শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদরোগ অকাল মৃতু্যর কারণ

বয়সের সঙ্গে হৃৎপিন্ড ও ধমনির গঠনগত পরিবর্তনও হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। হৃদরোগ সাধারণত বয়স্কদেরই হয়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, তামাকজাতীয় দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে অনেকাংশে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।
নতুনধারা
  ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

হৃদরোগ বলতে সাধারণভাবে হৃৎপিন্ড, রক্তবাহী ধমনি ও শিরা, মস্তিষ্ক এবং বৃক্ক সম্পর্কিত রোগ বোঝায়। হৃদরোগের অনেক কারণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। বয়সের সঙ্গে হৃৎপিন্ড ও ধমনির গঠনগত পরিবর্তনও হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। হৃদরোগ সাধারণত বয়স্কদেরই হয়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, তামাকজাতীয় দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে অনেকাংশে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।

প্রতিটি মানুষের কাম্য দীর্ঘ কর্মময় জীবন। অকাল মৃতু্য কারোরই কাম্য নয়। হৃদরোগ অকাল মৃতু্যর অন্যতম কারণ। যারা হৃদরোগে আক্রান্ত এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে চান তাদের জন্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে সাতটি সহজ নিয়ম মেনে চলতে বলেছেন। বিষয় সাতটি হচ্ছে- (১) অধিকতর কর্মক্ষম থাকুন (২) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন (৩) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন। (৪) রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন (৫) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন (৬) শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন (৭) ধূমপান বর্জন করুন।

মূলকথা আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে হৃদরোগ, হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোক থেকে মুক্ত থাকা যায়। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচরণ। সুতরাং আর দেরি না করে আজ থেকেই নতুন জীবনযাপন পদ্ধতি শুরু করুন। যার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে লক্ষ্য নির্ধারণ। ইচ্ছা এবং পরিকল্পনামাফিক জীবনধারা পরিবর্তন করা, যার সুফল আপনি খুব তাড়াতাড়ি পেতে থাকবেন।

অধিকতর কর্মক্ষম থাকুন

নগরজীবনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে ব্যায়াম করার সময় করা দুরূহ। বিশেষত যারা সারাক্ষণ অফিস এবং ঘর-সংসারের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ব্যস্ত সময়ের মধ্যে কিছুটা সময় বের করে ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে কর্মক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়ে যাবে। ব্যায়াম করার এবং অধিকতর শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্পপন্থা খুবই কম। আপনার কর্মশীলতাই আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে। প্রতিদিন নূ্যনতম ৩০ মিনিট ব্যায়ামের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে। নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ কমায়, ভালো কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়ায়, বস্নাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিজের মধ্যে সুস্থতার অনুভূতি এনে দেয়।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও জীবনধারা হৃদরোগ মোকাবেলার একটি বড় হাতিয়ার। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা বিরাজমান। আমরা খাবার গ্রহণের ব্যাপারে অনেক সময়ই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন। মাছ মাংস গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন আছে ও অনেক মতপার্থক্য আছে। এসব মতপার্থক্য দূর করার জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসরণ করতে হবে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন

কোলেস্টেরল মূলত এক ধরনের নরম চর্বি জাতীয় দানাদার পদার্থ যা আমাদের রক্তে এবং দেহকোষে থাকে। যা কোষের আবরণে, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনে প্রচুর কোলেস্টেরল প্রয়োজন হয় এবং কোলেস্টেরল হরমোনও তৈরির উপাদান। কিন্তু অতি মাত্রার কোলেস্টেরল হৃদপিন্ড এবং রক্তনালীর অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়।

\হ

কীভাবে কোলেস্টেরল মাত্রা কমাবেন

ভালো সংবাদ এই যে, আপনি খুব সহজে কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ এবং স্টোকের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এটা কমাতে হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র বা পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন এবং জীবনযাপন পদ্ধতির তালিকা প্রস্তুত করে পরিবর্তন করতে হবে। যেসব খাদ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম সেসব খাদ্য গ্রহণ করা, স্যাচুরেটড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট কম খেয়ে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে রক্তের কোলেস্টেরল কমানো যায়।

রক্তের শর্করা (সুগার) নিয়ন্ত্রণে রাখুন

রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হার্টের অসুখ থেকে মুক্ত থাকা অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের চেয়ে দুই থেকে চারগুণ বেশি। ডায়াবেটিস চিকিৎসাযোগ্য রোগ কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার পরও হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তা খুবই সত্য যে অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগ হৃদরোগ ও রক্তনালী রোগেই মৃতু্যবরণ করেন। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চিকিৎসার মাধ্যমে (কায়িকশ্রম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ওষুধ সেবন) রক্তে সুগারের পরিমাপ স্বাভাবিক রাখা।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

উচ্চ রক্তচাপ হার্টঅ্যাটাকের বড় ধরনের ঝুঁকি। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে এবং আপনার মৃতু্যর কারণও হতে পারে। এটাকে 'নীরব ঘাতক' বলা হয় কারণ এটা অনেক সময় কোনো শারীরিক উপসর্গ ছাড়াই বিদ্যমান থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, খোদ আমেরিকায় প্রতি তিনজনের একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। শতকরা ২১ ভাগ মাুনষ জানেন না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ৬৯ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করলে মাত্র ৫৪ ভাগ তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারছেন। আমাদের বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো গবেষণা না থাকলেও বলা যায় আমাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।

শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন যাদের বয়স ২০ এবং তার চেয়ে বেশি তারাই ওজন আধিক্য বা স্থূলতাজনিত অসুখে ভোগেন (বিএমআই ২৫ কি. গ্রাম/স্কয়ার মিটার অথবা বেশি)। করোনারি আটারির অসুখের জন্য অতিরিক্ত ওজনকে প্রধানত একক ও প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। স্থূলতার কারণে কোমরে বেশি চর্বি জমে কোমরের মাপ বেড়ে গেলে তা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজনে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং ডায়াবেটিস রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। আপনারা যদি ওজন আধিক্য অথবা স্থূল হয়ে থাকেন তবে ওজন সীমিত রেখে বা ওজন কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।

ধূমপান বর্জন করুন

স্বাস্থ্যের ওপর ধূমপানের প্রভাব অল্প বয়সে মৃতু্যর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার অন্যতম উপায় ধূমপান পরিত্যাগ করা। ধূমপান অ্যাথোরোসক্লেরোসিস এবং অনেক ঈযৎড়হরপ অসুখ-বিসুখের কারণ। রক্তনালীতে চর্বি জমা হওয়াকে অ্যাথোরোসক্লেরোসিস বলে। হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমে করোনারি আটারি ডিজিজ সৃষ্টি হয় যা স্ট্রোক এবং মাওয়োকারডিয়াল ইনফারকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যাথোরোসক্লেরোসিস প্রতিরোধ করতে পারলে বা এটা কমাতে পারলে উপরোক্ত অসুখ থেকে মুক্ত থাকা যাবে

য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75283 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1