শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের সমন পেলে কী করবেন?

আসামি এবং সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার জন্য আদালত থেকে যে আদেশনামা প্রেরণ করা হয় তাকে সমন বলে। যিনি সমন পান, তিনি আসামি কিংবা সাক্ষী যাই হোন না কেন, আদালতকে সহযোগিতা করার জন্য তাকে প্রস্তুতি নিতে হয়। সমন পেলে কী করণীয়, তা নিয়ে লিখেছেন আবরার মাসুদ
নতুনধারা
  ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সানোয়ার হোসেন ময়মনসিংহ শহরে কাপড়ের ব্যবসা করেন। ব্যবসায়ের সুবাদে বেশ কিছু পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে তিনি নিয়মিত লেনদেন করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই বাকিতে মালামাল এনে পাইকারি বিক্রেতাদের ধীরে ধীরে অথর্ পরিশোধ করেন তিনি। এরকম একজন পাইকারি বিক্রেতা বুলবুলের অথর্ পরিশোধে একবার তার একটু দেরি হয়ে যাচ্ছিল। একদিন সেই পাইকারি বিক্রেতা বুলবুল সাহেব সানোয়ারের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে এসে টাকার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলে সানোয়ার রাগের মাথায় তাকে একটি বø্যাংক চেক ধরিয়ে দেন এবং বলেন, যত টাকা তার প্রয়োজন তত টাকা যেন চেকে লিখে তা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন বুলবুল। চেক হাতে পেয়ে বুলবুল চুপচাপ প্রস্থান করেন। এরপর মাসখানেক এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য নেই। একদিন হঠাৎই তার হাতে আদালতের একটি সমন চলে আসে। ঢাকার একটি ফৌজদারি আদালতের সমন। সমনে তিনি দেখতে পান তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের করেছেন বুলবুল। জীবনে এই প্রথম মামলা-মোকদ্দমার কবলে পড়লেন সানোয়ার হোসেন। পরিচিত এক আইনের শিক্ষাথীর্র কাছে খেঁাজ নিয়ে জানলেন, চেক ডিজঅনারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার জেল-জরিমানা হতে পারে। প্রচÐ দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। সমন পাওয়ার পর তার কী করণীয়- সেটা নিয়ে তিনি দ্ব›েদ্ব পড়ে গেলেন। একেকজন তাকে একেক ধরনের কথা বলতে লাগল।

সমন কী?

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই সমন সম্পকের্ জানা প্রয়োজন। আসামি এবং সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার লক্ষ্যে আদালতের বিচারক কতৃর্ক স্বাক্ষর ও সিলমোহরযুক্ত যে আদেশনামা প্রদান করা হয় তাকে সমন বলে [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৬৮ ধারা, পিআরবি: ৪৭১(ঘ) নিয়ম]। সমন যেমন আসামির ওপর জারি করা হয় তেমনি সাক্ষীর ওপরও জারি করা হয়। ফৌজদারি কাযির্বধির ৬৮ ধারা অনুযায়ী সমন লিখিত ফরমে দেয়া হয়। ফরমের ওপরে ‘আসামির প্রতি সমন’ বা সাক্ষী হলে ‘সাক্ষীর প্রতি সমন’ লেখা থাকে। সমনের দুই কপি থাকে। স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে সমন জারি করা হয়। যাকে সমন দেয়া হয় তাকে এক কপি দেয়া হয়। অন্য কপিতে যার ওপর সমন জারি হলো তার স্বাক্ষর নেয়া হয়। সমন যথাসম্ভব ব্যক্তিগতভাবে জারি করতে হয়। তা সম্ভব না হলে ফৌজদারি কাযির্বধির ৭০ ধারায় বলা হয়েছে, যার ওপর সমন জারি করা হয় তাকে পাওয়া না গেলে তার পরিবারের বয়স্ক কোনো পুরুষের কাছে সমন বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হবে।

