বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শীতকালে শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি

ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ বহিঃত্বকের একেবারে বাইরের যে স্তর অথার্ৎ কেরাটিন স্তরের অভ্যন্তরে পানির পরিমাণ কমে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শুকনো হলে যে কোনো জিনিসেরই নমনীয়তা কমে যায়। ত্বকের বেলায়ও তাই।
নতুনধারা
  ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বাতাসে আদ্রর্তা কমে গেলে সবার ত্বকের ত্বকই কমবেশি শুষ্ক হয়ে যায়। যেমন শীতকালে গা, হাত-পা ফেটে যায়। কিন্তু অনেকের শুষ্ক ত্বকের একটি ধাপ থাকে। তাদের একটুতেই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। জন্মসূত্রে অনেকে শুষ্ক ত্বক লাভ করে থাকে। যেমন ইকথায়োসিস বলে এক ধরনের ত্বক রোগ আছে, যাতে ত্বক খুব বেশি শুষ্ক থাকে। যাদের অঁাশের মতো বড় বড় টুকরা ওঠে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের রোগের প্রকোপ কিছুটা কমে আসে। ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ বহিঃত্বকের একেবারে বাইরের যে স্তর অথার্ৎ কেরাটিন স্তরের অভ্যন্তরে পানির পরিমাণ কমে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শুকনো হলে যে কোনো জিনিসেরই নমনীয়তা কমে যায়। ত্বকের বেলায়ও তাই। নমনীয়তা কমে গেলে ত্বকে ফাটল ধরে। অঁাশ উঠে ফাটল বেশি বড় হলে চোখে দেখা যায় যে- ত্বক ফেটে যাচ্ছে। কেরাটিন স্তরের বাইরে এমনিতে প্রাকৃতিক নিয়মেই একটি আবরণ থাকে যার কাজ ময়েশ্চারাইজারের মতো অথার্ৎ ত্বককে আদ্রর্ রাখা। কোনো কারণে এ প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার অবলুপ্ত হলে, ত্বক শুকনো হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। ত্বকের ভেতরের পানি সেক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। ত্বকের নিজস্ব একটা সহজাত ক্ষমতা আছে যা দিয়ে ত্বক নিজের অভ্যন্তরের পানি ধরে রাখতে পারে, ত্বককে সহজে শুষ্ক হতে দেয় না। কিন্তু কোনো কারণে সে জন্মসূত্রেই হোক বা পরিবেশগত কারণেই হোক, যদি ত্বকের সেই ক্ষমতা থাকে বলা হয় ত্বকের বেরিযার ফাংশন বা রোধ করার ক্ষমতা কমে যায় বা পুরোপুরি হারিয়ে যায়, তাহলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে।

শুষ্ক ত্বকের অসুবিধা

ত্বক শুষ্ক হলে রুক্ষ খসখসে হয়ে যায়। মোলায়েম থাকে না। ত্বকে অঁাশের মতো ওঠে ও ফেটে যায়। বেশি শুষ্ক হলে ত্বক লালচে হয়, চুলকাতে পারে। লাল হলেও ত্বকে প্রদাহের চিহ্ন থাকে না কখনো। ত্বক ফেটে রক্তও বেরোতে পারে। মাঝেমধ্যে কিছু ত্বকের অসুখেও ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় শুকনো ত্বকের সঙ্গে প্রদাহ থাকে।

আদ্রর্তা ও শুষ্ক ত্বক

বাতাসে আদ্রর্তার পরিমাণ ত্বকের শুষ্ক হওয়ার পেছনে একটা কারণ। আদ্রর্তায় হঠাৎ তারতম্যের ফলেই ত্বকের ক্ষতি হয় বেশি। বেশি আদ্রর্তা থেকে সহসা কম আদ্রর্তায় গেলে বা উল্টোটা হলে ত্বক এ হঠাৎ পরিবতের্নর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে সহজেই শুষ্ক হয়ে পড়ে ত্বক। গ্রীষ্মকালে কেউ হয়তো এয়ারকন্ডিশনড ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে গরমে আদ্রর্ আবহাওয়ায় ঘুরে বেড়ান।

