শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কন্টাক্ট লেন্স চোখের সৌন্দর্য ও প্রয়োজনীয় দৃষ্টি বাড়ায়

মানুষের মঙ্গল আর সৌন্দর্য বিকাশে বিজ্ঞান নিরন্তর কাজ করে চলেছে। মানুষকে মুক্তি দিয়েছে নানা বাধা আর প্রতিবন্ধকতা থেকে। ঠিক তেমনি চশমার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানের নতুনতর সৃষ্টি কন্টাক্ট লেন্স। এই সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য দুটি- চোখের প্রয়োজনীয় দৃষ্টি বাড়ানো; সে সঙ্গে সৌন্দর্য বৃদ্ধি। সারা বিশ্বে তাই আজ চশমার বদলে কন্টাক্ট লেন্সের জয়ধ্বনি।
নতুনধারা
  ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মুখের সৌন্দর্যের অনেকটাইজুড়ে থাকে একজোড়া চোখ। পুরুষের কাছে নারীর চোখ তাই কখনো সাগর, কখনো আকাশ, কখনো বর্ষার দীঘি, কখনো কাজল কালো মেঘ, কখনো পাখির নীড়। সেই চোখকে কেউ চায় চশমার শৃঙ্খলে আড়াল করতে।

চোখের দৃষ্টিশক্তি কমতেই পারে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। তাই বলে সেকেলে চশমার ফ্রেমে তার সৌন্দর্যে শৃঙ্খল পরানো কখনোই শুভ বুদ্ধির পরিচায়ক হতে পারে না। আসলে সময়বদলে গেছে। আজকের বেশভূষা, চলাফেরা, জীবনযাত্রা সব কিছুই আধুনিক। এসবের সঙ্গে সেকেলে বয়স বাড়িয়ে দেয়া চশমা বড় বেশি বেমানান।

মানুষের মঙ্গল আর সৌন্দর্য বিকাশে বিজ্ঞান নিরন্তর কাজ করে চলেছে। মানুষকে মুক্তি দিয়েছে নানারকম বাধা আর প্রতিবন্ধকতা থেকে। ঠিক তেমনি চশমার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানের নতুনতর সৃষ্টি কন্টাক্ট লেন্স। এই সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য দুটি- চোখের প্রয়োজনীয় দৃষ্টি বাড়ানো; সেই সঙ্গে সৌন্দর্য বৃদ্ধি। সারা বিশ্বে তাই আজ চশমার বদলে কন্টাক্ট লেন্সের জয়ধ্বনি।

চশমার ব্যবহার বেশ প্রাচীন হলেও কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার শুরু হয় মূলত এই শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে। গত কয়েক দশকে এর গুণগত মান যেমন অনেক বেড়েছে, তেমনি এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তাও অনেকগুণ বেড়েছে। মোটামুটি একটি জনপ্রিয় সমাধান চশমা হলেও অনেকের কাছেই এটি বাড়তি ঝামেলা। মুখের ওপর চেপে বসা অতিরিক্ত একটি যন্ত্র। চোখ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, অভিব্যক্তিও প্রকাশ করে। চশমা সেটাকে প্রায় ঢেকে ফেলে। আর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও চশমা একেবারে নিখুঁত নয়। চোখ থেকে প্রায় দেড় সেন্টিমিটার দূরে এর অবস্থান। তাই প্রতিবিম্বের গুণগতমানে অনেক তারতম্য হয়। যারা খুব পুরু চশমা পরেন, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় বা ছোট দেখে থাকেন। পেশাগত কারণেও অনেকের জন্য চশমা ব্যবহার অসম্ভব। জগৎখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী, অনিল কুম্বলে, জয়সুরিয়া, ওয়াসিম আকরাম- এরা সবাই আজ কন্টাক্ট লেন্স পরে খেলছেন। আবার বাড়ন্ত শিশুকে চশমা পরা মায়েরা কোলে নিতে পারেন না। টেনে খুলে ফেলে বা ভেঙে ফেলে। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারে একটি কন্টাক্ট লেন্স। এটি এমন একটি লেন্স, যা চশমার ফ্রেমে না বসিয়ে সরাসরি চোখের কর্নিয়া বা কালো পর্দার ওপর বসানো হয়। চোখের অনুভূতিতে এর উপস্থিতি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। যেহেতু লেন্সটি সরাসরি চোখের কন্টাক্টে থাকে, তাই এটি কন্টাক্ট লেন্স। ছানি অপারেশনে যে কৃত্রিম লেন্স (আইওএল) লাগানো হয়, সেটা চিরদিনের জন্য চোখের ভেতরে বসানো হয়। এ দুটো লেন্স সম্পূর্ণ পৃথক।

কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার

ষ দুই চোখের পাওয়ারের তারতম্য অনেক বেশি থাকলে চশমা দিয়ে দুই চোখে একসঙ্গে দেখা যায় না। সে ক্ষেত্রে কন্টাক্ট লেন্স আদর্শ হতে পারে।

ষ যেসব রোগীর এক চোখে ছানি অপারেশন করা হয়েছে কিন্তু অন্য চোখ স্বাভাবিক, তাদের ছানি অপারেশন-পরবর্তী চশমা দিলে যে কোনো জিনিস দুটি দেখেন। এ সমস্যা দূরীকরণে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া শিশুদের আঘাতজনিত ছানি অপারেশনের পর কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়।

ষ অধিক পস্নাস পাওয়ার (আগের দিনে ছানি অপারেশনের পর ব্যবহৃত হতো) বা অধিক মাইনাস পাওয়ার থাকলে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়।

ষ চোখের নিজস্ব কিছু অসুখে চিকিৎসকের কন্টাক্ট লেন্সের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ষ এ ছাড়া এক চোখ অন্ধ হলে সেটা ঢাকতেও ব্যবহার করা যায়।

ষ আর ফ্যাশনের জগতে কন্টাক্ট লেন্স আজ বহুল ব্যবহৃত। গাড়ি চালাতে, ভিড়ে চলাফেরা করতে, খেলাধুলায়, শোবিজে মাইক্রোস্কোপ, ক্যামেরা নিয়ে কাজকর্মের ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করা হয়।

কন্টাক্ট লেন্সের ধরন

হার্ড, সেমি সফট ও সফট এবং ডিসপোজ্যাবল এই চার ধরনের লেন্সই মূলত ব্যবহৃত হয়।

* হার্ড লেন্স এক ধরনের স্বচ্ছ পস্নাস্টিক। এটাই সবচেয়ে ভালো দৃষ্টিশক্তি দিতে পারে। সমস্যা হচ্ছে হার্ড লেন্সের মাপজোক অত্যন্ত সূক্ষ্ণ হতে হয়, নতুবা সেট করা বেশ কষ্টসাধ্য। আর এই লেন্সের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন আসতে পারে না। সে জন্য চার ঘণ্টা পরপর খুলে ধুয়ে আবার পরতে হয়। আমাদের কর্নিয়া বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সুস্থ থাকে। হার্ড লেন্স তাতে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। টেকে বেশি, দামে কম এবং অনেক পরিষ্কার।

* সেমি সফট লেন্স বা আরজিপি লেন্স অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। তাই কর্নিয়ার সুস্থতায় কোনো অসুবিধা হয় না। অন্যসব দিক দিয়ে এতে হার্ড লেন্সের মতো সুবিধা।

* সফট লেন্সও মূলত পস্নাস্টিকজাতীয় পদার্থ। কিন্তু এর জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বেশ নরম হয়। তাই বেশ আরামদায়ক। লেন্সটি হার্ড লেন্সের তুলনায় আকারেও বড়। তাই সহজে খুলে পড়ে যায় না। কিন্তু খুব নরম হওয়ায় সহজে ছিঁড়ে বা ভেঙে যেতে পারে। তাই অত্যন্ত যত্নসহকারে এটা ব্যবহার করতে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, নতুবা ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দাম বেশি, টেকে কম, খোলার পরপর সলিউশনে ডুবিয়ে রাখতে হয়। সিগারেটের ধোঁয়াসহ যে কোনো ধোঁয়া ও ধুলোবালুতে এই লেন্স অসুবিধার সৃষ্টি করে। ভালোভাবে ব্যবহার করলে বছর খানেক চলে। বিভিন্ন কালারের পাওয়া যায়।

* ডিসপোজ্যাবল লেন্স- আধুনিক যুগে এটি বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি এক ধরনের সফট লেন্স। তবে চলে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস।

যাদের জন্য প্রযোজ্য নয়

* চোখের অ্যালার্জি থাকলে ব্যবহার করা উচিত নয়।

* বেশি ধুলোবালু বা ময়লার মধ্য যাদের কাজ করতে হয়।

* মানসিক ভারসাম্যহীন থাকলে।

* চোখের যত্ন সম্পর্কে উদাসীন ব্যক্তিদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়; কেননা, তাতে নিজের অজান্তেই তারা চোখের সমস্যা সৃষ্টি করবেন।

