শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরের ধুলো থেকে অ্যালাজির্

ঘরের ঝুলঝাল পরিষ্কার করছেন বা পুরনো খাতাপত্র গোছগাছ করছেন, শুরু হলো হাঁচি ও পরে শ্বাসকষ্ট। ধুলোবালিকে এড়িয়ে চলা যায় না। ঘরের ধুলোর আথোর্পড জাতীয় পোকা, ফুলের রেণু, পোষা জন্তুর লোম, ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে হাঁচি-কাশি হতে পারে।
য় যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

পরিচ্ছন্ন বাড়িতেও ধুলো অ্যালাজির্ সাধারণ ঘটনা। ঘরের ঝুলঝাল পরিষ্কার করছেন বা পুরনো খাতাপত্র গোছগাছ করছেন, শুরু হলো হাঁচি ও পরে শ্বাসকষ্ট। ধুলোবালিকে এড়িয়ে চলা যায় না। বাসা, অফিস, রাস্তা সবর্ত্রই এর মুখোমুখি হতে হয়। ঘরের ধুলোর আথোর্পড জাতীয় পোকা, ফুলের রেণু, পোষা জন্তুর লোম, ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে হাঁচি-কাশি হতে পারে। বিছানা, বালিশ, কাপের্ট হলো মাইটের আদশর্ বাসস্থান। বছরব্যাপী মানুষ ভোগে নাক থেকে পানি ঝরায় চোখ চুলকানি ও চোখ থেকে পানি ঝরায়। তার কারণ ঘরের ধুলোর জীবাণু। ধুলোর কারণে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কাশিও হয়।

ঘুরের ধুলো থেকে অ্যালাজির্ হয় কেন

ঘরের ধুলো প্রকৃতপক্ষে অনেক জিনিসের মিশ্রণ। এর উপাদানগুলো কম-বেশি হতে পারে এক ঘর থেকে আরেক ঘরের ফানির্চারের প্রকারভেদে, ঘর তৈরির উপাদানের কারণে, পোষা প্রাণীর উপস্থিতির কারণে, আদ্রর্তার কারণে। ধুলোর মধ্যে থাকতে পারে সুতার অঁাশ, মানবদেহের ত্বকের মৃত কোষ, প্রাণীর রোম, আণুবীক্ষণিক জীবাণু, তেলাপোকার প্রতঙ্গ, ছত্রাকের জীবাণু, খাদ্যকণা এবং আরও অনেক পরিত্যক্ত ক্ষুদ্র জিনিস। এগুলোর মধ্যে প্রাণীর রোম, তেলাপোকা এবং ধুলোর জীবাণু হচ্ছে প্রধান তিন বিপজ্জনক বস্তু। কোনো ব্যক্তি এগুলোর যে কোনোটির কারণে ভুগতে পারেন। এবং তিনি যখন ধুলোর সংস্পশের্ আসেন, তখন অ্যালাজির্ক প্রতিক্রিয়া ঘটে।

ধুলোর অ্যালাজির্ হলে কি বলা চলে যে এটি একটি নোংরা বাড়ি

হ্যঁা, নোংরা বাড়ির কারণে অ্যালাজির্ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে যদিওÑ স্বাভাবিক ঘর পরিষ্কারের প্রক্রিয়া ধুলোর অ্যালাজির্ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, ধুলোর সব উপাদান এভাবে দূর করা সম্ভব নয়। যেমন; আপনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে যত চেষ্টাই করেন না কেন, কাপের্ট, মাদুর এবং বালিশ থেকে ধুলোর জীবাণু দূর করতে পারবেন না। বরং এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে পড়তে পারে।

ধুলোর জীবাণুগুলো কী কী

অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক এই প্রাণীগুলো আট পায়ের অ্যারাকনাইর পরিবারের অন্তগর্ত। অঁাটুলি পোকা এবং চিগার একই পরিবারভুক্ত। এগুলো শক্ত দেহের অধিকারী। এরা ৭০ক্ক ফারেনহাইট বা তার উচ্চ তাপমাত্রায় ভালোভাবে বঁাচতে পারে। ৭৫-৮০ শতাংশ আদ্রর্তাই এদের পছন্দ। আদ্রর্তা ৪০-৫০ শতাংশের কম হলে এদের বংশ বৃদ্ধি হয় না। শুষ্ক আবহাওয়ায় এদের দেখা যায় না।

দেখা গেছে, শতকরা ১০ ভাগ মানুষ এদের কারণে আক্রান্ত হয়। অ্যাজমা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই এদের সংস্পশের্ এলে অ্যালাজির্ প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।

