বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
রোজা

ডায়াবেটিক রোগীর সতর্কতা

বিশ্বে প্রায় ৫০ মিলিয়নের বেশি ডায়াবেটিক রোগী প্রতি বছর রমজান মাসে রোজা করে থাকেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বছরে এই এক মাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস করা একটি পবিত্র আবশ্যিক কাজ। কিন্তু নতুন পুরাতন ডায়বেটিক রোগীরা এই রোজা পালন করতে গিয়ে নানা বিভ্রান্তি ও প্রশ্নের সম্মুখীন হন। যেমন- এক. ডায়াবেটিক রোগীরা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারবেন কি-না, দুই. রোজার দিনে ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন কীভাবে দেয়া যাবে, তিন. রোজার সময় গস্নুকোমিটার যন্ত্র দিয়ে রক্তের শর্করা মাপলে রোজা ভেঙে যাবে কি-না, চার, রোজা রেখে ব্যায়াম করা যাবে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ওঠে এই সময়। আজ আমরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করব।
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ০৮ মে ২০১৯, ০০:০০

রোজা কি ঝুঁকিপূর্ণ?

বড় ধরনের সমস্যা বা ঝুঁকি না থাকলে একজন ডায়াবেটিক রোগী আর সবার মতোই রোজা করতে পারবেন। গবেষকরা কয়েক ধরনের ডায়াবেটিক রোগীর জন্য রোজা রাখা 'অতি ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচনা করে থাকেন। তারা হলেন- টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগী, গর্ভবতী ডায়াবেটিক, যারা দিনে তিন বা চারবার ইনসুলিন গ্রহণ করেন, যাদের সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক হাইপোগস্নাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা স্বল্পতা) বা মারাত্মক হাইপারগস্নাইসেমিয়া কোমা (রক্তে শর্করা আধিক্যজনিত কোমা) হয়েছে, যারা হাইপোগস্নাইসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন নন, ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্যান্য জটিলতা যেমন কিডনি, যকৃত, হৃদযন্ত্রের জটিলতা রয়েছে বা ডায়ালাইসিস করছেন ইত্যাদি। এ ছাড়া ইনসুলিন ও সালফোনিলইউরিয়া ওষুধ ব্যবহারকারীরা ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় পড়েন। তবে 'অতি ঝুঁকিপূর্ণ' বাদে বাকিরা সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে রমজান মাসে রোজা রেখেও ভালো থাকতে পারেন।

খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামে পরিবর্তন

রমজান মাসে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও খাবার সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। যেহেতু ডায়াবেটিক রোগীরা একটি সুনিয়ন্ত্রিত ও সঠিক সময়সূচির খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন, তাই তাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বেলায় যে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করা উচিত তা হলো:

-দৈনন্দিন ক্যালরির পরিমাপ আগের মতোই থাকবে, কেবল সময়সূচি বা উপাদান পরিবর্তিত হতে পারে।

-শেষ রাতে সেহরি খাওয়া আবশ্যিক ও তা গ্রহণ করতে হবে যথাসম্ভব দেরি করে। সেহরিতে জটিল শর্করাসহ সব ধরনের উপাদান রাখতে হবে কেননা এই খাবারই দিনভর শক্তি জোগাবে।

-ইফতারে এক সঙ্গে প্রচুর খাবার না খেয়ে ধাপে ধাপে খান। মিষ্টি জাতীয় ও ভাজা পোড়া তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন। যেমন কাঁচা বা সেদ্ধ ছোলার সঙ্গে শশা টমেটোর সালাদ. চিড়া-টক দই, ঘুগনি বা চটপটি, সু্যপ, ফল ইত্যাদি। সরবতের বদলে ডাবের পানি বা লেবু পানি। একটি কি দুটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

-ইফতার ও সেহরির মাঝে নৈশভোজে রুটি বা অল্প ভাত খাওয়া যেতে পারে।

রমজান মাসে রোজা রেখে দিনের বেলা বেশি ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম না করাই ভালো। সন্ধ্যের পর চাইলে কেউ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তারাবির নামাজ পড়লে অতিরিক্ত ব্যায়াম না করলেও চলে।

ওষুধ বা ইনসুলিন

রোজা মাসে ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচিতেও পরিবর্তন আসবে। নতুন খাদ্যসূচির সাথে মিলিয়ে এই পরিবর্তন করা হয়।

-যারা মেটফরমিন, গিস্ননাইড, ডিপিপি ৪ ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ খান, তাদের তেমন কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কেবল ওষুধের সময়টাকে পাল্টে নিন।

-যারা সালফোনিল ইউরিয়া গোত্রের ওষুধ যেমন-গিস্নক্লাজাইড, গিস্নবেনক্লেমাইড, গিস্নমেপেরোইড ইত্যাদি ওষুধ খান তারা সকালের ডোজ পূর্ণ মাত্রায় ইফতারে এবং রাতের ডোজ অর্ধেক মাত্রায় শেষ রাতে গ্রহণ করতে পারেন।

-যারা দুইবেলা ইনসুলিন নেন, তারাও সকালের ডোজ পূর্ণমাত্রায় ইফতারে এবং রাতের ডোজ অর্ধেক মাত্রায় সেহরীতে গ্রহণ করতে পারেন।

-যারা আধুনিক বেসাল-বোলাস ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা বেসাল বা দীর্ঘ সময় কার্যকরী ইনসুলিন পূর্বের মাত্রায় আগের সময়ে (যেমন রাত ১০টায়) গ্রহণ করবেন। আর বোলাস বা দ্রম্নত কার্যকরী ইনসুলিন গ্রহণ করবেন ইফতারে, নৈশভোজে ও অর্ধেক মাত্রায় সেহরিতে। নৈশভোজ গ্রহণ না করলে ওই সময় ইনসুলিন না নিলেও চলবে।

-চিরায়ত বা কনভেনশনাল ইনসুলিনের তুলনায় আধুনিক অ্যানালগ ইনসুলিন যেমন-ডেটেমির, ডেগলুডেক, গস্নারজিন, লিসপ্রো, অ্যাসপার্ট বা গস্নুলাইসিন জাতীয় ইনসুলিনে শর্করা স্বল্পতা হবার ঝুঁকি কম। তাই সম্ভব হলে পুরাতন ইনসুলিন পাল্টে আধুনিক ইনসুলিন গ্রহণ করুন।

-ওষুধের মাত্রার এই পরিবর্তন অনেকটাই রমজানে আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠা নামার ওপর নির্ভর করবে। তাই মাঝে মাঝে রক্তে শর্করা পরিমাপ করুন ও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। য়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<48347 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1