অপরাধ। তবে কোনো ধমীর্য় বা জাতিগত সং¯ৃ‹তি মেনে কোনো জন্তু হত্যা কিংবা সদুদ্দেশ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনার উদ্দেশ্যে জন্তু হত্যা কিংবা ওষুধ বানানোর প্রয়োজনে কোনো জন্তুকে বিশেষ উপায়ে হত্যা করা হলে সেটি এই ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য হবে না।

নিদর্য়ভাবে হত্যাকৃত ছাগলের চামড়া রাখা : কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো ছাগলের চামড়া পাওয়া গেলে যদি যৌক্তিকভাবে বিশ্বাস করা যায় যে ওই ছাগলটিকে নিদর্য়ভাবে অপ্রয়োজনীয় উপায় অবলম্বন করে হত্যা করা হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে ৮ ধারা মোতাবেক তিন মাসের কারাদÐ দেয়া যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চামড়া বাজেয়াপ্ত করা হবে। চামড়াটি জন্তুর মাথার সঙ্গে লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ৯ ধারা অনুসারে আইন ধরে নেবে যে জন্তুটিকে নিদর্য়ভাবেই হত্যা করা হয়েছে।

অসমথর্ জন্তুকে দিয়ে শ্রম নেয়া : দুবর্ল, রোগাক্রান্ত, আঘাতপ্রাপ্ত কিংবা অন্য কোনোভাবে অসমথর্ কোনো জন্তুকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের কোনো কাজ (যেমন গাড়ি টানা, লাঙল টানা) করানো হলেও ১০ ধারা মতে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

জন্তুর লড়াই বঁাধানো : কোনো ব্যক্তি যদি কোনো জীবজন্তুকে কোনো লড়াইয়ে লাগিয়ে দেয় কিংবা এই কাজে প্ররোচণা কিংবা সহায়তা দেয়, সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১১ ধারায় এ ধরনের অপরাধের সাজায় ৫০ টাকা অথর্দÐের কথা বলা হয়েছে।

রোগাক্রান্ত জন্তুকে হেফাজতে রাখতে ব্যথর্ হওয়া : সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত কোনো জন্তু যদি জনগণের যাতায়াত কিংবা বসবাসের কোনো জায়গায় এসে মারা যায়, তবে তার জন্য ওই জন্তুর মালিক বা দখলদারকে ১০০ টাকা অথর্দÐ গুনতে হবে।

যেহেতু বাংলাদেশে আইনটির কোনো প্রয়োগই ছিল না এতদিন পযর্ন্ত, সে কারণে শত বছর ধরে আইনটিতে কোনো যুগোপযোগিতা আনা হয়নি। সে কারণে অপরাধের অথর্দÐে ১০০ টাকা কিংবা ৫০ টাকার মতো সংখ্যা রয়ে গেছে। জীবজন্তুর অধিকার সুরক্ষায় আইন আদালত যেহেতু সজাগ হয়েছে, আশা করা যায় আইনটিকে আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়া হবে সত্বর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32115 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1