শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নীরব ঘাতক স্কে¬রোডামার্ বা ত্বকের বাত

মানবদেহে ছয় শতাধিক বাতরোগ হতে পারে, এর মধ্যে স্কে¬রোডামার্ অন্যতম একটি। তবে কারণ-আজানা এই বাতরোগটিকে নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ
  ১৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

স্কে¬রোডামার্ একটি কারণÑঅজানা বাতরোগ। স্কে¬রো শব্দের অথর্ শক্ত, ডামার্ অথর্ ত্বক বা চামড়া, অথার্ৎ স্কে¬রোডামার্ বলতে ক্রমশ ত্বক শক্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের চামড়ার বাত রোগকে বুঝায়। তবে শক্ত চামড়ার পাশাপাশি যদি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়, সেটিকে সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস বলে। সিস্টেমিক স্কে¬রোসিসও এক প্রকার বাতরোগ, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এটি প্রধানত শরীরের ভিতরের অঙ্গে বা ত্বকে যে সংযোগকারী টিস্যু বা কানেক্টিক টিস্যু রয়েছে সেগুলোকে আক্রান্ত করে থাকে। এই রোগে ত্বকের ‘ডামিের্স কোলাজেন’ নামক এক ধরনের আমিষ অধিক মাত্রায় জমা হওয়ার ফলে প্রথমদিকে হাত ও পায়ের পাতা, পরে তালুসহ আঙ্গুলগুলো ফুলে গিয়ে ত্বক মোটা ও শক্ত হওয়া শুরু করে।

কারও কারও ক্ষেত্রে এটি হাতের কনুই এবং পায়ের হঁাটু পযর্ন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। কখনো বা হাতের কনুই ও হঁাটুর উপরিভাগসহ মুখমÐল, বুক এবং পিঠের চামড়া আক্রান্ত করতে পারে। রোগটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ঠান্ডা পানি বা আবহাওয়ায় আঙুলের মাথার রঙের পরিবতর্ন যেমন; নীল বা ফ্যাকাশে বণর্ ধারণ করে। যাকে রেনোএস ফেনোমিনা বলে। পরবতীের্ত আঙুলের মাথাগুলো চিকন হয়ে যাওয়া ও আঙুলের মাথায় ক্ষত তৈরি হয়ে থাকে।

যাযাদি : এটিকে ত্বক বা চামড়ার বাতরোগ বলা যাবে কিনা?

সত্যিকার অথের্ এটিকে শুধু ত্বক বা চামড়ার বাত বলাটা সঠিক হবে না, কারণ এটি প্রধানত বা প্রাথমিকভাবে ত্বককে আক্রান্ত করলেও অনেক রোগীর ত্বকের পাশাপাশি শরীরের ভিতরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন; ফুসফুস, হৃৎপিÐ, কিডনি, পাচনতন্ত্রকেও আক্রান্ত করে থাকে।

ফুসফুস আক্রান্ত হলে রোগীর সাধারণত অল্প পরিশ্রমেই হঁাপিয়ে ওঠা ও শুষ্ক খুসখুসে কাশি হতে পারে। খাদ্যনালী এবং পাকস্থলি আক্রান্ত হলে বুক জ্বালাপোড়া (এসিড রিফ্লাক্স) করতে পারে। গলায় খাবার উঠে আসা বা আটকে যাওয়া অনুভব হতে পারে।

যাযাদি: নারী-পুরুষের মধ্যে কাদের বেশি হয়ে থাকে?

পুরুষের তুলনায় মহিলারা সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেটির অনুপাত ৪:১ থেকে ৬:১।

যাযাদি: সারাবিশ্বে ও দেশে এ রোগীর সংখ্যা কত? দেশে কোনো জরিপ বা গবেষণা আছে কিনা?

সারাবিশ্বে এই রোগীর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে চালানো জরিপ মতে রোগটির হার প্রতি মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৪ থেকে ৪৮৯ জন। আর বাংলাদেশে এখনো পযর্ন্ত কোনো জরিপ পরিচালিত হয়নি। বিএসএমএমইউ’র রিউম্যাটোলজি বিভাগে অল্প কিছু গবেষণাপত্র থাকলেও দেশব্যাপী কোনো পৃথক জরিপ নেই। তবে বতর্মানে এই বিভাগে রোগীদের তথ্য সংরক্ষণসহ কয়েকটি গবেষণা চলছে।

যাযাদি: বিএসএমএমইউতে প্রতিদিন গড়ে কতজন রোগী আসে, রোগ শনাক্তের হার কেমন?

প্রতি সপ্তাহের বুধবার বিএসএমএমইউর বহিবির্ভাগে সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস ক্লিনিক চালু রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীদের রোগ শনাক্ত এবং চিকিৎসার জন্য এখানে রেফাডর্ করা হয়। আর প্রতি বুধবার গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী ক্লিনিকটিতে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এখানে রোগীদের যথাসময়ে বা প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্তের জন্য উপসগের্র পাশাপাশি আঙুলের ‘নেইল ফোল্ড ক্যাপিলারোস্কোপি’ পরীক্ষা, রক্তের বিভিন্ন এন্টিবডি, ফুসফুসের, হৃদযন্ত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

যাযাদি: বিএসএমএমইউ’র বাইরে দেশের সরকারি-বেসরকারি কতটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়?

সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস একটি রিউম্যাটোলজিক্যাল ডিজিজ। বাংলাদেশে এখনো পযর্ন্ত বিএসএমএমইউ’র রিউম্যাটোলজি (বাতরোগ) বিভাগেই সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস ক্লিনিক চালু রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কে¬রোডামার্ নিণর্য় বা প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও চিকিৎসকগণ উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের বিএসএমএমইউ’র রিউম্যাটোলজি বিভাগে রেফাডর্ করে থাকেন।

যাযাদি : সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে কতজন?

সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস চিকিৎসা প্রধানত রিউম্যাটলিজস্ট বা বাতরোগ বিশেষজ্ঞরা করে থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে চমের্রাগ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা রোগটির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বতর্মানে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পযাের্য় মাত্র ৩২ জন রিউম্যাটোলজিস্ট আছেন।

যাযাদি: ডায়াগনোসিস সুবিধা, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যয় কেমন? চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়া যায় কিনা?

রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা রয়েছে। ফলে উপসগের্র পাশাপাশি রোগ নিণের্য়র জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা অনুসারে চিকিৎসা খরচও বেশ ব্যয়বহুল। আর রোগটি নিমূর্ল বা নিরাময়যোগ্য না হলেও সঠিক এবং যথাযথ চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অনেকটা সুস্থ থাকাও সম্ভব।

যাযাদি: এটি প্রতিরোধের উপায়গুলো কি?

এটি একটি অটোইম্যুন রোগ, যেটি প্রতিরোধের উপায় এখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ নিণর্য় এবং চিকিৎসা মাধ্যমে রোগীদের স্বাভাবিক জীবন এবং সুস্থতা প্রদান করা সম্ভব। সবোর্পরি রোগটি সম্পকের্ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিএসএমএমইউর রিউম্যাটোলজি বিভাগ প্রতিবছর ৩০ জুন রোগীদের নিয়ে বিশ্ব স্কে¬রোডামার্ দিবস উদযাপন করছে।

য় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন যায়যায়দিনের প্রতিবেদক জাহিদ হাসান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3332 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1