মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘ কেটে যায়

মো. মাঈন উদ্দিন
  ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

রাইজিং সান একাডেমি, একটি কিন্ডারগাটের্ন স্কুল। এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন ইমাদ। উচ্চ শিক্ষা খতম করা এক যুবক ইমাদ। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির মানসে স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি ভোর বেলা থেকে মধ্যরাত অবধি টিউশনি করে বেড়ায় । তারই স্কুলের চতুথর্ শ্রেণিতে পড়ে ফারিহা। ফারিহাকে সে দেড় বছর যাবত প্রাইভেট পড়াচ্ছে। সেই সূত্রে ফারিহার বড় বোন ফাহিমার সঙ্গেও মাঝে মধ্যে দেখা হয়। তারপর টুকটাক কথা বলা। একদিন যথারীতি সন্ধ্যার পর দোতলার কলিং বেল বাজায় ইমাদ। না, কেউ আসছে না। সে মনে মনে ভাবলো-হয়তো কেহ বাসায় নেই। আবার কলিং বেল চাপল। কেউ আসছে না। আনমনে কি যেন ভাবছে ইমাদ। হঠাৎ রেলিং খুলে ভেতর থেকে ডাক আসে ‘স্যার ভেতরে আসেন।’ পিছন দিকে ঘুরে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে ইমাদ। ফাহিমাকে সে আরো অনেকবার দেখেছে কিন্তু আজ যেন এ আরেক ফাহিমাকে দেখছে সে। বিদ্যুতের স্বচ্ছ আলো ফাহিমার ওড়নার চুমকিতে প্রতিফলিত হয়ে তার বিচ্ছুরণ গিয়ে পড়ল ইমাদের চোখে। সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করল সে। আবার তাকাল। এবার তার ব্যাকুল দৃষ্টি ফাহিমার মুখাবয়বে নিবিষ্ট হলো। যতই দেখছে ততই যেন বিমোহিত হচ্ছে তার চোখ যুগল। এ যেন উধর্Ÿাকাশ থেকে নেমে আসা এক অপ্সরী। তালা খোলে রেলিংটা একটু ফঁাক করেছিল ফাহিমা। এরপর হাত দুটো এক সাথে মুষ্টিবদ্ধ করে নতজানু হয়ে ভেতরে দঁাড়িয়ে সে। আর বাহিরে দঁাড়িয়ে এক নিবার্ক পুরুষ। অপরূপা এক মেয়ের দ্যুতিতে বিমোহিত সে। ইমাদ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে নিজেকে খুঁজে ফিরছে। ভাবলেশহীন এক মানবকে ফাহিমা বলল, ‘স্যার দঁাড়িয়ে কেন? ভেতরে আসুন।’ ঠিক সেই সময় থেকে সেকেন্ডের ব্যবধানে ইমাদ ফাহিমার প্রেমে পড়ে গেল। এ যেন জেনে শুনেই অগ্নিগভের্ নিজেকে শপে দেয়া। সময়ের ব্যবধানে, প্রকৃতির খেয়ালিপনায় ফাহিমাও একসময় ইমাদের প্রেমে অবগাহন করতে শুরু করল। এ যেন আগুনের কাছে এসে শক্ত মোমের আত্মগলন। ফারিহাকে পড়ানোর সময় বিভিন্ন অজুহাতে ফাহিমা পড়ার টেবিলে এসে বসে থাকে। গল্প করে। চোখের ভাষায় চলে প্রেম বিনিময়। যদিও তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মুখের বাণী হয়ে ফোটেনি তখনো। ইমাদ যেখানে বেতনের আশায় পড়ানো শুরু করেছিল, আজ সে ফাহিমার এতটুকু দশের্নর আশায় সারাদিন মুখিয়ে থাকে। ফাহিমার দশের্নর কাছে বিনিময় যেন তার কাছে একেবারেই তুচ্ছ। ইমাদ চায় ফাহিমার এতটুকু দশর্ন। যে দশের্ন তার হৃদয়ে ভালোবাসার জল সঞ্চালন হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন ফাহিমা তার সামনে এলো না। অন্য রুমে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইল। এক ঘণ্টার স্থলে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, তবুও দশর্ন হলো না ভালোবাসার জল প্রপাতের। রিক্ত হস্তে, শূন্য হৃদয়ে ফিরে এলো ইমাদ। দ্বিতীয় দিনও একই ঘটনা। তৃতীয় দিনও। এদিন কোনো প্রবোধ বাণীই যেন ইমাদের মনকে শান্ত করতে পারল না। তার শূন্য হৃদয় থেকে খসে পড়া বিন্দু বিন্দু পানি চোখের মাধ্যমে গড়িয়ে পড়ল চৈত্র্যের তপ্ত পিচঢালা পথে। যেখানে প্রাণের সঞ্চালন নেই, সেখানে বিনিময় যেন একেবারেই তুচ্ছ। তাই সে চতুথর্ দিন ফারিহাকে পড়াতে যায়নি। পঞ্চম দিনও না। যদিও ফাহিমা তাকে অনেক কল দিয়েছে। কিন্তু সে রিসিভ করেনি। এক পাথর কঠিন জিদ তাকে পেয়ে বসেছে। ষষ্ঠ দিন নিদির্ষ্ট সময়ে সে পাকের্ গিয়ে নিজর্ন স্থানে বসে রইল। হঠাৎ ইমাদের ফোন বেজে উঠল। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠল ফাহিমার নাম। সে রিসিভ করেনি, দু’চোখ বন্ধ করে বসে রইল। লাগাতার সাইলেন্ট মোডে কল বেজেই চলেছে; এদিকে সাইলেন্ট মুডে কেঁদে চলেছে ইমাদের হৃদয়। নিরানব্বইটা কল হয়ে গেছে। আবারও কল বেজে উঠল। এবার আর পারল না ইমাদ, সে আস্তে আস্তে মোবাইলটি কানের কাছে ধরল। ওপাশ থেকে ফাহিমার প্রশ্ন, ‘স্যার, আসছেন না কেন?’ ইমাদের কঁাপা কঁাপা কণ্ঠে অভিমানি পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন আসব?’ ফাহিমার হৃদয় হয়তো এই ‘কেন’-এর উত্তর বলে দিয়েছে চুপি চুপি। ওপাশ থেকে কোমল কণ্ঠে ভেসে এলো ‘সরি স্যার, আপনি এখনই আমাদের বাসায় আসুন। প্লিস স্যার।’ এই একটি মাত্র ‘সরি’ ইমাদের হৃদয় উপচেপড়া পাথর সরে গেলো। সমস্তটা আকাশজুড়ে জমে থাকা কালো মেঘবলয় বিলীন হয়ে গেলো। ইমাদ বাম হাতের উল্টো দিকটায় দু’চোখ মুছে বলল-আসছি।

সদস্য, জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম,

ময়মনসিংহ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<17647 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1