শুষ্ক ত্বক থেকে বিপত্তি

শুষ্ক ত্বকে চুলকানি হতে পারে। চুলকানি থেকে ত্বকে যে সূ² অঁাচড়ের সৃষ্টি হয় তার মধ্য দিয়ে ত্বকের ভেতরে চলে যেতে পারে বিভিন্ন জীবাণু। ঘটতে পারে ত্বকের সংক্রমণ। শীতকালে গায়ে যে চুলকানি হয় তার নাম উইন্টার ইচ। এর কারণে ত্বক শুষ্ক হয়। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে ত্বকে দেখা দিতে পারে একজিমা। শুকনো ত্বকের কারণে যে একজিমা হয় তাকে বলে অ্যাসটিয়া টোটিক একজিমা। বয়স হলে ত্বক এমনিতেই শুকিয়ে যায়। এ ধরনের একজিমা বয়স্কদের ত্বকেই বেশি দেখা যায়। সাবান, ডিটারজেন্ট বেশিবার দিয়ে হাত ধুলে ত্বকের উপরের স্বাভাবিক ময়েশ্চারাইজার আবরণ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে হাত শুকনো শুষ্ক লাগে। যারা কাজের জন্য গ্যাসোলিন বা মিনারেল স্পিরিট দিয়ে হাত ধৌত করেন তাদেরই এ দশা হয় আরো বেশি। এসব পদাথের্ ত্বকের ফ্যাট ও প্রোটিন অংশ দ্রবীভ‚ত হয়ে যায়। এজন্য ত্বকের রোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। ডিটারজেন্ট বা আধুনিক বাড়িতে সরঞ্জাম পরিষ্কার করার জন্য যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা বহিঃত্বকের কোষের মধ্যকার লিপিড স্তরকে গলিয়ে দেয়। কোষ আলগা হয়ে পড়ে। স্বভাবতই এ ফঁাক দিয়ে ত্বকের ভেতরকার পানি বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকে অবিরত।

শুষ্ক ত্বক ও অপুষ্টি

কোনো কারণে কেউ বেশিদিন অপুষ্টিতে ভুগলেও ত্বক শুষ্ক হতে পারে। অপুষ্টি হলে ত্বকের ফ্যাট অংশে টান পড়ে। বিশেষত লাইনোলেইক এসিড নামের ফ্যাটি এসিড শরীরে কমে গেলে ত্বকের কোষের মাঝেমধ্যে যে চবির্স্তর থাকে, তা ঠিকমতো গঠিত হয় না। কোষের মধ্যে এ চবির্স্তর বা লিপিড স্তরের ওপরেই ত্বকের রোধ করার ক্ষমতার মূল দায়িত্ব। সুতরাং খাবারে রাইনোলেইক এসিড না থাকলে ত্বক শুষ্ক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি

এক কথায় ত্বককে আদ্রর্ রাখার চেষ্টা করা। একটু তেলতেলে, কিন্তু মূলত জলীয় লোশন ত্বকে মাখাটাই শ্রেয়। এ লোশন মাখার সময় এর জলীয় অংশ ত্বকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ত্বক ভিজিয়ে রাখবে। আর লোশনে তেল অংশ ত্বকের ওপরে একটি আবরণের সৃষ্টি করবে ত্বকের ভেতরের পানিকে সহজে বেরোতে দেবে না। ত্বক নমনীয় ও কোমল হবে। এ ধরনের লোশনকে আমরা বলি ময়েশ্চারাইজার।

লোশন মাখার সময়

কেউ হয়তো বাইরে পরিশ্রম করছিলেন। হঠাৎ ঠাÐা ঘরে এসে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। এসব পরিবতর্নই ডেকে আনে ত্বকের সবর্নাশ। ত্বকের ওপর যদি বেশি আঘাত লাগে, বেশি ঘষা লাগে তাহলে ত্বক শুকনো হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। শীতকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অনেকেই সুন্দর লোশন ত্বকে মেখে নেন যাতে বাইরে গিয়ে ত্বক শুষ্ক না হয়ে পড়ে। এতে ঠিক উল্টো হয়। বাইরের আবহাওয়া লোশনের জলীয় অংশ দ্রæত বাষ্পে পরিণত হতে থাকে। ত্বক ঠাÐা হয়ে খুব তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে পড়ে। আসলে নিয়ম বাইরে বেরোবার আধঘণ্টা আগে মুখে বা হাতে লোশন দেয়া। এর যেটুকু জলীয় অংশ বাষ্প হওয়ার তা ঘরের উষ্ণ আদ্রর্ আবহাওয়ায় খুব ধীরে ধীরে হয়ে যাবে। বাইরে ঠাÐা, শুষ্ক পরিবেশে লোশনের পানি দ্রæত বেরিয়ে গিয়ে ত্বককে শুষ্ক করে দেবে না।

