বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লবণ

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

কথায় বলেÑ ‘নুন খাই যার, গুণ গাই তার। অথার্ৎ নুনের মূল্য অসাধারণ। কিন্তু এখন কারও নুন খেলেই তার গুণ গাওয়া যাবে কিনা, এটা নিয়ে একটু দ্বিধাদ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছে। কারণ বেশি নুন শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লবণের বিশেষ ভ‚মিকা রয়েছে। খাবারে অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য হিতকর নয়। লবণ বেশি খেলে রক্তরসের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় বলে মনে করা হয়। এজন্য সুষম খাবারে লবণের পরিমাণ সীমিত থাকা উচিত। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আলুনি খাবার অনেকের মুখে রোচে না। রূপকথার গল্পে রাজা তার তিন কন্যাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তাকে কে কেমন ভালোবাসে? ছোট রাজকন্যা তাকে নুনের মতো ভালোবাসে শুনে রাজা খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। পরে ঘটনাচক্রে ছোট রাজকন্যা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, নুনের মতো ভালোবাসাই উত্তম। কিন্তু এ রূপকথার গল্পের রাজার উচ্চ রক্তচাপ ছিল কিনা, আমরা তা জানতে পারিনি। তবে এ কথা নিশ্চিত বতর্মান সময়ের কন্যারা তাদের পিতৃদেবকে আর যাই হোক লবণের তুল্য ভালোবাসায় নোনতা করবে না। বরং উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত পিতাদের খেতে বসে একটুখানি বাড়তি পাতের লবণের জন্য জায়া-কন্যাদের সতকর্ শ্যেন দৃষ্টি এড়িয়ে খেতে হয়।

খাবার লবণের বৈজ্ঞানিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। আমরা দৈনিক গড়ে প্রায় আড়াই গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করি। এ পরিমাণ সোডিয়াম ৬ গ্রাম বা ১ চা চামচ খাবার লবণের সমতুল্য। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। এটা ভাত-তরকারি রান্না এবং পাতের লবণসহ হিসাব করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন পাতের লবণ না খেয়ে তরকারিতে বেশি পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা উত্তম। কিন্তু তা সত্য নয়। আবার অনেকে লবণ ভেজে খেয়ে থাকেন। লবণ যেভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন একজন সুস্থ মানুষের সাবির্কভাবে আধা চা চামচের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর আরও কম লবণ গ্রহণ করা ভালো।

অনেকে সামুদ্রিক লবণের বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের বিকল্প লবণ ব্যবহার করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিকল্প লবণে পটাশিয়াম ক্লোরাইড থাকে। অনেকের স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্লোরাইড ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরমাশর্ করে নেয়া ভালো।

আজকাল আধুনিক ডিপাটের্মন্টাল স্টোর বা চেইন শপগুলোয় হিমায়িত খাবার কিংবা কৌটাজাত ফলমূল এবং সবজি বিক্রি হয়। মাছ, মাংস, রান্না করা ভাত, রুটি, পানতা নান ইত্যাদি হরেকরকম খাবার এভাবে প্রস্তুতকৃত সংরক্ষিত অবস্থায় ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়। কমর্ব্যস্ততার কারণে কিংবা যারা হোস্টেল, মেস, হল কিংবা ডরমেটরিতে বাস করেন তাদের জন্য এসব রেডিমেড খাবার খুবই আকষর্ণীয়। গৃহবধূর হাতে রান্না করা সুস্বাদু গরম তরকারি আর ভাত যাদের নিয়তিতে নেই; নিঃসঙ্গ জীবনে মোড়কজাত নানাবিধ প্রস্তুত খাবার তাদের জন্য দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই। কম লবণযুক্ত ঘোল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু মোড়কজাত খাবারের ব্যাপারে সাবধান। খাবার সংরক্ষণের জন্য নানাবিধ রাসায়নিক উপাদানের কথা বাদ দিলেও এসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এজন্য মোড়কজাত খাবার কেনার আগে মোড়কের গায়ে উল্লিখিত লবণের পরিমাণ দেখে নেয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আধ কাপ পরিমাণ হিমায়িত মটরশুঁটিতে ১২৫ মি. গ্রাম লবণ থাকে। সমপরিমাণ কৌটাজাত মটরশুঁটিতে ৩৮০ মি. গ্রাম লবণ থাকে। অথার্ৎ কৌটাজাত মটরশুঁটিতে হিমায়িত মটরশুঁটির চেয়ে তিনগুণ বেশি লবণ থাকে। এ রকম সব সংরক্ষিত খাবারের প্যাকেটে লবণের পরিমাণ দেখে নিলে বোঝা যায় আমরা কতটুকু লবণ গ্রহণ করছি।

লবণ ছাড়া যাদের কাছে খাবার বিস্বাদ মনে হয় তারা বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন এবং পরিমাণ মতো আদা, মরিচ, রসুন, লবঙ্গ, গোলমরিচ, ব্যাসিল, পারসলি, পেস্তা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

দৈনিক খাবারের লবণ স্বাভাবিকের চেয়ে অধের্ক করে দিলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর রক্তচাপ ৬/৩ মি. মি. পারদ চাপ কমে যায়। অবশ্য এটার মাত্রা এবং স্থায়িত্ব সম্পকের্ প্রশ্ন রয়েছে। খাবারে লবণের পরিমাণ খুব কমিয়ে দিলে অনেক ওষুধের কাযর্কারিতা কমে যায়। আবার অতিরিক্ত লবণ খেলে ও উচ্চ রক্তচাপের কোনো কোনো ওষুধ ঠিকমতো কাজ করে না। এজন্য সব উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে লবণ কম খেতে দিলেও সমস্যা হতে পারে। অতএব এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের সতকর্ বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36806 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1