মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলমগ্ন চঁাদকুমারী

মো. ইব্রাহিম খলিল
  ৩১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

শরৎ যখন হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে শুরু করল, তখন পায়েল চঁাদকুমারীকে নিয়ে হেমন্তের উপহার বাবদ একটি কবিতা লিখে ছিল। কবিতা পড়ে সে তো উচ্ছ¡াসে আত্মহারা! কল্পনাতে সে সাজে, চোখ বুজে অনুভব করে পায়েলকে ফোন দেয়। তুমি এখন এলে না খুব ভালো হতো। কেন? আমি খুব সেজেছি। সুন্দর একটি থ্রি-পিস পরেছি। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই না কি? আচ্ছা আমি বলি তোমাকে দেখতে কেমন? চঁাদকুমারী হেসে বলল, বল না দেরি করছ কেন? জান। চঁাদকুমারী জানো, তোমাকে দেখতে একদম আমার বন্ধুর মতো মনে হচ্ছে। থ্রিপিস পরেছ কেন? লাল বেনারসি শাড়ি পরতে পারলে না? কেন? থ্রিপিস পরেছি বলে খারাপ দেখাচ্ছে? আরে না থ্রিপিস পরেছ বলে তো তোমাকে এখন রঙ্গিলার মতো লাগছে। আর শাড়ি পরলে তো গঁায়ের বধূর মতো লাগত! মানে? মানে আর কি? ছোট মেয়ের মতো যেন কিছু বুঝ না?

কোনো কিছু তোমার মুখে আটকায় না। এখন পযর্ন্ত দেখাও করনি একবার, গঁায়ের বধূর কথা বলছ। শরৎ শেষ হতে চলেছে। গঁায়ে নবরূপে রূপায়িত করছে চারপাশে। বিকালটা খুব ভালোই লাগছে। সন্ধ্যেবেলা চঁাদকুমারীকে বেশি মনে পড়ছে। হেমন্ত আসতে বেশি বাকি নেই, হয়তো এসেই গিয়েছে। হিম কুয়াশার শীত হালকা অনুভ‚ত হচ্ছে। চঁাদকুমারী পাশে থাকলে আরও তৃপ্তি পেতাম। ইদানীং শুধু তোমাকেই প্রয়োজন মনে করছি।

এই চঁাদকুমারী শুনো শহরে তো নবান্ন উৎসব হয় না। আমি এই হেমন্তে গ্রামের বাড়ি আসছি, পারলে আমার জন্য একটু পায়েস রান্না করো, চঁাদকুমারী। ঠিক আছে তুমি এসো আমি সব তৈরি করে রাখব। তুমি এলে দু’জনে মিলে খাব। পায়েল তো আনন্দে আত্মহারা। কিসের পিঠা-পায়েস, তার সাথে দেখা করার কথা! কিন্তু কীভাবে প্রথম দেখা করতে যাব, কী নেব তার জন্য? চঁাদকুমারীর জন্য একটা কলিই যথেষ্ট। ঠিক ভোরবেলা চলে গেলাম চঁাদকুমারীর বাসায়। দেখলাম চঁাদকুমারীর ঘরটা পুষ্প দিয়ে সাজানো বিছানা, ফুলশয্যার ঘরের মতো। পড়ার টেবিলে হরেক রকম পুস্তক। কি সুন্দর দেখায়!

সেদিন লাল টুকটুকে চঁাদকুমারীকে ভালোই লাগছিল। বিয়ের পোশাকে ওকে কতনা সুন্দর দেখায়! মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে রইল পায়েল। আচ্ছা চঁাদকুমারী, সত্যি করে বলতো তুমি কি আমাকে শাদী করবে? চঁাদকুমারী কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে নিশ্চুপ ঘরের ভেতরে চলে যায়। চঁাদকুমারীর এই আচারণটা পায়েল ঠিক বুঝতে পারে না। এতক্ষণ তো ও হাসি খুশিই কথা বলছিল, এখন আবার কী হলো? তাহলে কি চঁাদকুমারী ওর কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছে? না-কি? চঁাদকুমারী ওর খালাতো বোন, চঁাদকুমারী আর ওর মা, নানু বাড়ি বেড়াতে এসেছে। পায়েল পড়া লেখায় অনেক ভালো। ছেলেটা সৎ নম্র-ভদ্র। বড় হয়ে সে অনেক কিছু করতে পারবে। এই ভেবে হয়তো চঁাদকুমারীর মা পায়েলের মায়ের কাছে দু’জনের বিয়ের প্রস্তাব রাখছিল।

