বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষাকালীন রোগব্যাধি ও তার প্রতিকার

বর্ষার তাপমাত্রায় সর্দির ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি ঘটে, ফলে মানুষ সহজেই আক্রান্ত হয়। সর্দিকাশি যেহেতু ভাইরাস থেকে হয়, তাই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তাই সর্দি লাগলে বেশি করে পানি খান, গরম পানির ভাপ নিন, ভিটামিন-'সি'সমৃদ্ধ ফলমূল খান। গলা খুসখুস করলে হাল্কা গরম পানিতে লবণ ফেলে গড়গড়া করুন।
নতুনধারা
  ২৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

বর্ষার আগমনীতে কার না হৃদয় নেচে উঠে? প্রাকৃতিক পালাবদলে এসেছে বর্ষা সঙ্গে ঘন কালো মেঘ, অঝোরে বৃষ্টি; এসেছে কদম- তার পিছু পিছু হাজির হয়েছে কিছু বেরসিক অসুখ-বিসুখ।

বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজলেই সর্দিকাশি হয় এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আসলে বর্ষার তাপমাত্রায় সর্দির ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি ঘটে, ফলে মানুষ সহজেই আক্রান্ত হয়। সর্দিকাশি যেহেতু ভাইরাস থেকে হয়, তাই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তাই সর্দি লাগলে বেশি করে পানি খান, গরম পানির ভাপ নিন, ভিটামিন-'সি'সমৃদ্ধ ফলমূল খান। গলা খুসখুস করলে হাল্কা গরম পানিতে লবণ ফেলে গড়গড়া করুন।

টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি পানিবাহিত অসুখগুলো এড়াতে রাস্তার পাশের খোলা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পানি বিশুদ্ধভাবে ফুটিয়ে পান করুন। কোনো কিছু খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।

ডায়রিয়া হলে আগে থেকে সাবধান হোন। কারণ ডায়রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। শরীর থেকে লবণ পানি বেরিয়ে যায়। তাই ডায়রিয়া হলে বারবার খাবার স্যালাইন, চা ও তরল খান। ২৫০ মিলি বিশুদ্ধ পানিতে ২ চা চামচ চিনি ও এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খাবার স্যালাইন বানিয়ে নিন। স্যালাইনের স্বাদ যেন কখনোই চোখের জলের চেয়ে নোনতা না হয়; তাই চিনি দেয়ার আগে লবণ মিশিয়ে স্বাদ বুঝে নিন। খেয়াল রাখতে হবে বর্ষায় যেন আশপাশে পানি না জমে, কারণ জমা পানিই হলো মশার আঁতুড় ঘর। এতে মশার কামড় থেকে যেমন বাঁচবেন, তেমনিই প্রতিরোধ করা যাবে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু কিংবা বর্তমান সময়ের আতঙ্ক-চিকুনগুনিয়াকেও। প্রয়োজনে মশারি টানিয়ে ঘুমান।

বর্ষায় সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সুষম বা ব্যালেন্সড ডায়েট গ্রহণ করা। কেননা, এ সময় শরীরের হজম ক্ষমতা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এ সময় খাবার-দাবারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

টাটকা ও ফ্রেশ খাবার খেতে হবে

ষ খাবার রান্নার সময় হলুদ, মরিচ, ধনিয়াগুঁড়া ব্যবহার করুন। এসব মশলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ষ এ সময় মাছ-মাংসের চেয়ে বরং সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান। এ সময় বিভিন্ন জাতের প্রচুর দেশি ফল পাওয়া যায়। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' ও অন্যান্য উপকারী ভিটামিন এবং মিনারেলস। যা বর্ষার রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে লড়তে শরীরকে সাহায্য করে।

ষ রান্নার আগে যে কোনো সবজি ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করুন।

ষ এ সময় সুস্থ থাকতে বেশি করে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে পারেন শরবত, ঘরে তৈরি তাজা ফলের রস, লেবুর পানি। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন সব সময় পানির বোতল সঙ্গে নিন। বাইরের খোলা পানি কখনো খাবেন না। এ ছাড়া হালকা গরম আদা-চা এ সময় বেশ কার্যকর। আষাঢ়ের বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে একরাশ রোগবালাই- এই নিয়ে আসে বর্ষা মৌসুম। আর এ সময় প্রতিদিনের খাবারে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে রোগবালাই থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ মিলবে; পাশাপাশি মিলবে সুস্থ সুন্দরভাবে বর্ষা যাপনের নিশ্চয়তা।

যেসব রোগ বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি হয়

প্রতি দিনই প্রায় অন্তত এক ঘণ্টা আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হয়। ভ্যাপসা গরম থেকে বৃষ্টি স্বস্তি দিলেও জমা পানি, ঠান্ডা লাগা, জ্বরের মতো সমস্যাও বাড়ছে। বৃষ্টি যতই উপভোগ করুন, বর্ষায় রোগের হাত থেকে সাবধান থাকতেই হয়। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিন, কোন ধরনের রোগগুলো বর্ষায় সবচেয়ে বেশি হয়-

১। ম্যালেরিয়া

বর্ষায় সবচেয়ে বেশি যে রোগ দেখা যায় তা হলো ম্যালেরিয়া। বর্ষার জমা পানি থেকে মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া, বাচ্চা থেকে বড় সবারই হতে পারে। এই ম্যালেরিয়ায় যদি ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায় তা থেকে মৃতু্যও হতে পারে।

\হ

২। ডেঙ্গু

ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। বর্ষায় আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রভাবে বহু মানুষের মৃতু্য হয়। অতিরিক্ত জ্বর, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা,র্ যাশ বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

