শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
মানবাধিকার

যেখানে শিশুরা ভোগে প্রাপ্তবয়স্কের সাজা

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপের দিক থেকে শীষর্ দেশগুলোর মধ্যে একটি অস্ট্রেলিয়া। প্রতিবছর দেশটিতে হাজারও অভিবাসীকে মানব পাচারের অভিযোগে কারাবন্দি করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সে সব অভিবাসী কারাগারে গিয়ে দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশু-কিশোরদেরও আটকে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। আর এ বিষয়ে ওই শিশুদের স্বজনদেরও কিছু জানানো হয়নি।

মানবাধিকারকমীের্দর বিষয়টি চোখে পড়লে তারা আইনি লড়াইয়ে নামেন। আর তাতে বেরিয়ে আসে এমন কয়েকজনের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।

তেমন একজনের মা সিটি রুডি। থাকেন ইন্দোনেশিয়ার রট দ্বীপের ওয়েলাবা গ্রামে। যার অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার বেশ কাছাকাছি। তার ছেলে আবদুল একদিন কাজে বেরিয়ে নিখেঁাজ হন। সেটা ২০০৯ সালের কথা। নিখেঁাজ হওয়ার কয়েকমাস পযর্ন্ত সন্তানের কোনো খবর না পেয়ে সিটি রুডি ভেবেছিলেন তার ছেলে হয়তো সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে। তারপর একদিন হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনে তার ছেলে তাকে জানায় যে সে অস্ট্রেলিয়ায় আছে। সেখানকার কারাগারে। এতে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন আবদুলের মা। সে সময় ভালো বেতনের কারণে নৌকায় চাল আনা-নেয়ার কাজ নিয়েছিলেন আবদুল। এই চাল কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায়, তার কিছুই জানতেন না তিনি। এভাবে এক পযাের্য় অস্ট্রেলীয় কতৃর্পক্ষ তাকে সমুদ্র সীমার কাছ থেকে আটক করে এবং তাকে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। যারা কিনা আশ্রয় প্রত্যাশীদের সমুদ্র পথে অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসে।

সে সময় আবদুলের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ওই বয়সেই তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের আইন অনুযায়ী আদালত আবদুলকে দোষী সাব্যস্ত করে আড়াই বছরের কারাদÐ দিয়েছিল। কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা যেই কারাগারে সব প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সঙ্গে কিশোর আবদুলকে আড়াই বছর থাকতে হয়েছিল।

হাতেগোনা কয়েকটি দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত আইন বেশ কড়া হলেও ২০০৯ সালে প্রচলিত সীমান্ত নীতি অনুযায়ী যদি সমুদ্র সীমায় উদ্ধারকৃত কোনো আরোহী শিশু হয় তাহলে তাকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। কোনো অভিযোগ দায়ের করা যাবে না।

আবদুলের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন আইনজীবী। আবদুলকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে এখন তারাও একটি মামলা দায়ের করেছে যেন তারা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী, অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথ ও বয়স পরীক্ষার চিকিৎসকের থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে।

আবদুলের মতো আরও অনেক কারাবন্দি শিশু কারাগারে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন ওই আইনজীবীরা।

কলিন সিঙ্গার একজন স্বাধীন কারা পযের্বক্ষক। তিনি জানান কীভাবে অস্ট্রেলিয়ার পাথের্র একটি কারাগারে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা এক শিশুর দেখা পান। তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে দেখলাম। ছোট একটি শিশু কারাগারের শিক ধরে আছে। আলী জেসমিনের সঙ্গে সেটাই আমার প্রথম দেখা। আমি তাকে দেখে হাসিমুখে নাম জানতে চেয়েছিলাম। দেখেছি তার চোখজুড়ে অশ্রæ আর আতঙ্ক।’ বারবার দুই দেশের কতৃর্পক্ষে দরজায় কড়া নাড়লেও কোনো সাড়া মেলেনি।

পরে অনেক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ২০১২ সালে আলী জেসমিনকে কারাগারের বাইরে বের করে আনা হয়। সিঙ্গার অভিযোগ অস্ট্রেলিয়ার কতৃর্পক্ষ জেনে-বুঝে ইচ্ছা করে জেসমিনের মতো আরও অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস হতে চায় না যে একটা ১৩ বছর বয়সী শিশুকে প্রাপ্তবয়স্কদের কারাগারে রাখা হয়েছে। কয়েকদিন বা সপ্তাহের জন্য নয়, প্রায় তিন বছর ধরে। শুধু একজনের সঙ্গে নাÑ এমন বহু শিশুর সঙ্গে তারা এই কাজ করেছে।’

এই শিশুদের আইনের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে ইন্দোনেশীয় কতৃর্পক্ষের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারাবন্দিরা যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল সেটার তথ্য প্রমাণ কেন সংগ্রহ করে আইনি লড়াইয়ে যাওয়া হলো নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন ইন্দোনেশিয়ার কনসাল জেনারেল এবং বতর্মানে মরোক্কোর দূত দেদে সিয়ামসুরি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ছিল আমরা বয়স সংক্রান্ত কাগজপত্র অস্ট্রেলীয় কতৃর্পক্ষকে দিয়েছিলাম। কিন্তু দিন শেষে সবই নিধাির্রত হতো তাদের মেডিকেল রিপোটর্ অনুযায়ী। অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল রিপোটের্ সবাইকে প্রাপ্তবয়স্ক দাবি করা হয়েছে। আমাদেরও সেটা মেনে নিতে হয়েছিল।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<16470 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1