পায়েল ভাই, হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে আচমকা! পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখল পায়েল, চঁাদকুমারী দঁাড়িয়ে আছে। সে ওকে পায়েল ভাই বলেই ডাকে। আচ্ছা আপনার কি লজ্জা-শরম নেই? প্রশ্নটা শুনে পায়েল চঁাদকুমারীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রথমে ব্যাপারটা তেমন বুঝতে পারে নাই ও। পরে চঁাদকুমারী ওকে খুলে বলল, আপনি কি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ? নতুবা একটু বড় হয়েছেন। কিন্তু, আমি কি মায়ের সামনে বসে বিয়ের কথা বলতে পারি? চঁাদকুমারীর কথায় পায়েল লজ্জা পেয়েছে। তখন মনে ছিল না, তা এখন কি বলবে বল। না না কিছু না, পরে ...,

শহুরে সিটিসেল কোম্পানিতে চাকরি করে পায়েল। মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি যায়। চঁাদকুমারীর সঙ্গে ওর দেখাও হয়। এক পলকে চঁাদকুমারীর দিকে তাকিয়ে থাকে ও। যেন বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরো ফসার্ হয়ে উঠেছে চঁাদকুমারী। চঁাদকুমারীর জন্য বিয়ের ঘর এসেছে, ছেলে সরকারি চাকরি করে। ওর মাও প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। পায়েলের মা চঁাদকুমারীর জননীকে অনেক বোঝান, কিন্তু তার এককথা পায়েলের সঙ্গে চঁাদকুমারীর বিয়ে দেবে না। বিয়ের দিন চঁাদকুমারী ওকে এক পাশে ডেকে নিয়ে শুধু একটা কথা বলে, পায়েল ভাই আপনি এই রকম! পায়েল ওর মুখের দিকে তাকায় না। কেন না চঁাদকুমারীর মুখটা দেখলে ওর নিজের কষ্টও যেন আরও শতগুণ বেড়ে যাবে। শুধু বলল যে, সবই প্রকৃতির নিয়ম এ নিয়ম ভাঙ্গন যায় না। সেটা না হলে তো তুমি চিরজীবন আমারই থেকে যেতে।

নীরব চোখে শুধু অশ্রæ বিসজর্ন দিয়েই চঁাদকুমারী পাশের গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে পা বাড়ায়। জীবনটাএ রকম! সুখ এসে ধরা দিয়েছিল, পরক্ষণে আবার দুঃখে পরিণত হলো! মাস ছয়েক পরে পায়েল চাকরিকে প্রস্থান করাতে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ মেলে না। মাস শেষে বাড়িতে মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়ে দেয়। প্রায় এক যুগ পরে ফের গ্রামে ফিরে আসে পায়েল। বাড়িতে পেঁৗছেই সে চঁাদকুমারীর খেঁাজটা নেয়। অবাক করা অনেক অজানা তথ্যও জানতে পারে সে। সন্ধ্যার গোধূলি লগ্নের ঠিক পূবর্ মুহ‚তের্ চঁাদকুমারীর বাড়ির পাশে গগন তলায় আনমনে কিছুক্ষণ দঁাড়িয়ে ছিল। একটু পরে চিৎকার করে হেরু গলায় বলে উঠল। জীবনের রণাঙ্গন মঞ্চে কখনো কোনো গল্প লেখা হলো না।

পরনে লাল শাড়ি পরা চঁাদকুমারী। পায়েলের কণ্ঠস্বর শুনে দৌড়ে এসে, ঠিক সেই আগের মতোই পায়েলের মুখের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে ও। পায়েলও কোনো কথা না বলে চেয়ে থাকে। চঁাদকুমারীর ‘জননী’ পায়েলের কণ্ঠে রণাঙ্গন মঞ্চের গীত শুনে বেরিয়ে আসেন। জিজ্ঞেস করে কেরে চঁাদকুমারী, কে আসছে আবার? পায়েল কে দেখে তিনিও থমকে দঁাড়ান! পায়েলের কণ্ঠস্বর যেন পূবের্র মতোই মায়াভরা রয়ে গেল! জলমগ্ন চঁাদকুমারীর দু’চোখে টলমল করে জল পড়ছে! বলল, এত দিন পরে আমাদের মনে পড়ল? পায়েল মনে তো সব সময় পড়ে কিন্তু তা পড়লেই বা কী! কপালের লিখন তো যায় না খÐন। চঁাদকুমারীর ছেলেটি কে কোলে নিয়ে বলে, তা এই বুঝি তোমার? আফসোছ আহ! ছেলেটা আমারই তো হতে পারত। চঁাদকুমারী নিজের দুবর্লতা প্রকাশ করতে চাইলে পায়েল গঁায়ের মেঠোপথ ধরে ছুটল। বলল আজই তবে আসিরে।

সদস্য

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

সীতাকুন্ড,চট্রগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<5765 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1