বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বকের বিরক্তিকর সমস্যা স্ক্যাবিস

স্ক্যাবিসের প্রাথমিক এবং অতি পরিচিত উপসর্গ চুলকানি, বিশেষ করে রাতে চুলকানোর প্রকোপ বেড়ে যায়। লাল ক্ষুদ্র ফুসকরি দেখা যেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে পরে ত্বক খসখসে বা মাছের আঁশের মতো হতে পারে।
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

স্ক্যাবিস আমাদের ত্বকের একটি অতি সাধারণ সমস্যা। একটু সচেনতার সঙ্গে চিকিৎসা করলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। আবার একটু অবহেলার কারণে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের জটিলতাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। স্ক্যাবিস নতুন কোনো রোগ নয় বরং ঝধৎপড়ঢ়ঃবং ংপধনবর নামক মথ দ্বারা প্রায় ২৫ হাজার বছর ধরে মানুষের মাঝে বিস্তৃত হচ্ছে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ কোটি মানুষ প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার তারতম্যের কারণে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে কোনো বয়সে স্ক্যাবিস হতে পারে। তবে সুসংবাদ হলো খুব সহজেই এ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব।

কীভাবে স্ক্যাবিস হয় ?

আণুবীক্ষণিক এ মথটি খালি চোখ দেখা যেতে পারে। আট পা বিশিষ্ট গোলাকার ক্ষুদ্র এ মথটি ত্বকে লুকিয়ে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ ধরনের অ্যালারজিক ক্রিয়ার ফলে ত্বক চুলকায় যা অনেক সময় এত বেশি হতে পারে যে, চুলকানোর ফলে রোগী রাতে ঘুম থেকে জেগে যেতে পারে।

ঘনিষ্ঠ স্পর্শের মানুষের মধ্যে স্ক্যাবিস ছড়ায়। ছেলেমেয়ে, বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারের অন্য যে কোনো সদস্য স্ক্যাবিসের উৎস হতে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা যেমন শিশু সদন, এতিমখানা, জেলখানা, হাসপাতালে স্ক্যাবিস সহজে ছড়াতে পারে। যাদের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে এবং যারা একই বিছানা, পরিধেয় বস্ত্র ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে তাদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

উষ্ণতা ও গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী মথ প্রথমত ত্বকে লুকিয়ে থাকে পরে ডিম পাড়ে এবং বিষ নিঃসরণ করে অ্যালারজিক বিক্রিয়া ঘটায়। লার্ভা বা নতুন মথ ত্বকের উপর দিয়ে চলাফেরা শুরু করে এবং শরীরের গুপ্তস্থানে থেকে পরিণত হয়। নখের আঁচড়ে সৃষ্ট ত্বকের ভাঁজে মথটি ২৪ ঘণ্টা বা এর চেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে। যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে বিশেষ করে যারা নিয়মিত গোসল করে তারা এক মাস পর প্রথম চুলকানি অনুভব করতে পারে।

রোগের উপসর্গ

স্ক্যাবিসের প্রাথমিক এবং অতি পরিচিত উপসর্গ চুলকানি, বিশেষ করে রাতে চুলকানোর প্রকোপ বেড়ে যায়। লাল ক্ষুদ্র ফুসকরি দেখা যেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে পরে ত্বক খসখসে বা মাছের আঁশের মতো হতে পারে। স্ক্যাবিস সৃষ্টকারী আনুমানিক ০.৪ মি.মি মথ যা খালি চোখে দৃশ্যমান। স্ক্যাবিস উষ্ণ স্থান পছন্দ করে। এ কারণে নিম্নলিখিত জায়গায় স্ক্যাবিস বেশি দেখা যায়-

শরীরের গুপ্তস্থানে

আঁটসাট পোশাকের নিচে, দুই আঙুলের ফাঁকে, নখের নিচে, কনুই বা কবজির উপরে,

নিতম্ব বা কোমরের নিচে, স্তন বৃন্তের চারদিকে, পুংলিঙ্গের উপরে, ঘড়ি, চুড়ি বা আংটির নিচে মথটি লুকিয়ে থাকতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের তালু, মাথাসহ শরীরের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। চুলকানিজনিত কারণে রাতে ঘুম না হওয়ায় শিশুরা ক্লান্ত ও খিটখিটে হয়ে যায়।

আঁচড়ের কারণে স্ক্যাবিস আক্রান্ত ত্বক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

রোগ নির্ণয় : চর্ম বিশেষজ্ঞ মাথা হতে পা পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে রোগটি নির্ণয় করে থাকেন।

কারা স্ক্যাবিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ?

স্ক্যাবিসের জন্য তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ- যারা অন্যদের সঙ্গে শারীরিক স্পর্শে আসে; যেমন

শিশু, শিশুদের মা, যৌনকার্য সক্ষম পরিণত নর-নারী,

আশ্রমে বসবাসকারী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশুদের পায়ের তালুতে স্ক্যাবিস, নাভি ও কোমরে স্ক্যাবিস হয়ে থাকে।

স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায়

ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করার পর শরীর ভালো করে মুছে শুকাতে হবে। এরপর ৫ শতাংশ পারমিথ্রিন ক্রিম (বাজারে ঝপধঢ়বৎ, ংপধৎরহ, ংপধনবী ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) হাত ও পায়ের তালু, নখ, কুঁচকিসহ গলা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গায় লাগাতে হবে। এরপর ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর আবার সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। এক সপ্তাহ পর আবার একইভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।

পারমিথ্রিন ক্রিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক সাময়িক জ্বালাপোড়া করতে পারে।

আবার স্ক্যাবিস দ্বারা আক্রান্ত হলে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

স্ক্যাবিস চিকিৎসায় আইভারমেক্টিন নামক মুখে খাবার ওষুধ পাওয়া যায়, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সেবন করা উচিত। শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের এ ওষুধ দেয়া হয় না।

চিকিৎসার পরিপূর্ণ সুফল পেতে যা করণীয়

ষ যত দ্রম্নত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা গ্রহণ,

ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা,

ষ পরিবারে আক্রান্ত সবাই একই সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করা। আক্রান্ত সবাই একই সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে কখনোই চিকিৎসা সম্পন্ন হবে না।

ষ পরিধেয় বস্ত্র ধুয়ে ইস্ত্রি করে পরতে হবে,

ষ বিছানা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে আবার ব্যবহার করতে হবে।

স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায়

ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

ষ নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে।

ষ স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।

ষ স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক বা বিছানা ব্যবহার না করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89134 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1