শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জটিল রোগও নিরাময় সম্ভব

অনেক মারাত্মক বা জটিল রোগ রয়েছে যা কারও মধ্যে নিণীর্ত হলে তার মনে বারবার অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা জাগে। কিন্তু হতাশ হবেন না। কারণ জীবদ্দশায় অনেক জটিল রোগের নিরাময় সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু রোগ তাড়াতাড়ি শনাক্তকরণ খুব গুরুত্বপূণর্, কারণ যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যাবে নিরাময়ের সম্ভাবনা তত বেশি। এখানে এমন ১০টি জটিল রোগের কথা বলা হলোÑ যাদের নিরাময় জীবদ্দশায় অসম্ভব নয়।
নতুনধারা
  ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ষ হাটের্র রোগ

পুরুষ ও নারীদের ঘাতক রোগ হচ্ছে, হাটের্র রোগ। কিন্তু যুগান্তকারী নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি (যেমন- হৃদরোগজনিত প্রদাহ নিমূর্ল করার চিকিৎসা) হাটের্র রোগ অনুমান করতে পারে, প্রতিরোধ করতে পারে এবং নিরাময়ও করতে পারে।

ষ অ্যালজেইমারস রোগ

অবিশ্বাস্যভাবে এই ডিজেনারেটিভ ব্রেইন-ধ্বংসাত্মক রোগটির নিরাময় আমাদের হাতের মুঠোয় থাকতে পারে। নিউ ইয়কর্ সিটির অ্যালজেইমারস ড্রাগ ডিসকভারি ফাউন্ডেশনের (এডিডিএফ) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং চিফ সায়েন্স অফিসার হাওয়াডর্ এম ফিলিট বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে অ্যালজেইমারস গবেষণা ক্ষেত্রে কাজ করছি। কিন্তু বতর্মানের মতো আগে এত বেশি আশাবাদী ছিলাম না। বতর্মানে আগের তুলনায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অধিক চিকিৎসা হচ্ছে, ভালো ডায়াগনোসিস হচ্ছে এবং বৈজ্ঞানিক বোধগম্যতাও স্পষ্ট হয়েছে। অ্যালজেইমারস গবেষণার জন্য এটি সুবণর্ সময়।’ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই রোগের জন্য পরিমাপযোগ্য মাকাের্রর অভাব। ডা. ফিলিট বলেন, ‘কোলেস্টেরল হচ্ছে হাটের্র রোগের প্রাথমিক বায়োমাকার্র, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অ্যালজেইমারস রোগ স্ক্রিনিংয়ের জন্য সাধারণ ও কম খরচের রক্ত পরীক্ষার উদ্ভাবন করা।’ তিনি যোগ করেন, ‘এসব টেস্ট অ্যালজেইমারস রোগীর মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতা ডেভেলপ হওয়ার আগে এই রোগ শনাক্ত করতে পারবে। এই রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় উভয়টিই সম্ভব হতে পারে।’ এ কারণে এডিডিএফ অ্যালজেইমারস রোগ দ্রæত শনাক্ত করতে নতুন বায়োমাকার্র উদ্ভাবনে বিল গেটস, ডলবি ফ্যামিলি, চালর্স অ্যান্ড হেলেন স্কোয়াব ফাউন্ডেশন ও অন্যদের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে। গবেষকরাও নতুন চিকিৎসা নিয়ে উত্তেজিত, যেমনÑ সেসব ট্রিটমেন্ট (উদাহরণস্বরূপ, জিন থেরাপি) যা মস্তিষ্কে অ্যালজেইমারস রোগীদের স্মৃতিভ্রংশতার দিকে নিয়ে যাওয়ার কারিগর প্লেক সৃষ্টি হ্রাস করতে পারে, বলেন নিউ ইয়কর্ সিটির মাউন্ট সিনাই মেডিকেল সেন্টারের সাইকিয়াট্রিস্ট ও নিউরোলজিস্ট অ্যামি আলোয়সি।

ষ লিউকেমিয়া ও লিম্ফোমা

আটলান্টায় অবস্থিত আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির চিফ মেডিকেল ও সায়েন্টিফিক অফিসার ওটিস ব্রাউলি বলেন, ‘লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা হচ্ছে রক্ত ক্যান্সার, যা নিরাময় করা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এসব রোগ চিকিৎসায় নিরাময় হয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহার করে এসব ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, যেমনটা আমরা ডায়াবেটিস ও এইচআইভির ক্ষেত্রে করে থাকি।’ ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) রক্ত ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ১৮টি থেরাপি অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে জিন থেরাপিও আছেÑ এটি ইমিউন সিস্টেমকে ক্যান্সার কোষ শনাক্ত ও হত্যা করতে সাহায্য করে।