ময়েশ্চারাইজার ও ব্যবহার

ময়েশ্চারাইজারে থাকে দু’ধরনের পদাথর্। এক ধরনের পদাথর্ ত্বককে আদ্রর্ রাখে। এদের বলে ডিউমেকট্যান্টস। ত্বকে মাখলে এরা ত্বকের মধ্যে শোষিত হয়ে ত্বককে ভিজে ভিজে রাখে। ত্বক নরম রাখে। সাধারণভাবে হিউমেকট্যান্টস রূপে ব্যবহৃত হয় গিøসারিন, প্রোপিলিন গøাইকস, সোডিয়াম ল্যাকটেট ইউরিয়া ইত্যাদি। খুব বেশি শুকনো ত্বকে আরও বেশি কাযর্কর হিউমেকট্যান্টস ব্যবহার করতে হয়। এদের মধ্যে রয়েছে জিলেটিন, হায়ালিউরোনিক এসিড, ভিটামিন এবং কতগুলো বিশেষ প্রোটিন। ময়েশ্চারাইজারের মধ্যে দ্বিতীয় ধরনের যে পদাথর্ থাকে তাকে বলে অক্লুসিভ বা আবরণকারী। এর কাজ ত্বককে আবৃত রাখা। ত্বকের ওপর একটি স্তরের সৃষ্টি করে এরা ত্বকের ভেতরের পানিকে বাইরে বের হতে দেয় না। খুব শুকনো আবহাওয়া যেখানে হিমেল বাতাসে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। অবিরত সেখানে ত্বককে রক্ষা করতে হিউমেকট্যান্টসের চেয়ে বেশি প্রয়োজন এ অক্লুসিভ এর। পেট্রোলেটাস বা ভেসালিন, ল্যানোলিন, প্যারাফিন, কোলেস্টেরল, অলিভ তেল এসব পদাথর্ খুব ভালো অক্লুসিভের কাজ করে। অক্লুসিভ পদাথর্রা নিজেরা কিন্তু ত্বককে আদ্রর্ করে না ত্বকের ভেতরের পানিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে শুধু। তাই এগুলো লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই যে ত্বক আদ্রর্ হবে তা ভাবা ভুল। তবে গোসলের পরই যদি কোনো অক্লুসিভ পদাথর্ লাগানো হয় ত্বকে তাহলে বেশ লাভ হয়। গোসলের সময় ত্বকে যে পানি প্রবেশ করল, তা অক্লুসিভ সাহায্য আটকানো থাকে সহজে নিগর্ত হতে পারে না। অক্লুসিভের পদাথর্ লাগানোর একটা অসুবিধা হলো এগুলো বেশ তেলতেলে ও আঠালো। ত্বকে মাখলে ত্বক কিছুটা চটচট করে। অনেকে তাই এগুলো গায়ে লাগাতে পছন্দ করে না। সেজন্য তৈরি করা হয়েছে ময়েশ্চারাইজারের লোশন ফমুর্লা-যার মধ্যে মিউমেকট্যান্ট ও অক্লুসিভ পদাথর্ দুটোই রয়েছে। এদের বলে এমোলিয়ন্ট। এগুলো ত্বকে লাগাতে কোনো অসুবিধা হয় না। যেমন ভ্যাসলিন ও গিøসারিন দুটো মিশিয়ে মাখলে ত্বক চটচটও করে না-আবার ত্বকের শুষ্কতাও বেশ কম থাকে। ইদানিং ময়েশ্চারাইজার লোশনের মধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন সেন্ট। এতে ত্বকে মাখার পর বেশ সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়। শুধু গন্ধের জন্যই হয়তো ক্রেতা বারবার বিভিন্ন লোশন কেনেন। মূল উপাদান হয়তো একটিই থাকে। এমনিতে যাদের ত্বকে সহজে অ্যালাজির্ বা উত্তেজনা হয় না তারা বিভিন্ন গন্ধ মাখা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যাদের ত্বক উত্তেজনাপ্রবণ তাদের একটু সাবধান হওয়া ভালো। গন্ধ ছাড়া ময়েশ্চারাইজারই তাদের মাখা শ্রেয় কারণ এ সুগন্ধ পদাথর্ বা পারফিউম থেকে ত্বকে অ্যালাজির্ বা উত্তেজনা হতে দেখা যায় প্রায়ই। যাদের ত্বক একটু শুকনো, তাদের ময়েশ্চারাইজার মাখা ছাড়া; অন্য কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করা উচিত। ত্বক যেসব কারণে বেশি শুকনো হয়, তাদের সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। বারবার গোসল করা উচিত নয়। শীতকালে বাতাসে আদ্রর্তা কম থাকার সময়ে। বারবার সাবানে মুখ, হাত-পা ধোয়াও উচিত নয়। হঠাৎ হঠাৎ পরিবতর্ন করা উচিত নয় পরিবেশ ঠাÐা থেকে গরমে গরম থেকে ঠাÐায়।

য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32704 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1