শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উপলব্ধি

শেখ বিপস্নব হোসেন
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তখন আমি খুব ভীতু ও দুর্বল ছিলাম। আমার এক ক্লাসমেট খুব দুষ্ট ছিল। সে প্রায়ই আমাকে এটাসেটা কিনে খাওয়াতে বলতো। না দিলে ও আমাকে মারতো আর ভয় দেখাতো। বাবা আমাকে প্রতিদিন টিফিনের জন্য যে টাকা দিতেন, তা ওর পেছনেই খরচ হয়ে যেত। আমার আর টিফিন করা হতো না। আমি এ বিষয়ে বাবাকে কিংবা ক্লাসের স্যারদেরও বলতে সাহস পেতাম না ওর ভয়ে। কারণ, আমার ওই ক্লাসমেট আমাকে এই বলে ভয় দেখাতো যে, আমি যদি কাউকে এ সব বলে দিই তো সে আমাকে রাস্তায় ধরে মারবে। মাঝে মাঝেই আমি বাবার পকেট থেকে না বলে টাকা নিতাম। আর ভাবতাম, বাবা হয়তো বিষয়টি জানেন না। এই কুবুদ্ধিটা ওই দিয়েছিল একদিন।

হঠাৎ একদিন আমার ক্লাসের জামিল স্যার এ বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে আমাকে ডেকে বললেন, 'কী ব্যাপার অহিদুল? তোমার পকেটে এত টাকা কেন?' স্যারের কথা শুনে তো আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। কী করি কী করি। পরে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।

আমি স্যারকে বানিয়ে বললাম, 'স্যার! বাবা দিয়েছেন।' কিন্তু, স্যার আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। বিশ্বাস না করারই কথা। কারণ, আমার হাতে তখন চকচকা একটা একশত টাকার নোট। তা ছাড়া স্যার জানেন যে, বাবা কখনো এত টাকা টিফিনের জন্য দেন না। স্যার বললেন, 'অহিদুল! তুমি সত্যি করে বলো! টাকাগুলো কোথায় পেয়েছ? তোমার বাবার পকেট থেকে টাকাগুলো সড়াওনি তো?' আমি আবার স্যারকে মিথ্যা বললাম, 'না স্যার। বাবা দিয়েছেন।' স্যার আমাকে আর কিছু বললেন না।

কিন্তু, ক্লাস শেষে যখন বাসায় ফিরলাম, তখন বুঝতে পারলাম, স্যার বাবা-মাকে ব্যাপারটা বলে দিয়েছেন। কী আর করা! মায়ের হাতের পিটুনি এবং বকুনি দুটোই খেলাম! ভাবলাম, মা যদি বাবাকে বিষয়টি বলে দেয় তো আর রক্ষা নেই! না জানি আজ আমার কপালে আরো কত দুঃখ অপেক্ষা করছে! বাবা যে শুধু আমাকে শাসনই করেন তা নয়, ভালোও বাসেন অনেক। কিন্তু, বাবা একরার রেগে গেলে আর তার হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই। তাই বাবার হাত থেকে বাঁচার জন্য রাতে কিছু না খেয়েই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।

বাবা, রাতে বাসায় এসে আমাকে ঘুম থেকে টেনে ওঠালেন। আদর করে নিজ হাতে খাইয়েও দিলেন আমাকে। তারপর আমাকে বাবা বললেন, 'দেখ বাবা! আমিও তোমার মতো ছোট সময় অনেক দুষ্ট ছিলাম। কিন্তু, আজ তুমি যা করেছ এটা ঠিক করনি। তোমার স্যার আমাকে সব বলেছেন। কারণ, কাউকে না বলে কিছু নেওয়াটা যেমন অন্যায়, তেমনি মিথ্যা কথা বলাটাও মহাঅন্যায়, মহাপাপ। যারা এরকম অন্যায় কাজ করে, মিথ্যা কথা বলে, তারা কখনো সমাজের ভালো মানুষ হতে পারে না। আর ভালো মানুষ কখনো এরকম মন্দকাজ করে না। আমার বিশ্বাস, তুমি হয়তো এসব নিজের ইচ্ছায় করোনি। যাইহোক, আর না বলে কখনো কারো কিছু নেবে না। কখনো মিথ্যা কথা বলবে না। কারণ, আমিও চাই তুমি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোল!

আজ থেকে পণ কর, জীবনে আর কোনো মিথ্যা কথা বলবে না। কোনো প্রকার খারাপ কাজে লিপ্ত হবে না! একটা কথা মনে রেখ, স্কুলে কিংবা অন্য কোথাও যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হও, তাহলে নিজের মাঝে সব কথা লুকিয়ে রেখ না। বাসায় আমি অথবা তোমার আম্মাকে নির্দ্বিধায় বলতে পার। কারণ, একজন ছেলে বা মেয়ের প্রকৃত বন্ধু হচ্ছে তার পরিবারের লোকজন। মানে বাবা-মা। আশা করি, পরে তুমি আর এরকম কিছুই লুকাবে না। কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।'

আমি বাবার কথাগুলো শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেই ফেললাম। বাবাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। আমি আমার ভুলগুলো সহজেই বুঝতে পারলাম। আর মনে মনে স্থির করলাম যে, আমি আর কখনো মিথ্যা বলবো না, কাউকে আর কখনো ভয় করব না। জীবনের বাকি পথটুকু সাহসের সঙ্গে ও ন্যায়ের পথে চলব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88526 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1