ষ স্তন ক্যান্সার

ডা. ব্রাউলি বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ বছর ধরে স্তন ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে আছে এমন নারী রয়েছে এবং তাদের অবস্থা আরও ভালো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এসব স্তন ক্যান্সার স্মোলডারিং ফায়ারের মতো এবং আমরা পানির পরিবতের্ কেমোথেরাপি বা হরমোনাল ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণে রাখি।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অনুধাবন করতে শুরু করেছি যে আমরা যা কিছুকে ক্যান্সার বলি তার সবটাই নিরাময়ের প্রয়োজন নেই, কারণ এটি জীবনের জন্য ঝুঁকি নয়।’ আগামী দশ বছরে এমন টেস্ট সম্ভব হবে যা অতিক্ষুদ্র ক্যান্সার কোষকেও অ্যানালাইজ করতে পারবে এবং এটি প্রগ্রেস হবে কিনা কিংবা বিনাইনের মতো আচরণ করবে কিনা তাও অনুমান করা যাবে।

ষ ফুসফুস ক্যান্সার

ডা. ব্রাউলি বলেন, ‘ধূমপান বজর্ন ও নতুন ওষুধের ব্যবহার ইতোমধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীকে ভালো করতে শুরু করেছে।’ এমন একটি ওষুধ হচ্ছে পেমব্রোলিজুম্যাভ (ব্র্যান্ড নাম : কেইটরুডা), যা ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হয়েছে। এটি পিডিএ-এল১ নামক প্রোটিনকে প্রকাশ করে, এই প্রোটিনটি টিউমারকে ইমিউন সিস্টেম থেকে গোপন রাখে। এই থেরাপি পিডি-এল১ প্রোটিনকে বøক করে ইমিউন সিস্টেমকে ক্যান্সারকে আক্রমণ করতে সাহায্য করে। ডা. ব্রাউলি বলেন, ‘যখন এসব ওষুধ ডান ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য ব্যবহার করা হয়, কিছু রোগী দীঘের্ময়াদে রেমিশন (রোগের অবস্থা ভালো হওয়া) লাভ করে এবং তারা কোয়ালিটি লাইফ ও স্বাভাবিক লাইফ এক্সপেক্ট্যান্সি পায়।’ এটি কি নিরাময়ের মতো নয়? নতুন ওষুধ প্রত্যেক ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কাজ করে না এবং চিকিৎসকরা এ ক্যান্সারের জেনেটিক্স জ্ঞানচচার্ অব্যাহত রেখেছে এবং কাক্সিক্ষত ওষুধ তৈরি করছে।

ষ কোলন ক্যান্সার

ডা. ব্রাউলি বলেন, দসাজর্নরা ইতোমধ্যে প্রাথমিক পযাের্য়র কোলন ক্যান্সার নিরাময় করতে পেরেছে এবং ছড়াতে শুরু করা কিছু কোলন ক্যান্সারও।’ স্ক্রিনিং কোলনোস্কপির মাধ্যমে এ ক্যান্সার তাড়াতাড়ি শনাক্তকরণের ফলে এমনটা সম্ভব হচ্ছে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির নতুন গাইডলাইন হচ্ছে, কোলরেক্টাল ক্যান্সারের গড় ঝুঁকির লোকদের ৪৫ বছর বয়স থেকে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত। এটি নিরাময়যোগ্য পযাের্য় কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে, ডা. ব্রাউলি বলেন।

ষ ওভারিয়ান ক্যান্সার

কয়েক দশক আগে ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারকে গোপন ও নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচনা করা হতো, কারণ কোনো স্ক্রিনিং টেস্ট ছিল না। সময় পরিবতর্ন হয়েছে। ডা. ব্রাউলি বলেন, ‘১৯৮০ সালের দিকে হলে তৃতীয় পযাের্য়র ওভারিয়ান ক্যান্সারের কোনো নারী মারা যেত, কিন্তু বতর্মানে সাজাির্র ও ৬ চক্রের কেমোথেরাপি দিয়ে তাকে সম্পূণর্ রেমিশনে পাঠানো যাবে।’ সিএ ১২৫ নামক প্রোটিন মনিটরে রেখে এ ক্যান্সারের রোগীরা রিল্যাপ্সিং (রোগের অবস্থা আরও খারাপ হওয়া) থেকে দূরে থাকতে পারে।

