শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকর উপায়

য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে।

চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উলেস্নখ করছেন চিকিৎসকরা। মানুষ সচরাচর যে ধরনের খাবার খায়, সেগুলো হচ্ছে- শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার। এ ধরনের খাবার শরীরের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ওপর।

দুগ্ধজাত খাবার

দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি। মানুষের পাকস্থলীতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়।

বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কলেস্নাল বলেন, পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।

দুগ্ধজাত খাবারগুলোর পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি-এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোনো ঘাটতি থাকবে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।

তিনি বলেন, যেমন শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ভিটামিন 'বি' এবং 'সি' জাতীয় খাবার

এই ভিটামিনগুলো পানির সঙ্গে মিশে যায়। এগুলো শরীরে জমা হয় না। চিকিৎসক কলেস্নালের মতে, প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এই ভিটামিনগুলো পানিতে মিশে যাওয়ার কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

শরীরের নার্ভের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই দুই ধরনের ভিটামিন কাজ করে। শরীরের ভেতরে বিক্রিয়ার কারণে যেসব সেল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো সারিয়ে তুলতে কাজ করে ভিটামিন সি।

দুধ এবং কলিজার মধ্যে ভিটামিন বি আছে। টক জাতীয় যে কোনো ধরনের ফল- লেবু, আমলকী, কমলা, বাতাবিলেবু এবং পেয়ারাতে ভিটামিন সি আছে।

চা-কফি কতটা খাবেন?

অতিমাত্রায় চা-কফি পান করা শরীরের জন্য ভালো নয়। 'ধরুন একজন যদি দিনে সাত কাপ চা খায় এবং প্রতি কাপে এক চামচ চিনি থাকে তাহলে তিনি কিন্তু প্রতিদিন সাত চামচ চিনি খাচ্ছেন। এই সাত চামচ চিনি শরীরের জন্য ভয়াবহ।' বলছেন মি. কলেস্নাল।

চা-কফিতে এমন অনেক উপাদান থাকে যার কোনটি শরীরের জন্য ভালো এবং কোনটি শরীরের জন্য খারাপ।

ভাত বেশি খাবেন না

একজন মানুষ প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খাবেন, তার ৬০ শতাংশ হওয়া উচিত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। এরপর ৩০ শতাংশ হতে হবে প্রোটিন এবং ৫ শতাংশের মতো থাকবে চর্বিজাতীয় খাবার।

মি. কলেস্নাল বলেন, 'আমাদের দেশে দেখা যায়, শর্করা প্রচুর খাওয়া হচ্ছে, কিন্তু সে পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা হয় না।'

তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে সেটি শরীরের ভেতরে ঢোকার পর ফ্যাট বা চর্বিতে রূপান্তর ঘটে।

অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার সুষমভাবে খেতে হবে।

'আপনি হয়তো মনে করছেন যে, আপনি প্রচুর পরিমাণে তেল, চর্বি, ঘি বা মাখন জাতীয় খাবার খাচ্ছি না। তাহলে আমার শরীরে এত চর্বি জমা হয় কীভাবে?'

নিয়মিত ব্যায়াম অথবা অন্য যে কোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম করে তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সঙ্গে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছবে। তখন শরীরের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদন শুরু হবে।

সুতরাং প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। মি. কলেস্নাল বলেন, এমন ধরনের পরিশ্রম করতে হবে- যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে থাকলে ডেঙ্গুজ্বর থেকে রেহাই মিলবে

চিকিৎসক মি. কলেস্নাল বলেন, এর সঙ্গে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া কিংবা না হওয়ার সম্পর্ক আছে কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। একজনের শরীরে কতটুকুজীবাণু ঢুকছে এবং সে জীবাণুটির আক্রান্ত করার ক্ষমতা কতটা সেটি-ই গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। সে ভাইরাস যখন আমার শরীরে ঢুকছে, তখন আমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম অ্যাকটিভেট (কার্যকরী) হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। তখন আমার শরীর সঙ্গে সঙ্গে সেটির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সুতরাং যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো এবং যে মশাটি কামড়াচ্ছে সেটির ভেতরে যদি জীবাণুর পরিমাণ কম হয়, সে ক্ষেত্রে আমার শরীর ভালো রিঅ্যাক্ট (সাড়া) করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85364 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1