শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভেন্টিলেশন কখন জরুরি

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ভেন্টিলেটর হল 'লাইফ সেভিং ডিভাইস'। একে বলা হয় সাপোর্টিভ চিকিৎসা। অনেক সময় রোগ জটিলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলে দেখা যায় রোগী নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছেন না। তার শ্বাসযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে না। রেসপিরেটরি ফেলিওর হচ্ছে। তখন কৃত্রিম উপায়ে বাইরে থেকে মেশিনের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করা হয়। এটাই ভেন্টিলেশন। আর যে যন্ত্রের সাহায্যে এ চিকিৎসা দেয়া হয়, সেটি হলো ভেন্টিলেটর। সেই সঙ্গে চলে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা। যাতে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। সাধারণত টার্মিনাস স্টেজেই ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। তাই মানুষ ভাবেন, ভেন্টিলেশন শুরু হলে রোগীর আর ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবে একথা ঠিক যে ভেন্টিলেশনে থাকলেই সব রোগীর ভালো হবে ওঠার নিশ্চিন্ত আশ্বাস নেই। সবসময় শেষরক্ষা করা যায় না। কিন্তু, সঠিক রোগের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভেন্টিলেশন চালু হলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

ভেন্টিলেটরের ব্যবহার কীভাবে শুরু হলো?

ব্যবহার বহুদিন ধরেই ছিল। তখন পোস্ট অপারেটিভ রিকভারির জন্য বুকের চারপাশে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে পজিটিভ প্রেশারের মাধ্যমে নতুনভাবে চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় ডেনমার্কে পোলিও মায়োলাইটিসের প্রকোপে মহামারী দেখা গেলে চিকিৎসকরা আর্টিফিশিয়াল এয়ারওয়ে টিউবের সাহায্যে বহু রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তখন থেকেই চিকিৎসক মহলে দুটি ধারণা তৈরি হয়। ১. অপারেশন ছাড়াও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ভেন্টিলেটর প্রয়োগ করা যেতে পারে। ২. এখন থেকে নতুন ধরনের কৃত্রিম পজিটিভ প্রেশার ভেন্টিলেশনের সময় দেয়া সম্ভব। এভাবেই পজিটিভ ভেন্টিলেশনের ব্যবহার শুরু হয়। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এর সিস্টেম, ব্যবহার ইনফাস্ট্রাকচার সবেতেই উন্নতি হয়েছে।

ভেন্টিলেশনের প্রকারভেদ রয়েছে?

মূলত দু'ধরনের ভেন্টিলেশন দেখা যায়। ১. ইনভেসিভ ২. নন-ইনভেসিভ। ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে একটি কৃত্রিম এয়ারওয়ে টিউব ব্যবহার করা হয়। এটি ফুসফুসের ভিতরে পাম্প দিয়ে রোগীক শ্বাস নিতে সাহায্য করে। নন ইনভেসিভ হলে এই ধরনের কোনো টিউব থাকে না। মাস্কের সাহায্যে রোগী কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে মোটামুটি ১৯৯০ সাল থেকে নন ইনভেসিভ পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়।

কখন রোগীকে ভেন্টিলেশন দেওয়া উচিত?

একেবারে টার্মিনাল স্টেজে পৌঁছলেই রোগীকে ভেন্টিলেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাধারণত হাসপাতালে সর্বমোট বেডের ১০ শতাংশ ভেন্টিলেশনের জন্য বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে রোগীর তেমন জটিল উপসর্গ দেখা গেলে সবার আগে রেসপিরেটরি ফেলিওরের মতো পরীক্ষা করা হয়। সেরকম অসঙ্গতি পেলে বস্নাড গ্যাস অ্যানালাইসিস করে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হয়। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, কোন রোগীর জন্য ভেন্টিলেশন অপরিহার্য। অনেক সময় রোগীকে দেখেই বোঝা যায়, তার অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। তখন তাকে সরাসরি ভেন্টিলেশন দেয়া হয়। অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরে করা হয়। এইভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে এগোতে হয়। তাহলেই রোগীকে প্রকৃত প্রয়োজনে ভেন্টিলেশন দেয়া সম্ভব হবে।

কোন কোন রোগে ভেন্টিলেশন আবশ্যিক?