এ জীবাণুদের দেহ বা মুখমÐলের সংস্পশের্ এলে মানুষের অ্যালাজির্ হয়। এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বালিশে, মাদুরে, কাপেের্টর ভঁাজে এবং আসবাবপত্রের তলায়। ঝাড়– দিলে বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রয়োগ করলে এরা বাতাসে ভাসতে থাকে অথবা হেঁটে হেঁটে অন্য প্রান্তে সরে যায়। অ্যালাজির্ রোগীদের শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং উপসগর্ বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমান তার নাক জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বালিশে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুগুলোর প্রত্যক্ষ সংস্পশের্ থাকে। এক প্রান্তের ধুলোর মধ্যে সবোর্চ্চ ১৯ হাজার পযর্ন্ত জীবাণু থাকতে পারে। গড়ে এই সংখ্যা প্রতি গ্রামে ১০ হাজার। প্রতিটি জীবাণু দিনে ১০টি নতুন জীবাণু সৃষ্টি করে। এদের বেঁচে থাকার মেয়াদ ৩০ দিন।

এদের খাদ্য মূলত পশুর রোম এবং ত্বকের মৃত কোষ। সুতরাং যেখানে মানুষের বাস, সেখানেই এদের বসবাস। এরা কামড়ায় না, অন্য কোনো রোগ ছড়ায় না এবং মানুষের শরীরে বাসা বঁাধে না। এরা শুধু সেই মানুষের প্রতি ক্ষতিকর যাদের এই জীবাণুর প্রতি অ্যালাজির্ রয়েছে।

সাধারণত বাড়িতে যেসব জীবাণুরোধক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো দিয়ে এদের অপসারণ করা যায় না। ফলে ঘরে ধুলোর জীবাণুর পরিমাণ কমানো সম্ভব হয় না।

ঘরের ধুলোতে ছত্রাক থাকে কেন?

ছত্রাক থাকে সাধারণ বাইরের বাতাসে। তবে যে কোনো বাড়িতেই ছত্রাক কলোনি তৈরি হওয়া সম্ভব। বাড়ির বাসিন্দারা হয়তো দেয়ালে ছত্রাকের কলোনি দেখতে পায় না; কিন্তু সেটি ঠিকই তৈরি হতে থাকে। দুটি জিনিস ঘরের মধ্যে ছত্রাকের কলোনি গড়তে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। ১. আদ্রর্তা শতকরা ৫০-এর বেশি। পানির পাইপে ক্ষুদ্র ফুটা বা যে কোনো পানির প্রবাহ এতে ভ‚মিকা রাখে। ২. দেয়ালে কোনো বোডর্ থাকলে বা স্যঁাতসেঁতে আসবাব থাকলে সেখানে ছত্রাক জন্মায়। ছত্রাকের স্পোর কাপড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই স্পোর থেকে সুনিদির্ষ্ট জীবনচক্রের মাধ্যমে পূণার্ঙ্গ ছত্রাক তৈরি হয় অনুক‚ল পরিবেশে। যেসব রোগীর ছত্রাকে অ্যালাজির্ আছে, তারা ছত্রাক অধ্যুষিত বাড়িতে থাকলে নিশ্চিতভাবে ছত্রাকজনিত অ্যালাজির্র শিকার হন। কারণ, তারা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ছত্রাক গলাধকরণ করেন।

ঘরের ধুলোতে তেলাপোকা থাকে কি?

তেলাপোকার বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ঘরের ধুলোতে মিশে থাকে। বিশেষ করে পুরনো বাড়ি ও ফ্ল্যাটবাড়ি যেখানে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বিভিন্ন পরিবার বাস করে, সেখানে তেলাপোকা নিমূর্ল করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। অ্যালাজির্ আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে অ্যাজমা রোগী এ ধরনের বাড়িতে গেলে তার উপসগর্ বেড়ে যায়। বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তার করার জন্য তেলাপোকার দরকার খাদ্য ও আদ্রর্তা। এগুলো থেকে বঞ্চিত করতে তেলাপোকার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।

ঘরের ধুলোর অ্যালাজির্ কি মৌসুমি

দেখা গেছে আমেরিকাতে ধুলোর জীবাণুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় জুলাই-আগস্ট মাসে। ডিসেম্বর পযর্ন্ত এই উচ্চ সংখ্যা বজায় থাকে। বসন্তের শেষের দিকে ধুলোর জীবাণুঘটিত অ্যালাজির্র সংখ্যা সবচেয়ে কম থাকে আমেরিকায়। এ ধরনের কিছু রোগী জানিয়েছেন, তাদের উপসগর্ সবচেয়ে বেশি হয় শীতকালে। এর কারণ হচ্ছে মৃত জীবাণু এবং জীবিত জীবাণুদের বজর্্য উভয়ই অ্যালাজির্ প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে ছত্রাকের পরিমাণেও কম-বেশি ঘটে। দেখা যায়, গ্রীষ্মের সময় তেলাপোকার পরিমাণ বেশি হয়।