সমন জারির পদ্ধতি

(১) সমন যার ওপর জারি করা হবে তাকে সমনের এক কপি দিয়ে অন্য কপিতে প্রাপ্তি স্বীকারে স্বাক্ষর নিতে হবে [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৬৯(১) ধারা]; (২) যদি একাধিক ব্যক্তির ওপর সমন জারি করতে হয়, তাহলে প্রত্যেকের স্বাক্ষর অফিস কপিতে নিতে হবে। [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৬৯(২)ধারা]; (৩) যদি কোনো কোম্পানি বা কোনো প্রতিষ্ঠানে সমন জারি করার প্রয়োজন হয় তাহলে ওই কোম্পানির মালিক বা ম্যানেজারের কাছে সমনের এক কপি বুঝিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় কপিতে প্রাপ্তি স্বীকার নিতে হবে [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৬৯(৩)ধারা]; (৪) যে ব্যক্তির ওপর সমন জারি করা হবে তিনি যদি উপস্থিত না থাকেন তাহলে ওই ব্যক্তির বাড়ির যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ লোকের কাছে সমনের এক কপি বুঝিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারে স্বাক্ষর নিতে হবে [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৭০ ধারা; (৫) যদি উপরের বণর্না মোতাবেক সমন জারি না করা যায় তাহলে তার বাড়ির প্রকাশ্য স্থানে বা বসবাসের প্রকাশ্য স্থানে দুই বা তিনজন ব্যক্তির উপস্থিতিতে (যারা প্রতিবেশী) সাক্ষীস্বরূপ লটকিয়ে সমন জারি করতে হবে [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৭১ ধারা]; (৬) সমন যার ওপর জারি করা হবে সেই ব্যক্তি যদি সরকারি কমর্চারী হয় তাহলে তার অফিস প্রধানের কাছে সমনের দুই কপি প্রেরণ করতে হবে। যার ওপর সমন জারি করা হবে তাকে এক কপি দিয়ে দ্বিতীয় কপিতে প্রাপ্তি স্বীকার নিয়ে অফিস প্রধান সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাবেন [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৭২ ধারা, পিআরবি: ৪৭১(ঙ) বিধি]; (৭) যার ওপর সমন জারি হবে সেই ব্যক্তি যদি ওই আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে না থাকেন তাহলে যেই আদালতের সীমারেখায় ওই ব্যক্তি রয়েছেন সেই আদালতের কাছে প্রেরণ করে সমন জারির ব্যবস্থা নিতে হবে [ফৌজদারি কাযির্বধি: ৭৩, ৬৮, ৬৯(১), ৬৯(২), ৬৯(৩), ৭০, ৭১ , ৭২, ৭৩ ধারা, পিআরবি: ৪৭১(ঘ), ৪৭১(ঙ)বিধি]।

সমন জারি হলে কী করবেন?

আসামির প্রতি সমন হলে আসামিকে আদালতে ব্যক্তিগতভাবে বা উকিল মারফত আদালতে হাজির হতে হবে। কোনো সাক্ষী সমন পেলে তাকে অবশ্যই আদালতে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা বণর্না করে সাক্ষ্য দেয়া উচিত। সাক্ষীর প্রতি সমন জারি হলে সাক্ষীকে সমনটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের কোটর্ সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে হয়। কোটর্ সাব-ইন্সপেক্টর তার সাক্ষ্য দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

অন্যদিকে জজ বা দায়রা আদালতে বা কোনো বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে হলে সমন নিয়ে সাক্ষীকে সরকারি কেঁৗসুলি বা পিপি অফিসে হাজির হতে হয়। সেখানে কমর্রত কমর্কতার্ বা কমর্চারীরা সাক্ষীকে সংশ্লিষ্ট পিপির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করে সাক্ষ্য দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। একটা কথা মনে রাখা দরকার, সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতসংশ্লিষ্ট কাউকে টাকা-পয়সা বা ফি দেয়ার প্রয়োজন নেই।

আসামি বা সাক্ষী সমন পেয়ে আদালতে হাজির না হলে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা হয়। অথবা আসামি বা সাক্ষীর প্রতি হুলিয়া বা সম্পত্তি ক্রোক করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করবে। সে ক্ষেত্রে সাক্ষীকে আরও হয়রানি হতে হবে। তাই সাক্ষীর প্রতি সমন জারি হলে সাক্ষী আদালতে হাজির হয়ে প্রকৃত ঘটনা বণর্না করে সাক্ষ্য দেয়া উচিত।

সমন পেয়ে আদালতে হাজির না হলে

সমন পাওয়ার পর কেউ আদালতে হাজির না হলে তিনি দÐবিধির ১৭৪ ধারা অনুযায়ী দÐযোগ্য অপরাধী সাব্যস্ত হবেন। এ ক্ষেত্রে সমন অমান্য করার ব্যক্তির ছয় মাসের কারাদÐ বা এক হাজার টাকা অথর্দÐ বা উভয়দÐ হতে পারে।

সবারই উচিত আইন জানা। আমাদের সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইন জানা দরকার। বিচারক বা আইনজীবীদের মতো আইন জানার আবশ্যকতা না থাকলেও মৌলিক আইন জানাটা কিন্তু খুব জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18860 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1