শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগাম জামিন কখন, কোথায় ও কীভাবে?

ফৌজদারি কাযির্বধিতে দুধরনের জামিনের চচার্ আছে, সাধারণ জামিন ও আগাম জামিন। সাধারণ জামিন আসামির আটকের পর আর আগাম জামিন আসামির গ্রেপ্তারের আগে আদালত মঞ্জুর করে থাকে। আগাম জামিন নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন আবরার মাসুদ
নতুনধারা
  ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আগাম জামিন কী

গ্রেপ্তারের পূবের্ উদ্ভ‚ত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালত আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের সামনে সময় সময় হাজির হবার শতের্ যে জামিন মঞ্জুর করে থাকেন তাকেই আগাম জামিন বলা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি কাযির্বধি ১৮৯৮-এ আগাম জামিন স¤পকের্ সুস্পষ্ট বিধান নেই। কিন্তু ৪৯৮ ধারায় উল্লিখিত ‘হাইকোটর্ বিভাগ ও দায়রা আদালত যে কোনো ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুরের নিদের্শ দিতে পারেন’ শব্দগুলোর স¤প্রসারিত অথর্ দ্বারা আসামিকে ক্ষেত্রবিশেষে জামিন প্রদান করে থাকেন।

কখন আগাম জামিনের আবেদন করতে হয়?

যখন কোনো ব্যক্তির এরকম আশঙ্কা থাকে যে, কোন অজামিনযোগ্য মামলায় জড়িত থাকার থাকার অভিযোগে ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কিছু বিষয় বিবেচনায় তার আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। উল্লেখ্য, আদালত কোনো ব্যক্তির পক্ষে আগাম জামিন মামলার তদন্ত পযার্য় থেকে শুরু করে মামলার চাজির্শট দেয়ার পরেও অনুমোদন করতে পারেন। তবে আসামি একবার গ্রেপ্তার হলে তখন আর আগাম জামিন মঞ্জুর করা যায় না; তখন তাকে নিয়মিত জামিনের জন্য দরখাস্ত করতে হয়।

আগাম জামিন মঞ্জুরে আদালত যা বিবেচনা করে

সাধারণত জামিন-অযোগ্য মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি প্রসঙ্গে আদালত যে সকল বিষয় বিবেচনা করে, আগাম জামিনের ক্ষেত্রেও আদালত একই বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন। [১৯ ডিএলআর ৩৯ (সুপ্রিম কোটর্)] আগাম জামিনের বিষয়টি সাধারণ জামিনের বিষয় থেকে একটু হলেও ভিন্ন এবং আগাম জামিনের আবেদন বিবেচনাকালে আদালত নি¤œলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারে: (১) উত্থাপিত আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং তকির্ত অভিযোগের নিবিড় বিবেচনায় আদালতের কাছে যদি এটি প্রতীয়মান হয় যে, আসামিকে ওই মামলায় কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে এবং ওই মামলায় গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে অথবা আসামিকে উক্ত মামলার মাধ্যমে ক্ষতির মুখোমুখি করাই একমাত্র উদ্দেশ্য তাহলে আদালত তাকে গ্রেপ্তারের পূবের্ই নিজ বিবেচনায় জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। (২) আদালত আগাম জামিনের ক্ষেত্রে একটা অস্পষ্ট ও অনিদির্ষ্ট মঞ্জুরনামা জারি করবে না। আদালত এক্ষেত্রে সুনিদির্ষ্ট অপরাধ ও অভিযোগ ও তৎপ্রসঙ্গে আবেদননামা বিবেচনা করত কেবল তার ভিত্তিতেই জামিন মঞ্জুর করবে। (৩) আগাম জামিন মঞ্জুরের আগে আদালত এটিই বিবেচনায় রাখবে যে, উক্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্য উদঘাটনের জন্য আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেবার প্রয়োজন রয়েছে কি না। যদি এরকমটি প্রয়োজন বিবেচিত হয় তাহলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করতে পারে। (৪) আদালতের আগাম জামিনের ক্ষমতা বিশেষ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্যবহার করা উচিত। যদি আদালত এটি উপলব্ধি করে যে, আসামি তার জামিনের সুযোগের অপব্যবহার করবেন না বা মামলা প্রভাবিত করবেন না সে ক্ষেত্রে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারে। (৫) আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আসামিকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। আগাম জামিনের আবেদন সাধারণত তাদের ক্ষেত্রে না-মঞ্জুর করা হয় যারা তদন্তকারী সংস্থাকে সহায়তা করেন না বা করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ, অথবা যাদেরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন অথবা যারা জামিনে মুক্ত থেকে মামলা প্রভাবিত করতে পারেন। (৬) কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের আমল গ্রহণ করার পর এমনকি চাজির্শট দেয়ার পরও আগাম জামিন মঞ্জুর করা যায় বলে ভারতীয় রায়ে বলা হয়েছে। (৭) এজাহার দায়ের করা আগাম জামিনের পূবর্শতর্ নয়। মামলায় চাজির্শট প্রদান করা হয়েছে বা আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে- শুধু এই কারণেই আসামির আগাম জামিনের অধিকার খবর্ করা হয়েছে বলা যাবে না।

আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালত প্রধানত নি¤œলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে থাকে: (১) অভিযোগের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা; (২) আবেদনকারীর পূবর্পরিচয় সেই সঙ্গে আবেদনকারী পূবের্ কখনও আমলযোগ্য অপরাধে দÐিত হয়েছিল কি না সে¤পকের্ তথ্যাদি; (৩) জামিন পেলে আসামির পলায়নের কোনো সুযোগ ও সন্দেহ আছে কি না; (৪) আসামির গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাকে সমাজের চোখে হেয় করা হবে- এমন উদ্দেশ্য নিয়ে উক্ত মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে কিনা এ মমের্ অভিমত।

