শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ে ও মানসিক ব্যাধি

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ১৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

বিয়ে শুধু একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে শারীরিক বন্ধন সৃষ্টি করে না, মানসিকভাবেও একে অপরের সঙ্গী হয়। যেহেতু দুইজন দুই পরিবার থেকে আসে, তাই তাদের মানসিকতা ভিন্ন হতে বাধ্য। তবে বিয়েতে পুরুষের চেয়ে নারীর মনে বেশি চাপ পড়ে। কারণ এ ব্যবস্থায় পুরুষ গ্রহণ করে আর নারী ত্যাগ করে আসতে হয় তার দীর্ঘ জীবনের গন্ডি। নারী সংসারে প্রবেশ করার পর সেই সংসারের রীতিনীতি, চালচলন, ব্যবহার ইত্যাদির সঙ্গে নিজেকে আবার খাপ খাইয়ে নিতে হয়। একক পরিবারে এ সমস্যা কম থাকে, যৌথ পরিবারে বেশি থাকে। শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও দেবর অনেকের মন জুগিয়ে চলতে হয়। ফলে অহরহ সৃষ্টি হয় মানসিক দ্বন্দ্ব। আর এ মানসিক দ্বন্দ্ব বিবাহের প্রথম দিকেই প্রবল থাকে। মানসিক টানাপড়েন বা দ্বন্দ্বের জন্য স্ত্রী চান স্বামীর সহযোগিতা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বামী যদি একতরফা হয়ে যান তাহলে সমস্যা বৃদ্ধি হতে বাধ্য। মানসিক দ্বন্দ্ব কমানোর জন্য স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে স্বামীকে একটি সমঝোতা শক্তি হিসেবে অবতীর্ণ হতে হয়। কিন্তু স্বামী যদি কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উদাসীন থাকেন বা এড়িয়ে যান এবং স্ত্রী ও স্ত্রীর মানসিক দ্বন্দ্বগুলোর সমাধান করতে না পারেন তাহলে তিনি মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। বিষাদগ্রস্ততা, দুশ্চিন্তা, হিস্টিরিয়া ইত্যাদি নিউরোটিক ডিসঅর্ডার হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী কম আবেগপূর্ণ হয়ে যান। তিনি সংসার ধর্মকে তার কর্তব্য পালন বলে মনে করেন সংসারকে নিজের ভাবতে কষ্ট হয়। ফলে আপাত দৃশ্যমান সংকট দ্বন্দ্ব সব সময় তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এই মনোসামাজিক সমস্যার একমাত্র সমাধান বিশ্লেষণমূলক দাম্পত্য মনোচিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে জড়িত সবার সহযোগিতা ছাড়া রোগ ভালো করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

অন্যপক্ষে আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা, বিয়ে দিলেই রোগ ভালো হয়ে যাবে। আত্মীয়স্বজন রোগের উপসর্গগুলোকে 'বিয়ের বাহানা' বলে ভাবেন এবং অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে দেন। ফলে সমস্যা আরো জটিল হয়ে যায়। কারণ বিয়ের জন্য যে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা প্রয়োজন তা রোগীর পক্ষে করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই বিয়েপরবর্তী জটিলতা রোগকে আরো বাড়িয়ে তোলে। কতগুলো ক্ষেত্রে বিয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন স্বামী বা স্ত্রীর সহানুভূতিশীল সহযোগিতা ও অপরিসীম ধৈর্য।

মানসিক রোগীদের কি বিয়ে করা যাবে?

প্রশ্নের উত্তর বিতর্কিত। মৃদু মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা ততটা জটিল নয়। তবে যারা গুরুতর মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে কতগুলো দিক লক্ষ্য করা প্রয়োজন। যেমন- রোগী স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আত্মনির্ভরশীল কি না, রোগ কতটুকু জটিল এবং রোগের কারণে রোগী কতটুকু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, বিয়েপরবর্তী দাম্পত্য কর্তব্য ও ক্রিয়াদি সম্পাদনে সক্ষম কি না, অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক ক্রিয়াদি সম্পাদনে সক্ষম কি না, দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা কতটুকু ইত্যাদি।

অনেকের মতে জটিল, পুরনো, গুরুতর মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিয়ে না করাই উচিত। কারণ তারা সাধারণত উপরিউক্ত শর্তাবলি পালন করতে অক্ষম হয়। গুরুতর মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বংশানুক্রমিকভাবে রোগ বিস্তারের প্রবণতা থাকে। আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। এ ক্ষেত্রে দু'টি রোগের কথা বিশেষভাবে উলেস্নখ করা যায়। যেমন সিজোফ্রেনিয়া ও ম্যানিক ডিপ্রেসিভ সাইক্রোসিস। যেহেতু রোগের পরিণতি সঠিকভাবে জানা যায়নি সেহেতু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত সাপেক্ষে বিয়ে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তবে পাত্রপাত্রী এবং আত্মীয়স্বজনের এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা প্রয়োজন। এ জাতীয় মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীর আত্মীয়স্বজনের রোগ গোপন রেখে বিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী দাম্পত্য জীবনে আবার রোগাক্রান্ত হলে বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি এমনকি বিয়েবিচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পাত্র ও পাত্রী দুই পক্ষেরই খোলামেলা আলোচনা করা আবশ্যক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54224 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1