৩। ডায়রিয়া

বর্ষায় বাইরের খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। বাইরের খোলা খাবার, অপরিশোধিত পানি থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। শিশুদের ডায়রিয়া থেকে ডিহাইড্রেশন হয়ে মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে।

\হ

৪। চিকুনগুনিয়া

সংক্রমিত অ্যাডিস অ্যালবোপিকটাস মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয়। বর্ষার জমা জলে এই মশা ডিম পাড়ে ও দিনের আলোয় কামড়ায়।

৫। টাইফয়েড

সালমোনেলা টাইফোসা ভাইরাসের প্রকোপ বর্ষাকালে খুব বেড়ে যায়। অপরিশোধিত পানি, অপরিচ্ছন্ন পানি থেকে টাইফয়েডের সংক্রমণ ছড়ায়। দীর্ঘ সময় তাপমাত্রা না নামলে টাইফয়েড থেকে হয়ে যেতে পারে বড়সড় ক্ষতি।

৬। ভাইরাল ফিভার

যে কোনো মৌসুমেই ভাইরাল ফিভার হতে পারে। তবে বর্ষায় ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হয়। জ্বর, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতার সঙ্গে এই জ্বর ৩-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

\হ

৭। কলেরা

পরিচ্ছন্নতার অভাব ও দুর্বল হাইজিনের কারণে খাবার জল সংক্রমিত হলে দ্রম্নত হারে ছড়িয়ে পড়ে কলেরা। কলেরা ভয়াবহ আকার ধারণে করলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।

৮। জন্ডিস-

বর্ষায় অপরিশোধিত পানি থেকে হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। হেপাটাইটিসের সংক্রমণে রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস দেখা দেয়। এ সময় বাইরের পানি ভুলেও খাবেন না।

বর্ষার দুর্ভোগ : সঁ্যাতসেঁতে পরিবেশে বাড়ে রোগ

বর্ষায় বাসার দেয়াল বা জিনিসপত্র যদি সঁ্যাতসেঁতে হয়ে যায় আর তাতে যদি ছত্রাক পড়ে তাহলে সেসবের কাছাকাছি বাস করা আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে শ্বাসনালীতে সমস্যা যেমন, শ্বাসনালীর প্রদাহ, অ্যালার্জি, বা শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়াও দীর্ঘ সময় এ রকম কোনো জায়গায় বসবাস আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে বহু গুণে।

এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারা?

ষ শিশু

ষ বয়স্ক ব্যক্তি

ষ যাদের ত্বকের সমস্যা যেমন অ্যাকজিমা আছে

ষ যাদের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট আছে

ষ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম

এটা আমাদের ক্ষতি করে কিভাবে?

ছত্রাক থেকে উৎপন্ন হয় অ্যালার্জি উদ্রেগকারী অ্যালার্জেন আর বেশ কিছু ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ। এগুলোর ভেতরে থাকা স্পোর বা বীজ গুটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকলে অ্যালার্জি হতে পারে, যার কারণে নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ত্বকের্ যাশ শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

ঘরবাড়ি সঁ্যাতসেঁতে হওয়া বা ছত্রাক পড়ার কারণ কি?

বর্ষাকালে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতাই এর কারণ। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, রোদের অভাব, পাইপ ফেটে বা চুঁইয়ে পানি পড়ার কারণে ঘরের দেয়াল বা ছাদে ছত্রাক জন্মে। শুধু পুরনো বাড়িতেই নয়, এসব কারণ নতুন বাড়িতেও ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়।

দেয়ালে ছত্রাক পড়লে কি করবেন?

ষ হাতে পস্নাস্টিকের দস্তানা পরে আর নাকে-মুখে মাস্ক পরে জানালা খোলা থাকা অবস্থায় দেয়াল পরিষ্কার করতে হবে।

ষ সাবান পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ভালোভাবে ছত্রাক আক্রান্ত দেয়াল মুছে ফেলতে হবে। ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়লে এর স্পোর বা বীজ গুটি অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে।

ষ এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে দেয়াল মুছে নিয়ে ফ্যান চালু করে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

ষ শুধু আক্রান্ত এলাকা নয়, সম্ভব হলে সমস্ত ঘরই একবারে পরিষ্কার করে ফেললে ভালো হয়।

ষ পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত কাপড়টি ফেলে দিতে হবে।

ছত্রাক এড়ানোর উপায়

ষ অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি ছাদে যেন জমে না থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

ষ ঘরবাড়ি সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে যেন কোথাও পানি না জমে, সব ঘরে যেন পর্যাপ্ত বাতাস ঢোকে।

ষ সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য বাড়ির সঙ্গের সমস্ত নালা পরিষ্কার করতে হবে।

ষ বাথরুমের দেয়াল ও মেঝে শুকনো রাখতে হবে।

ষ কাপড় ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ রেখে দেয়া যাবে না

ষ ঘরের ভেতরে খুব বেশি গাছ রাখা যাবে না। আর গাছ থাকলে তা খোলামেলা জায়গায় রাখতে হবে।

ষ বর্ষাকাল আসার আগেই বাড়ির সমস্ত পানির পাইপ পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে কোনো লিক আছে কি না।

ষ শোয়ার ঘরের জানালা প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিটের জন্য খোলা রেখে আলো বাতাস প্রবেশ করাতে হবে। এ সময় ফ্যান চালু রাখতে হবে।

ষ ঘরের ভেতরে কাপড় না শুকানোই ভালো।

ষ রান্নাঘর এবং বাথরুমে একজস্ট ফ্যান ব্যবহার করা।

ষ এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করলেও দিনের কিছুটা সময় জানালা খুলে ফ্যান চালু রেখে ঘরে আলো বাতাস ঢুকতে দেয়া।

ষ কার্পেট যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা, আর ব্যবহার করলে তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59525 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1