শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিচিত্র

নারী পাচার বন্ধে ‘কালো জাদু’!

নতুনধারা
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

২০১৬ সাল থেকে অবৈধভাবে ইটালিতে এসেছেন ১১ হাজারেরও বেশি নাইজেরিয়ান নারী। আর তাদের অধিকাংশেরই শেষ পরিণতি হয়েছে পতিতাপল্লী। নারী পাচার ঠেকাতে এবার দেশটি কাজে লাগাচ্ছে বø্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু। অথৈর্নতিকভাবে বেশ উন্নত হলেও নাইজেরিয়ার ইডো প্রদেশের বেনিনে কালো জাদুর ওপর মানুষের বিশ্বাস এখনো প্রবল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, কালো জাদুর অধীনে কোনো চুক্তি করে তা ভঙ্গ করলে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আর এই ভীতি কাজে লাগিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে নাইজেরিয়া থেকে ইউরোপে নারী পাচার করছেন ৪২ বছর বয়সী পেশেন্স। এ থেকে তার আয়ও ছিল বেশ। নারীরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য তিনি ব্যবহার করতেন তার কালো জাদু।

বেনিনে পেশেন্সের একটি সেলুন আছে। সেখানেই চুলের সাজসজ্জার আড়ালে দীঘির্দন নারী পাচারের কাজকমর্ চালিয়ে আসছেন পেশেন্স। উন্নত জীবনের লোভে ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে বেনিনের তরুণীরা ভিড় জমাতেন তার সেলুনে। ফলে এ খাত থেকে প্রতি মাসেই বেশ বড় অঙ্কের উপাজর্নও হতো পেশেন্সের।

ইউরোপে বসবাসকারী এজেন্টদের সহায়তায় নারীদের তুলে দেয়া হতো নৌকায়। তবে তার আগে পালন করা হতো এক বিশেষ ধরনের আচার। হাজার হাজার ডলার পরিশোধের চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করা হতো ইউরোপগামী নারীদের। সেই চুক্তি তারপর নিয়ে যাওয়া হতো আধ্যাত্মিক যাজকের কাছে। কালো জাদুর অংশ হিসেবে জ্যান্ত মুরগির যকৃত টেনে বের করে তাদের খেতে বাধ্য করা হতো। এরপর নারীদের চুল এবং কাপড়ের কিছু অংশ একটি মিশ্রণে মিশিয়ে বাধ্য করা হতো সেটা পান করতে। এভাবেই কালো জাদুর মাধ্যমে সেই চুক্তি সিলগালা করে দেয়া হতো।

স্থানীয়ভাবে ‘জুজু’ নামে পরিচিত এই কালো জাদুকে বেশ ভয় পান বেনিনের নারীরা। ফলে ইউরোপে এসে স্বপ্নভঙ্গের পর শত নিযার্তন সহ্য করলেও পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাবেন না তারা।

১৮ বছর বয়সে রাশিয়ায় পাচার হওয়া ফ্লোরেন্সের বয়স এখন ২৪। তিনি বলেন, ‘আমি একবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম। এরপরই আমার মুখে পচন ধরতে শুরু করে। আমাকে একাধিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কোনো চিকিৎসকই আমার রোগের কারণ বের করতে পারেননি।’ ফ্লোরেন্স জানান, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর আগ পযর্ন্ত তিনি প্রায় ৪৫ হাজার ডলার দিয়েছেন ইউরোপে তার এজেন্টের কাছে। এসব এজেন্টকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত নারীরা চেনেন ‘ম্যাডাম’ নামে। আবার টাকা দেয়া শুরু করার পর কোনো ওষুধ ছাড়াই তার মুখ ভালো হতে শুরু করে বলেও জানান ফ্লোরেন্স।

নাইজেরিয়ার সরকার কঠোর আইন করেও বন্ধ করতে পারছিল না কালো জাদু প্রয়োগে ভয় সৃষ্টির কমর্কাÐ। ফলে এবার সরকারও কঁাটা দিয়ে কঁাটা তুলতে কালো জাদু নিয়ে মাঠে নেমেছে। আর এই কাজে সরকার সঙ্গে পেয়েছে বেনিন অঞ্চলের সবোর্চ্চ আধ্যাত্মিক নেতা দ্বিতীয় ওবা এওয়ারেকে।

মাচের্ এক অনুষ্ঠানে ওবা ঘোষণা দেন, অবৈধ অভিবাসনে যারা কালো জাদু কাজে লাগাবে, তাদের ওপর পড়বে তার অভিশাপ। নাইজেরিয়ার সরকার বলছে, এই ঘোষণার পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে নারী পাচার। যারা এতদিন অন্যদের ওপর চাপিয়ে এসেছেন কালো জাদুর ভয়, তারাই এখন ভয়ে জড়োসড়ো।

পাচারকারী পেশেন্স বলছেন, ‘আমি নিজে তার মুখ থেকে এই ঘোষণা শুনিনি, কিন্তু রেডিও ও টেলিভিশনে শুনেছি। ওবা সব বন্ধ করে দিয়েছেন। এখনো বাইরে গেলেই মেয়েরা চারপাশে জড়ো হয়, তাদের ইউরোপ পাঠাতে হাতে-পায়ে ধরে। কিন্তু আমি রাজি হই না। আমি মরতে চাই না। সবাই এখন খুব ভয়ে ভয়ে আছে।’

ভয় পেয়ে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন খোদ কালো জাদুর পরিচালক আধ্যাত্মিক যাজকরাও। জুজু পরিচালনাকারী যাজক ডেভিড উবেবে বলেন, ‘এখন আর কেউ আমাকে বিরক্ত করে না। কেউ যদি আমাকে ইউরোপের মেয়েদের কাছ থেকে আরও অথর্ আদায়ে চাপ দেয়ার জন্য জাদু করতে বলে, তবুও আমি সেটা আর করি না। মৃত্যুর ভয় আমারও আছে।’

ডয়েচে ভেলে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<14042 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1