যেক্ষেত্রে আসামির আগাম জামিনের দরখাস্ত না-মঞ্জুর হয় সেক্ষত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কতার্ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ভারতীয় অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, আগাম জামিন মঞ্জুরকালে হাইকোটর্ বা দায়রা আদালত আসামির জামিনে মুক্তির পেছনে যে কোনো যুক্তিসঙ্গত শতর্ আরোপ করতে পারে যেমন- মামলা স¤পকির্ত তদন্ত বিষয়ে আসামি পুলিশকে তার উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ সহ অন্যভাবে সহায়তা করবে; আসামি জামিনে মুক্তির পর মামলার ঘটনার সঙ্গে পরিচিত এমন কোন ব্যক্তিকে প্ররোচনা, ভয়ভীতি প্রদান বা অন্য কোনোভাবে মামলা প্রভাবিত করবে না বা করার চেষ্টা করবে না; জামিনে মুক্তির পর আসামি আদালতের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশের বাইরে যাবে না।

কে কোথায় আগাম জামিনের জন্য দরখাস্ত করতে পারেন?

যে ব্যক্তির এরকম কোনো আশঙ্কা থাকে যে কোন অ-জামিনযোগ্য মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে যার মাধ্যমে তাকে সামাজিক ভাবে হেয় করা হবে বা বিদ্বেষপূণর্ভাবে তাকে এমন ভাবে জড়ানো হবে বা হয়েছে যাতে তার সামাজিকভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়, সে ক্ষেত্রে উক্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোটের্ বা দায়রা আদালতে এসে জামিনের দরখাস্ত করতে পারেন। উল্লেখ্য, জামিনের দরখাস্ত শুনানির সময় তাকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত

থাকতে হয়। যেখানে তার গ্রেপ্তারের আশঙ্কা রয়েছে এমন যে কোনো দায়রা এখতিয়ারস¤পন্ন আদালতে উক্ত ব্যক্তি জামিনের দরখাস্ত করতে পারেন, যদিও উক্ত দায়রা এখতিয়ারস¤পন্ন আদালতের সীমার মধ্যে কথিত অপরাধটি সংঘটিত হয়নি। অথার্ৎ জামিনের দরখাস্ত দরখাস্তকারীর গ্রেপ্তারের আশঙ্কার ওপর নিভর্রশীল, এখতিয়ার প্রশ্নে অপরাধ অনুষ্ঠানের স্থানের ওপর নয়।

যে ক্ষেত্রে দায়রা আদালত কোনো আবেদনকারীর দরখাস্ত একবার খারিজ করে দিয়েছেন সেক্ষেত্রে একই ঘটনার ওপর হাইকোটর্ বিভাগে আগাম জামিনের দরখাস্ত হাজির করা যাবে না; তবে দায়রা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোটের্ রিভিশন চলবে।

যেহেতু দায়রা আদালত এবং হাইকোটর্- এই দুই আদালতকেই আগাম জামিন শুনানি ও আদেশ প্রদানের বিষয়ে সমগোত্রীয় এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে সুতরাং এটা প্রত্যাশিত যে, প্রথমে দায়রা আদালতের প্রতিকার আবেদনকারী জামিনের চেষ্টা করবেন এবং ব্যথর্ হলে পরে হাইকোটের্ যাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, আবেদনকারী প্রায়শই সরাসরি হাইকোটর্ বিভাগে আগাম জামিনের জন্য হাজির হন বিশেষকরে রাজনৈতিক মামলাগুলোতে আবেদনকারী হাইকোটর্ বিভাগে আসতে বেশি স্বাচ্ছন্দ করেন।

যে ক্ষেত্রে দায়রা আদালত কোনো আবেদনকারীর দরখাস্ত একবার খারিজ করে দিয়েছেন সেক্ষেত্রে একই ঘটনার ওপর হাইকোটর্ বিভাগে আগাম জামিনের দরখাস্ত হাজির করা যাবে না; তবে দায়রা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোটের্ রিভিশন চলবে। দায়রা আদালত কতৃর্ক মঞ্জুরকৃত জামিন আদেশ হাইকোটর্ বিভাগ বাতিল করতে পারেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটিও দেখা যায় যে, হাইকোটর্ বিভাগ আগাম জামিন মঞ্জুর না করে আসামিকে নি¤œ আদালতে আত্মসমপের্নর আদেশ দেন। এরকম আদেশ বৈধ। মামলার কোন পযাের্য় আগাম জামিন মঞ্জুর করা যায় এর কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। অপরাধ আমলে নেয়ার পর বা আসামির বিরুদ্ধে চাজির্শট দেয়ার পরও আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

এক অপরাধের জন্য আগাম জামিন পেলে আসামিকে অন্য অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা যাবে কি?

আগাম জামিনের আবেদন করা হয় সু-নিদির্ষ্ট কোনো মামলা বা ঘটনা থেকে উদ্ভ‚ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা থেকে। সুতরাং, আগাম জামিন কোনো এক বিশেষ ঘটনা বা মামলাকে সামনে রেখে আদালত কতৃর্ক মঞ্জুর হয়। সুতরাং, সু¯পষ্টভাবে আসামির যদি অন্য কোনো আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় যার জন্য তার জামিন মঞ্জুর করা হয়নি, এমন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করতে কোনো আইনি বাধা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21075 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1