শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুকবিরোধী আইনে নতুনত্ব

সামাজিক ব্যাধি যৌতুকসংক্রান্ত নতুন আইনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এতদিন ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের মাধ্যমে যৌতুকের মামলা ও বিচার চলছিল। আইনটিকে হালনাগাদ করে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নতুনভাবে প্রণয়ন সমীচীন ও প্রয়োজন মনে করে সরকার। এ কারণে সংসদে পাস হয়েছে ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮’। যা অবিলম্বে কাযর্কর হবে মমের্ বলা হয়েছে। নতুন এই আইনে পূবের্র আইনের ধারাগুলো মোটামুটি একই রকম থাকলেও বেশ কিছু তাৎপযর্পূণর্ পরিবতর্ন আনা হয়েছে।
মো. রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী
  ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সামাজিক ব্যাধি যৌতুকসংক্রান্ত নতুন আইনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এতদিন ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের মাধ্যমে যৌতুকের মামলা ও বিচার চলছিল। আইনটিকে হালনাগাদ করে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নতুনভাবে প্রণয়ন সমীচীন ও প্রয়োজন মনে করে সরকার। এ কারণে সংসদে পাস হয়েছে ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮’। যা অবিলম্বে কাযর্কর হবে মমের্ বলা হয়েছে। নতুন এই আইনে পূবের্র আইনের ধারাগুলো মোটামুটি একই রকম থাকলেও বেশ কিছু তাৎপযর্পূণর্ পরিবতর্ন আনা হয়েছে। লিখেছেন মো. রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী

বাংলা ভাষায় আইন

আগের আইনটি ছিল ইংরেজি ভাষায়। আর বতর্মান আইনটি করা হয়েছে বাংলায়। সাধারণ মানুষের বোধগম্য করার জন্য আইনের ভাষা বাংলা হওয়া জরুরি। সেটাই করা হয়েছে এই আইনে। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে সবর্স্তরে বাংলা প্রচলন আইন পাস হওয়ার পর থেকে আইনগুলো বাংলা ভাষায় প্রণীত হচ্ছে।

যৌতুকের সংজ্ঞায় পরিবতর্ন

আগের আইনে যৌতুকের সংজ্ঞায় এমন কিছু ছিল, যা নানা রকম প্রায়োগিক সমস্যা তৈরি করছিল। যেমন: ১৯৮০ সালের আইনে যৌতুক বলতে বিয়ের যে কোনো পক্ষ কতৃর্ক অন্যপক্ষকে প্রদত্ত যে কোনো মূল্যবান জিনিসকেই ‘যৌতুক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। বতর্মান আইনে যৌতুকের সংজ্ঞাকে স্পষ্টতর করা হয়েছে দুটি বিষয় যোগ করে। বলা হয়েছে : যৌতুক এমন পণ, যেটি এক পক্ষ আরেক পক্ষকে প্রদান করবে বৈবাহিক সম্পকর্ স্থাপনের পূবর্শতর্ হিসেবে কিংবা বিয়ে অব্যাহত রাখার শতের্।

আগের আইনে যৌতুকের সংজ্ঞায় আরেকটি বিধান ছিল, যা বতর্মান প্রেক্ষিতে হাস্যকর হিসেবে মনে হতে পারে। সেটি হলো : বিয়ের সময় বিয়ের পক্ষগণের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাক্সক্ষী কতৃর্ক প্রদত্ত উপহার ৫০ টাকার বেশি হলে সেটিকে আগের আইনে যৌতুক বলে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বতর্মান আইনে এই বিধান তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রদত্ত উল্লিখিত ধরনের উপহারগুলো যত বেশি টাকারই হোক না কেন, তা এখন আর যৌতুকের আওতায় আসছে না।

