বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গভর্বতীর রক্তের গ্রæপ নেগেটিভ হলে

নতুনধারা
  ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

নীরার প্রথম সন্তানটি গভর্পাত হয়েছিল। দ্বিতীয়টি বাসায় পূণর্মাসে প্রসব হয়; কিন্তু বাচ্চাটি তিন দিন বয়সে মারা যায়। তৃতীয় সন্তানটিও বাসায় পূণর্মাসে প্রসব হয়েছিল, সে সন্তানটিও কেমন নিজীর্ব ছিল। খুব ফ্যাকাশে ও হলদে বণের্র ছিল এবং তিন দিনের দিন খুব ফ্যাকাশে ও জন্ডিসে মারা যায়। কিন্তু একটিবারও কোনো স্বাস্থ্যকমীর্ অথবা ডাক্তারের পরামশর্ নেয়নি। পরিবারও এ কাজে এগিয়ে আসেনি। নীরা চতুথর্বারের মতো গভর্বতী হয়েছে। এবার ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসেছে। ডাক্তার চেকআপ করে দেখলেন প্রায় সাত মাসের মতো গভর্বতী কিন্তু বাচ্চার কোনো হৃৎস্পন্দন বোঝা যাচ্ছে না। রক্ত, প্রস্রাব ও আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হলে বোঝা যায় নীরার রক্তের গ্রæপ ‘বি’ নেগেটিভ এবং গভের্র সন্তানটি মৃত। ডাক্তার রোগীকে হাসপাতালে ভতির্ রাখলেন। সকালে রোগীকে দেখার জন্য রাউন্ডে গিয়ে দেখা গেল রোগীর বিছানা খালি। খেঁাজ নিয়ে জানা গেল রোগীর লোকজন কাউকে না জানিয়ে রোগীকে নিয়ে চলে গেছে। হয়তো এক সময়ে প্রসব ব্যথা উঠে মৃত সন্তানটি বের হয়ে যাবে। কিন্তু কেন নীরার জীবনে বারবার এমন বিপযর্য় ঘটছে। নীরা ও তার পরিবারের কেউই সুখে নেই। ওই পরিবারের সবকিছু মিলিয়ে অশান্তি বিরাজ করছে। কেন এমন হলো। নীরার রক্তের গ্রæপ ‘নেগেটিভ’ ছিল এবং স্বামীর গ্রæপ ছিল ‘পজিটিভ’। ‘নেগেটিভ’ রক্তের গ্রæপের মহিলার গভের্র সন্তানের রক্তের গ্রæপ যদি ‘পজিটিভ’ হয় তখনই অনেক সময় বিপত্তি ঘটে। গভার্বস্থায় মা ও গভের্র শিশুটির রক্তের মধ্যে বিনিময় হয়। মা ‘নেগেটিভ’ হলে সন্তান প্রসবকালে পজিটিভ সন্তানের কিছুটা রক্ত মায়ের শরীরে চলে আসে। মায়ের রক্তের মধ্যে পজিটিভ এবং নেগেটিভ মিলাতে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় এবং মায়ের শরীরে আর এইচ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এতে মায়ের কোনো ক্ষতি হয় না। সমস্যা হয় সন্তানের। প্রথম সন্তানের যেহেতু অ্যান্টিবডি মায়ের শরীরে তৈরি হওয়ার আগেই ভ‚মিষ্ঠ হয়ে থাকে কাজেই প্রথম সন্তান অধিকাংশ সময় বেঁচে যায় এবং ‘পজিটিভ’ ‘নেগেটিভ’ প্রতিক্রিয়ার কোনো প্রভাব পড়ে না। কিন্তু যেহেতু মায়ের শরীরে আর এইচ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে এ অবস্থায় মা গভর্বতী হলে যদি গভের্র পজিটিভ শিশুর রক্তের লোহিত কণিকাকে ভেঙে ফেলে। কাজেই গভের্র শিশুটি আস্তে আস্তে রক্তস্বল্পতায় ভুগতে থাকে। শিশুর জন্ডিস হয়, শরীরে পানি আসে এবং আস্তে আস্তে শিশুর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি শুধু গভের্ই নয়, শিশু জন্মানোর পর আরো প্রকট হয়ে ওঠে। শিশু জন্মাতে পারে অতিরিক্ত রক্তস্বল্পতা, জন্ডিস বা শরীরে ও পেটে পানি নিয়ে অথবা মৃত অবস্থায় অধিকাংশ সময় জন্মের প্রথম দিনেই যদি শিশু ফ্যাকাশে ও হলুদ বণের্র হয় (জন্ডিসের কারণে) তাহলে বুঝতে হবে শিশুটি ভালোভাবে আক্রান্ত হয়ে গেছে। তখন দেরি না করে শিশুবিশেষজ্ঞের কাছে আসতে হবে। শিশুবিশেষজ্ঞ এক্সচেঞ্জ বøাড ট্রান্সফিউশনের (রক্ত বদলানো) মাধ্যমে শিশুটিকে বঁাচাতে সক্ষম হবেন। শিশুর অবস্থা কতটা নাজুক তা নিভর্র করছে কী পরিমাণে শিশুর লোহিত কণিকা আক্রান্ত হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সামান্য আক্রান্ত হলে বঁাচানো সম্ভব। শিশুর প্রথম ২৪ ঘণ্টার জন্ডিস বোঝাটা খুব গুরুত্বপূণর্। তবে এখানে মনে রাখতে হবে জন্মের দ্বিতীয় দিন থেকে সামান্য জন্ডিস শিশুর হতেই পারে সেটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং সাধারণ ৪-৫ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। শিশুকে পানি বা গøুকোজ খাওয়ানোর কোনোই প্রয়োজন নেই। শুধু মায়ের দুধ খেলে জন্ডিস তাড়াতাড়ি নিরাময় হয়। নারীর রক্তে গ্রæপ ‘বি নেগেটিভ’ ছিল; কিন্তু প্রথম তিনবার গভার্বস্থায় কোনো গভর্কালীন চেকআপ করানো হয়নি এবং রক্তের গ্রæপটাও জানা যায়নি। যদি জানা যেত তবে প্রত্যেকটি বাচ্চাকেই বঁাচানো সম্ভব হতো। গভর্পাত বা সন্তান প্রসবের পর বাচ্চার গ্রæপ পজিটিভ হলে মাকে যদি আর এইচ অ্যান্টিবডি ইমিউনোগেøাবিন দেয়া হতো তাহলে মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতো না এবং পরবতীর্ শিশুগুলোও আক্রান্ত হতো না। সুস্থ সবল শিশুই জন্ম নিত। নীরা মা ডাক শুনতে পেত এবং নীরার পরিবারের সবাই সুখ-শান্তিতে থাকতে পারত।

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<7391 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1