শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ভারত

তিন তালাক আইনের ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকারে

নতুনধারা
  ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মুসলিম দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদে ‘তিন তালাক’ প্রথাকে ‘স্বেচ্ছাচার’ আখ্যা দিয়েছিল ভারতের সবোর্চ্চ আদালত। সরকারকে উপযুক্ত আইন প্রণয়নের উপদেশ দিয়েছিলেন বিচারপতিরা। গত এক বছরে দু-বার তিন তালাকবিরোধী আইনের খসড়া পেশ হয়েছে সংসদে। প্রতিবার আটকে পড়েছে। প্রস্তাবিত আইনটির ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে।

নিবাির্চত পঞ্চায়েত সদস্যা, সমাজসেবী সরমিনা বেগম বলছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যে বিল এনেছে তা ইসলামবিরোধী। মুসলিম দম্পতির একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়া না হলে তারা আলাদা থাকতেই পারেন, তাদের বোঝাপড়ার জন্য সময় দেয়া হয়। মুসলিম আইনে একসঙ্গে তিনবার তালাক দেয়া যায় না। তিনবার তালাক দেয়ার মধ্যে নিদির্ষ্ট ব্যবধানের উল্লেখ আছে। বিষয়টি মুসলমানদের নিজস্ব। এখানে সরকার অথবা অন্য কারও নাক গলানো অনুচিত। তা ছাড়া স্বামীকে যদি জেলে পাঠানো হয়, তাহলে স্ত্রীর কী হবে? খোরপোষ কে কীভাবে দেবে? ভারতে মুসলিম মহিলাদের ৭০ শতাংশই সামাজিকভাবে সচেতন নন। প্রকৃত সমাধান করতে হলে তাদের সচেতন করতে হবে। আইন করে নয়।’

কংগ্রেস ও তৃণমূলসহ সবকটি বিরোধী দলের প্রবল আপত্তি সত্তে¡ও গত ২৭ ডিসেম্বর লোকসভায় পাস হয়েছে তিন তালাক বিল, যার আইনি নাম ‘দ্য মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অফ রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৮’। এর আগে একই বিল লোকসভায় পাস করে একইভাবে রাজ্যসভায় পেশ করে বিফল হয়েছে সরকার। রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, বিরোধীরা শক্তিশালী। তার ওপর তিন তালাক বিলের বিরোধিতায় বিরোধীদের পাশে দঁাড়িয়েছে এআইএডিএমকে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটাভুটির মাধ্যমে তিন তালাক বিল পাস করানো অসম্ভব। আবার বিরোধীদের দাবি মেনে সরকার যদি বিলটিকে যৌথ সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠায়, তাহলে মোদি সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কমিটির সুপারিশ পেশ ও বিল পাস প্রায় অসম্ভব হবে। তাই বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। স্বভাবতই বেকায়দায় মোদি সরকার।

মূলত সংসদীয় কমিটির পরামশের্ক দূরে সরিয়ে রেখে বিল পাসের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপিবিরোধী দলগুলো। তা ছাড়া প্রস্তাবিত আইনে মুসলিম স্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি শাস্তির ব্যবস্থা (তিন বছর পযর্ন্ত কারাদÐ) চাইছে না তারা। প্রস্তাবিত আইনটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ বলেও মনে করছে কয়েকটি দল। এ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে আগেভাগে বৈঠক করে বিলটিকে ঠেকানোর রণকৌশল ঠিক করে নিয়েছিলেন কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআই, সপা, বসপা, আরজেডি, টিডিপি, ডিএমকেসহ অন্যান্য দলের নেতারা। অধিবেশন শুরু হতেই বিরোধীদের হইচইয়ের জেরে দফায় দফায় অধিবেশন মূলতবি হয়েছে।

উল্লেখ্য, নতুন বিলে তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সবোর্চ্চ তিন বছরের কারাদÐ এবং জরিমানার সংস্থান রয়েছে। পাশাপাশি ওই সময়ে স্ত্রীর খোরপোষের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, স্বামীর কারাদÐ হলে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন কে? সবমিলিয়ে তিন তালাক বিল আইনে রূপান্তর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। এমন ভাবনার পেছনে যুক্তি হলো, সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনই নরেন্দ্র মোদি সরকারের শেষ অধিবেশন। এরমধ্যে বিল পাস না হলে সেটি পাস করাতে পারবে আগামী সাধারণ নিবার্চনের পর গঠিত নতুন সরকার। আপাতত জলে তিন তালাক বিল।

ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31039 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1