ষ শিশুদের মৃগীরোগ

শৈশবীয় মৃগীরোগের একটি সাবসেট রয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে নিরাময়যোগ্য হতে পারে, বলেন ওহাইওতে অবস্থিত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের পেডিয়াট্রিক এপিলেপ্সির প্রধান অজয় গুপ্ত। এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগের জন্য জেনেটিক ও এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর দায়ী হতে পারে। ডা. গুপ্ত বলেন, ‘চিকিৎসা, মনিটরিং এবং সুস্থ পরিবেশে নিরাময় প্রচেষ্টা শিশুদের মৃগীরোগ নিরাময় করতে পারে। শৈশবীয় মৃগীরোগের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি লাইফের জন্য চিকিৎসকরা একটি চিকিৎসা বা চিকিৎসার সমন্বয় প্রয়োগ করতে পারেন।’ দুটি যুগান্তকারী মেডিকেল আবিষ্কার মৃগীরোগের সমাধান বের করতে ভ‚মিকা রেখেছে। ডা. গুপ্তের মতে, ‘আমাদের জেনেটিক ফ্যাক্টরের অনেক তথ্য রয়েছে, এখন আমরা বুঝতে পারছি যে মৃগীরোগ বংশগত কারণে হয়ে থাকে এবং আমরা উন্নত ইমেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রেইনের ভেতরটা দেখতে পাই, ফলে ব্রেইনের কোনো অস্বাভাবিকতা আমরা নিণর্য় করতে পারি।’

ষ স্ট্রোক

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি স্ট্রোক বা ব্রেইন অ্যাটাকের ঘটনা ঘটে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের কাডির্ওভাস্কুলার সেন্টারের ডিরেক্টর এম সাজাম হুসাইন বলেন, ‘আমরা টিস্যু প্লাসমিনোজেন অ্যাক্টিভেটরের (টিপিএ) মতো ক্লট বøাস্টার ব্যবহার অথবা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধাদানকারী রক্ত জমাটবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে অ্যাকিউট স্ট্রোকের চিকিৎসা করে স্ট্রোক নিরাময় করে থাকি।’ স্ট্রোক প্রতিরোধ ভালো থেকে ভালো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে ভবিষ্যৎ স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য আমাদের অনেক নতুন অপশন রয়েছে, যেখানে ভালো ওষুধ ও স্ট্রাটেজি অন্তভুর্ক্ত। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে মিনি স্ট্রোকের পর বড় স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, বিশেষ করে প্রথম কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পর। আমরা আবিষ্কার করেছি যে রক্তকে অত্যধিক পাতলা করে এবং রিস্ক ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণে রেখে এসব বড় স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়।’ স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রæত জরুরি মেডিকেল সেবা নিন। আপনি যত দ্রæত মেডিকেল সেবা নেবেন, আপনার মস্তিষ্ক রিকভার করার সম্ভাবনা তত বেশি।

ষ সিস্টিক ফাইব্রোসিস

সিস্টিক ফাইব্রোসিস হচ্ছে একটি প্রগ্রেসিভ, জেনেটিক রোগ। এটি দীঘর্স্থায়ী ফুসফুস ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। সিএটিআর নামক জিনে মিউটেশনের ফলে সিস্টিক ফাইব্রোসিস হয়ে থাকে। সিআরআইএসপিআর টেকনোলজি হচ্ছে জিনোম এডিটিংয়ের জন্য একটি পাওয়ারফুল টুলÑ এটি গবেষকদের সহজে ডিএনএ সিকোয়েন্স পরিবতর্ন এবং জিন ফাংশন মডিফাই করতে সাহায্য করে। এটির অনেক শক্তিশালী অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে জেনেটিক ত্রæটি সংশোধন এবং রোগের চিকিৎসা ও রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ অন্তভুর্ক্ত। একটি ভাসর্ন (সিআরআইএসপিআর-ক্যাস ৯) সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হেমোফিলিয়া, সিকেল সেল রোগ, জেনেটিক অন্ধত্ব ও মাসকুলার ডিস্ট্রপি নিরাময়ে ভ‚মিকা রাখতে পারে। এটি মানুষের ওপর ট্রায়াল শুরু হয়েছে, কিন্তু প্রত্যাশা অনেক বেশি।

য় তথ্যসূত্র : রিডাসর্ ডাইজেস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<15894 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1