বাতাসে ধুলোকণার পরিমাণ বেশি হয়। আর গ্রীষ্মকালে মানুষ বাড়িতে সচরাচর বেশি সময় কাটায় বলে এ সময়ে অ্যালাজির্র উপসগর্ও বৃদ্ধি পায়।

কীভাবে বুঝবেন যে আপনার ধুলোজনিত অ্যালাজির্ রয়েছে

এ ক্ষেত্রে আপনাকে অ্যালাজির্ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। তিনি আপনার উপসগর্গুলো লক্ষ করবেন, আপনার গৃহ ও কমর্স্থলের পরিবেশ সম্পকের্ জানতে চাইবেন। প্রশ্ন করবেন আপনার অভ্যাস, পারিবারিক রোগের ইতিহাস, উপসগর্ কমা-বাড়ার প্রবণতা, পোষা প্রাণীর ধরন সম্পকের্। তারপর তিনি আপনার শরীরে একটি পরীক্ষা করবেন যার নাম স্কিন-প্রিক টেস্ট। সেই সঙ্গে রক্ত পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।

এ ধরনের অ্যালাজির্র উপসগর্ কমাতে কী করবেন

তিনটি মৌলিক চিকিৎসার ধাপ রয়েছেÑ

* ধুলোর জীবাণু থেকে দূরে থাকা

* চিকিৎসকের পরামশর্ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ

* ইমিউনোথেরাপি

কীভাবে ধুলোর জীবাণু থেকে দূরে থাকবেন

পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ঠিক কোন ধরনের ধুলোর উপাদান থেকে আপনি অ্যালাজিের্ত আক্রান্ত হচ্ছেন। ধুলোর জীবাণু পরিপূণর্ভাবে অপসারণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনি কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন, যাতে পরিমাণটা অন্তত কম থাকে।

অ্যালাজির্ বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে আপনাকে পরামশর্ দিতে পারেন।

শোবার ঘরের দিকে বিশেষ নজর দিন

গড়পড়তা হিসাবে মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটায় বেডরুমে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধুলোর জীবাণুর পরিমাণ বেশি থাকে শোবার ঘরে। এ জন্য ধুলো-অ্যালাজিের্ত আক্রান্ত ব্যক্তিকে শোবার ঘরের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে।

* বেছে নিন এমন শোবার জিনিসপত্র যেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং যাতে অ্যালাজির্র পরিমাণ কম থাকে। বালিশে ফোম বা তুলো ব্যবহার না করে সিনথেটিক জিনিস ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানাপত্র ধুয়ে শুকিয়ে নিন।

* সম্ভব হলে বেডরুমে এয়ারকন্ডিশনার ও আদ্রর্তারোধক যন্ত্র ব্যবহার করুন। আদ্রর্তা কম থাকলে জীবাণু ও তেলাপোকার বংশবিস্তার রোধ হবে।

* জানালায় সূ² কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘন ঘন বদলাতে হবে। কাপড়-চোপড় ক্লোজেটে রাখুন। ক্লোজেটের ঢাকনা বন্ধ রাখবেন।

* ঘরে কোনো মৃত প্রাণী বা প্রাণীর অংশ থাকলে অবিলম্বে বাইরে ফেলে দিন।

* শোবার ঘরে কখনো পোষা প্রাণীকে ঢুকতে দেবেন না।

মেঝের ধুলো কমানো

* নিয়মিত বিরতিতে ঘর পরিষ্কার করুন। মেঝে মোছার সময় স্যঁাতসেঁতে ও তৈলাক্ত কাপড় ব্যবহার করবেন না। ঘর পরিষ্কারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।

* শোবার ঘরে কাপের্ট ব্যবহার না করাই উত্তম। ব্যবহার করলেও এমন ধরনের কাপের্ট নেবেন যেগুলোর অঁাশ সুবিন্যস্ত।

* যেসব জিনিস ও আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, সেগুলো বেডরুমে না রেখে অন্যত্র সরিয়ে ফেলুন।

ঘরের বাতাসের ধুলো কমানো

এমন ধরনের এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করুন যার দ্বারা ঘরের আদ্রর্তা শতকরা ৫০ ভাগের নিচে রাখা সম্ভব।

এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন প্রয়োজনে ঘন ঘন ফিল্টার পরিবতর্ন করতে হবে। তবে মনে রাখবেন, ধুলোর জীবাণু বেশিক্ষণ বাতাসে থাকতে পারে না। তাই মেঝে ও দেয়াল পরিষ্কারের দিকেই আপনাকে বেশি নজর দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19473 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1