মেডিকেল, সার্জিক্যাল, গাইনি- যে কোনো রোগের জটিলতা ডেডলাইনে পৌঁছে গেলেই ভেন্টিলেশনের কথা ভাবা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বেশ মারাত্মক। চোট, আঘাত, পথ দুর্ঘটনা থেকে ব্রেন স্ট্রোক, ট্রমার মতো জটিল উপসর্গ দেখা গেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কখনও দেখা যায়, বিশেষ আঘাত থেকে ইনফেকশন হয়ে রোগীর গোটা শরীর সেপসিস আক্রান্ত হয়েছে।

অনেক সময় বিষ খেলে, বিষধর সাপ কামড়ালে রক্তে অতিরিক্ত বিষক্রিয়া দেখা যায়।

হার্ট অ্যাটাক, মেজর সার্জারি, ক্যান্সার থেকেও জটিলতা বেড়ে যায়।

ক্রনিক নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, মেজর চেস্ট ইনফেকশন হলেও নানান সমস্যা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বহু মহিলার হাই প্রেশারের প্রবণতা দেখা যায়। একে একল্যাম্পশিয়া বলে। এই সময় তাদের ব্রিডিং ডিজঅর্ডার বা রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এই ধরনের রোগযন্ত্রণা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠলে রোগী বিভিন্ন উপসর্গের শিকার হন। তখন একনাগাড়ে অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট অথবা রেসপিরেটরি ফেলিওর হলে চিকিৎসক ভেন্টিলেশনের কথা ভাবেন।

কোন বয়স থেকে ভেন্টিলেশন দেওয়া যায়?

ভেন্টিলেশনের জন্য বয়স তেমন কোনো বিষয় নয়। বরং সেরকম জটিল উপসর্গ থেকে শ্বাসকষ্ট হলে শিশুদের অবধি এই চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ইদানীং অল্পবয়সি রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিই এদের চটজলদি উপশমের কারণ। জেনারেল আইসিউ বা সিসিউতে দেখা যাচ্ছে, চলিস্নশ বছরের উপরে রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। তার মধ্যে আবার মোট বেডের মাত্র ১০ শতাংশ ভেন্টিলেশনের জন্য ছাড়া রয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ রোগীই মুমূর্ষু। এদের বয়স পঞ্চাশ/ষাটের ওপর। তবে চলিস্নশের কম বয়সি রোগী একেবারেই নেই এ কথা বলা যায় না।

ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে আদৌ কি রোগীকে বাঁচানো সম্ভব?

বেঁচে থাকার বিষয় রোগীর শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসার মান, পরিকাঠামো এবং পরিষেবার ধরনের ওপর নির্ভর করে। এরপর দেখা হয় রোগীর বয়স, বর্তমান রোগ জটিলতা, শরীরে কোনোরকম ক্রনিক রোগের উপস্থিতি আছে কিনা। কোনও অর্গান ফেল করলে সেটি কত শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে, তাও পরীক্ষা করাতে হয়। রোগী যদি ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ইস্কিমিয়া, হাই বস্নাড প্রেশার, কিডনির সমস্যায় ভুগতে থাকেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসককে বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। এসবের উপরেই রোগীর সুস্থতা নির্ভরশীল। এ ধরনের লাইফ সেভিং সাপোর্ট নিয়ে অন্যান্য চিকিৎসায় সাড়া দিলে রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরিকল্পনামাফিক অপারেশন হলে রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে একেবারেই বাঁচানো যায় না?

সাধারণত শেষ পর্যায়ে এসেই চিকিৎসক ভেন্টিলেশনের কথা ভাবেন। অনেক সময় দেখা যায়, এতকিছুর পরেও উপসর্গগুলো একেবারে টার্মিনাল স্টেজেই রয়েছে।

ষ যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসা ফলদায়ক হচ্ছে না।

ষ সর্বোচ্চ ডোজের ওষুধ দিলেও হার্ট ঠিকঠাক কাজ করছে না। এমনকী মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ষ রোগী নিজে থেকে কোনোভাব শ্বাস নিতে পারছেন না।

ষ পর্যন্ত চিকিৎসা করলেও রোগী এক মাসের ওপর কোমায় রয়েছেন।

ষ এই সমস্ত লক্ষণ দেখা গেলে বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

এখন পর্যন্ত ভেন্টিলেটরের বিকল্প কিছু পাওয়া গেছে?

হঁ্যা আছে। অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) হলে রোগীর জীবনমরণ সমস্যা ঘনিয়ে আসে। এই সময়ে অন্যান্য শারীরিক জটিলতার সঙ্গে ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তখন এক্সট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশনের (ইকমো) মাধ্যমে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান দেয়া হয়। আবার 'ঊঈঈড়২ জবসড়াধষ' বা এক্সট্রা কর্পোরিয়াল কার্বন-ডাই-অক্সাইড রিমুভাল পদ্ধতি প্রয়োগ করে অপ্রয়োজনীয় কার্বন-ডাই অক্সাইড বের করে দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83352 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1