শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকির সঙ্গে বসবাস

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ মারা যান হৃদরোগ সংক্রান্তের কারণে। এর প্রায় ৮০ শতাংশ লোকই স্বল্পোন্নত বা অনুন্নত দেশের অধিবাসী। হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ, রক্তে কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা। কোলেস্টেরল, যা চোখে দেখা যায় না বা অনুভবও করা যায় না অথচ প্রতি মুহূর্তে ধমনিতে জমা হতে থাকে ধীরে ধীরে, যা জীবনের জন্য ঝুঁকিকর। ছোটবেলা থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়- কারো দ্রম্নত, কারো বা ধীর গতিতে। রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক দুনিয়াজুড়ে শারীরিক সমস্যা। বাংলাদেশের প্রায় তিন শতাংশ লোকের রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল আছে। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত মাঝারি গড়নের, তাদের হৃৎপিন্ডের আকারও আনুপাতিকহারে ছোট। যেসব ধমনি হৃৎপিন্ডে রক্তে সরবরাহ করে সেগুলো আনুপাতিকহারে সরু। সুতরাং, এই সরু ধমনিতে কোলেস্টেরল জমলে সহজেই রক্ত চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অকালে হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) এমনকি মৃতু্যর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কোলেস্টেরল সাধারণত রক্ত ও দেহকোষে পাওয়া যায়। যদিও কোলেস্টেরলকে আমরা সব সময়ই খারাপ চোখে দেখার চেষ্টা করি। আসলে ভালো মন্দ-মিলিয়েই কোলেস্টেরল।

সুস্বাস্থ্যের জন্য কোলেস্টেরলের প্রয়োজন আছে। এটা শরীরের শক্তির উৎস, মস্তিষ্ক এবং বিভিন্ন কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের পরিমাণ মোট কোলেস্টেরলের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। এরা রক্ত থেকে কোলেস্টেরলকে যকৃতে নিয়ে আসে। এতে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। ভালো কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। এর পরিমাণ কমে গেলে হৃদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমতে থাকে। তাতে রক্তবাহী নালি সরু হয়ে যায়। এ ধরনের কোলেস্টেরলের পরিমাণ রক্তে বেড়ে যাওয়া মানে হৃদরোগ তথা অকাল মৃতু্যর আশঙ্কা বেড়ে যাওয়া।

রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ প্রধানত দুটি। প্রথমত, জেনেটিক, দ্বিতীয়ত, কিছু রোগের কারণে যেমন ডায়াবেটিস, মোটা স্বাস্থ্য, হাইপোথাইরয়েডিজম, যকৃত বা বৃক্কের অসুখ। চোখের পাতায়, হাতের পেছনে, কনুই বা গোড়ালিতে কোলেস্টেরল জমতে পারে, যা সহজেই দেখা যায়। এগুলো রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ইঙ্গিত করে। তবে কোলেস্টেরলের পরিমাণ জানতে হলে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন।

সাধারণত ১২ ঘণ্টা খালিপেটে থেকে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কোলেস্টেরলের পরিমাণ ব্যক্তি ও লিঙ্গ ভেদসহ মেয়েদের মাসিক, গর্ভধারণ এবং কিছু ওষুধের কারণে হেরফের হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৪.৫ মিলি/লিটার রাখাটা জরুরি।

এর চেয়ে কমাতে পারলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান উপায় হলো, 'নিয়মিত জীবনযাপন করা'।

এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, যেমন কম চর্বিযুক্ত খাবার, কম লবণ ব্যবহার, পশুর চর্বি সম্পূর্ণ বর্জন, 'লাল মাংস (গরু, খাসি, ভেড়া মহিষ) বর্জন বা পরিমিত খাওয়া, ধূমপান সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়া, তাজা ফল ও শাকসবজি বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো দরকার।

কারো যদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আজকাল বাজারে এ জন্য কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায়।

তবে নিজে নিজেই ওষুধ খেতে যাবেন না- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে, দীর্ঘদিন বাঁচবেন, সঙ্গে অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37852 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1