মিথ্যা মামলায় জেল-জরিমানা

সবচেয়ে বড় পরিবতর্ন আনা হয়েছে মিথ্যা-ভিত্তিহীন অভিযোগে মামলার সাজার বিধান এনে। যৌতুক নিয়ে আমাদের দেশে প্রায়ই মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা করা হয়ে থাকে। এ ধরনের মিথ্যা মামলার জন্য আইনে এতদিন পযর্ন্ত কোনো জেল বা জরিমানার বিধান ছিল না। নতুন আইনে যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে সবোর্চ্চ ৫ বছরের কারাদÐ অথবা সবোর্চ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছেÑ কেউ যদি যৌতুকসংক্রান্ত মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, তিনি সবির্ন¤œ এক বছর এবং সবোর্চ্চ পঁাচ বছর পযর্ন্ত কারাদÐ বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দÐে দÐিত হবেন।

জরিমানা নিধার্রণ

আরেকটি গুরুত্বপূণর্ পরিবতর্নটি হচ্ছে, আগের আইনে যৌতুকের শাস্তি হিসেবে জরিমানার বিধান থাকলেও তার পরিমাণ উল্লেখ ছিল না। নতুন আইনে সেখানে পরিমাণ নিধার্রণ করে দেয়া হয়েছে। এই আইনে ৫০ হাজার টাকা পযর্ন্ত জরিমানার বিধান নিধার্রণ করা হয়েছে। নতুন আইনে কারাদÐ ঠিক রাখা হয়েছে। শুধু জরিমানা নিদির্ষ্ট করা হয়েছে। সুতরাং এখন যৌতুক দেয়া-নেয়ার সাজা হলো সবির্ন¤œ এক বছর এবং সবোর্চ্চ পঁাচ বছর পযর্ন্ত কারাদÐ বা ৫০ হাজার টাকা পযর্ন্ত জরিমানা বা উভয় দÐ।

যৌতুক দাবির শাস্তি

আগের আইনটির ৪ ধারায় যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হতো। এখন নতুন এই আইনের ৩ ধারায় যৌতুকের মামলা দায়ের করতে হবে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যৌতুক দাবি করলে তিনি এক থেকে পঁাচ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা পযর্ন্ত জরিমানা বা উভয় দÐে দÐিত হবেন।

যৌতুক দেয়া বা নেয়ার শাস্তি

পূবের্র আইনটির ৩ ধারার স্থানে নতুন আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যৌতুক গ্রহণ করলে এবং প্রদান করলে উভয়েই দÐিত হবেন। তারা সবোর্চ্চ ৫ বছরের জেল, সবির্ন¤œ ১ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দÐে দÐিত হবেন।

যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০ বাতিল

এ ছাড়া নতুন আইনে ১০ ধারায় বলা হয়েছে, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ কাযর্কর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূবের্র ‘দ্য ডাউরি প্রহিবিশন অ্যাক্ট ১৯৮০’ রহিত হবে এবং ওই আইনের অধীনে অথার্ৎ আগের যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০-এর অধীন দায়েরকৃত কোনো মামলা বিচারধীন থাকলে বা কোনো মামলা তদন্তধীন থাকলে বা চলমান থাকলে সে সব অব্যাহত থাকবে অথার্ৎ সে সব ক্ষেত্রে পূবের্র আইন রহিত হয়নি বলে ধরা হবে।

সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে এবং অপরাধ দমনে আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আইন করার পাশাপাশি আইনের প্রয়োগটা নিশ্চিত করাও অধিক গুরুত্বপূণর্। প্রয়োগ না থাকলে সমাজে আইনের তেমন প্রভাব বিস্তার ঘটে না। আবার আইন করলেই যে সমাজে অপরাধ কমে যাবে তেমনটি বলা যায় না। এর জন্য আইন সম্পকের্ দেশের মানুষের শ্রদ্ধাবোধ থাকা চাই। আইনকে গ্রাহ্য করে চলার মধ্যেই এই সংস্কৃতি তৈরি হয়। ইতিপূবের্ সংসারজীবনে কোনো অশান্তি বা সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে বা স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হলেই যৌতুক আইনে প্রচুর মিথ্যা মামলা করা হতো। আশা করা যায় এ আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হলে যৌতুকসংক্রান্ত মিথ্যা মামলার প্রবণতা কমবে।

লেখক : শিক্ষানবিশ আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোটর্; ষষ.নৎধরযধহ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<26451 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1