* বাইফোকাল চশমার বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।

* যাদের চোখ বারবার লাল হয় বা পানি পড়ে।

* যাদের ড্রাই আই সিনড্রোম রয়েছে বা শুকনো চোখ অথবা যাদের চোখে মিউকাসের পরিমাণ বেশি তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।

* ইনসুলিননির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার যথেষ্ট অসুবিধাজনক।

দাম কী রকম

কিছু দিন আগেও একজোড়া লেন্সের জন্য পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রয়োজন হতো। এখন দাম অনেক কমে এসেছে। এক বছরমেয়াদি একটি সফট লেন্স বর্তমানে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। ডিসপোজ্যাবল লেন্স তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। কিছু তারতম্য হতে পারে। কালারড লেন্স তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা।

সিবা ভিশন নামে সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানি বেশ কিছু কন্টাক্ট লেন্স আমাদের দেশে বাজারজাত করছে।

কয়েক রকমের কন্টাক্ট লেন্স বাজারে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

ষ ঋড়পঁং সড়হঃযষু ফরংঢ়ড়ংধনষব সফট কন্টাক্ট লেন্স। পস্নাস ও মাইনাস দুই ধরনের পাওয়ারেই পাওয়া যায়। এর পাওয়ার রেঞ্জ পস্নাস ০.২৫ থেকে ৬.০ পর্যন্ত ও মাইনাস ০.২৫ থেকে ৮.০ পর্যন্ত।

ষ সিবা সফট স্ট্যান্ডার্ড ইয়ারলি সফট কন্টাক্ট লেন্স। এর পাওয়ার রেঞ্জ মাইনাস ০.২৫ থেকে ৬.০ পর্যন্ত।

ষ ডবরপড়হ ৩৮ঊ ুবধৎষু সফট কন্টাক্ট লেন্স। এর পাওয়ার রেঞ্জ পস্নাস ও মাইনাস ৬.০ থেকে ২০.০ পর্যন্ত।

ষ ওষষঁংরড়হ ুবধৎষু সফট কন্টাক্ট লেন্স। ওষষঁংরড়হ-এর মধ্যে দুই ধরনের কন্টাক্ট লেন্স রয়েছে।

ষ ওষষঁংরড়হ চষধহড় কোনো পাওয়ার নেই।

ষ ছয়টি শেডে পাওয়া যায়। ডিপ বস্নু, সফট বস্নু, গ্রে, ডিপ গ্রিন, সফট গ্রিন, সফট অ্যাম্বার ইত্যাদি। ফ্যাশনের জন্য পোশাকের সঙ্গে শেড বেছে পরা যায়।

ষ ওষষঁংরড়হ ঈড়ষড়ঁৎ রিঃয চড়বিৎ এগুলোতে পাওয়ার ও শেড একই সঙ্গে আছে। অর্থাৎ একের মধ্যে দুই পাওয়ার ও ফ্যাশন।

\হ

ব্যবহারবিধি

ষ সফট কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি।

ষ চোখে লেন্স লাগানো বা খোলার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, নখের আঁচড় লেগে লেন্স যেন ছিঁড়ে না যায়।

ষ সর্বোচ্চ ৮-১০ ঘণ্টা লেন্স পরা যাবে। লেন্স পরে ঘুমানো চলবে না।

ষ খেয়াল রাখতে হবে ডান ও বাম দিকের লেন্স যেন গুলিয়ে না যায়।

ষ লেন্স পরা অবস্থায় চোখ রগড়ানো যাবে না।

ষ খোলার পর একটি বিশেষ পাত্রে লেন্স সলিউশনে ডুবিয়ে রাখতে হবে। সলিউশনটি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হবে। পাত্রটিও পানি দিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। তবে কোনোভাবেই পানি দিয়ে লেন্স ধোয়া যাবে না।

ষ চোখ লাল হয়ে গেলে, ব্যথা হলে বা ময়লা জমলে লেন্স পরা বন্ধ করে সঙ্গে সঙ্গে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

একটা বিষয় সবসময় মনে রাখতে, কন্টাক্ট লেন্সের উপকারিতা অনেক বেশি হলেও এটি সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নয়। তাই চক্ষু বিশেষজ্ঞের নিয়মিত পরামর্শ ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়।

য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79353 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1