শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদির ছুটির সকাল

মনিরা মিতা
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আজ শুক্রবার, স্কুল নেই। তাই আজ হৃদিকে কেউ ডাকেনি; কিন্তু সকাল ৭টা বাজতে না বাজতেই ওর ঘুম ভেঙে গেল। রোজ এসময় উঠত হয়তো তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। অন্যদিন হলে মা এতক্ষণে হৃদিকে স্কুল ড্রেস পরিয়ে দিতেন। পিছন পিছন ছুটতেন রুটি আর ভাজি নিয়ে। আজ মাও আরাম করে ঘুমোচ্ছে। হৃদির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বেলকোনি, তাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই সে ওখানে গিয়ে দাঁড়ালো। সকালের রোদে ঝলমল করছে চারপাশ। হৃদি বেলকোনিতে দাঁড়াতেই দুটো কাক এসে বসল কার্নিশে। প্রতিদিন সকালে হৃদি বেলকোনি এলেই ওরা হাজির হয়। হৃদি ওদের মুড়ি খেতে দেয়, ওরা মহানন্দে খেয়ে উড়ে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না, ওরা হৃদির বন্ধু। হৃদি ওদের সঙ্গে গল্প করে আকাশের গল্প, পাহাড়ের গল্প, বাতাসের গল্প, আকাশও ওর খুব পছন্দ। আকাশি রঙের আকাশ আর আকাশের বড় মেঘ, ছোট মেঘ, ফুলো মেঘ, তুলো মেঘ। ওরা অনেক মজা করে আকাশে, উড়ে বেড়ায় ঘুরে বেড়ায়।

রাতের বেলা সূয্যিমামা ঘুমাতে যায় তখন আলো থাকে না, অন্ধকার হয়ে যায় দুনিয়া, তারাদের পৃথিবী হয়ে যায় তখন আকাশ। ওরা মিটমিট করে জ্বলে আর আকাশের গায়ে লেপটে থাকে।

সাগরও খুব পছন্দ হৃদির। গতবছর বাবা-মায়ের সঙ্গে কুয়াকাটা গিয়েছিল সে। কি যে মজা করেছিল! বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সাগর কোলে। বাতাসের শাঁ শাঁ শব্দ। ঢেউয়ের গর্জন। অনেক সময় গোসল করেছিল সে সাগরে। হৃদি প্রতিদিন মাকে বলে 'আম্মু আবার কবে যাব কুয়াকাটা?' আম্মু বলে তুমি বড় হও তারপর। কিন্তু হৃদিও এখন অনেক বড় হয়েছে। বৃষ্টিও খুব ভালো লাগে হৃদির। মেঘেদের যখন খুব মন খারাপ হয় তখন ওরা কালো হয়ে যায়। তারপর একসময় কেঁদে ফেলে আর ওদের কান্নাই বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেয় গাছ, পাতা, ফুল হৃদি এসব আনমনে ভাবছে আর কাক দুটোকে মুড়ি খেতে দিচ্ছে। হঠাৎ দেখে খুব সুন্দর একটা প্রজাপতি বেলকোনির কোণে বসে পাখা দুটো মেলছে আর বন্ধ করছে। কি সুন্দর নকশা করা ওর পাখা দুটো যেন রূপকথার নকশীকাঁথা। হৃদি হাত বাড়িয়ে ধরতে চায় ওকে কিন্তু পারে না। হৃদির খুব ইচ্ছে করে ওকে ধরতে। হঠাৎ প্রজাপতি উড়ে দিয়ে হৃদিদের বিল্ডিংয়ের নিচের ঘাসে বসে। হৃদির মন বলে ওখানে গেলে ঠিকই সে ধরতে পারবে প্রজাপতিটা তাই সে কাউকে কিছু না বলে ঘর ছেড়ে নিচে নেমে যায়। হৃদি সেই ঘাসের কাছে এগিয়ে গেল ওকে ধরতে সেই ও ফুড়ুত করে উড়ে অন্য জায়গায় চলে গেল। হৃদিও ছোটে ওর পিছু পিছু। এভাবে অনেকক্ষণ সে দৌড়াতে থাকে প্রজাপতির পিছু পিছু, ছুটতে ছুটতে প্রজাপতিটা হারিয়ে ফেলে হৃদি গাড়ির হর্নে চমকে ওঠে। এ কি সে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে! চারদিকে তাকায় হৃদি। সব অচেনা, এ কোথায় এসে পড়েছে সে! প্রজাপতির পিছু ছুটতে ছুটতে কোথায় কোন গলিতে এসেছে হৃদি বুঝতে পারে না। এখন কীভাবে ঘরে ফিরবে সে? কোথায় পাবে আব্বু-আম্মুকে? দুচোখ ফেটে-কান্না আসে ওর। পাগলের মতো দৌড় দেয়। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ... আহ্‌। জোরে কেঁদে ফেলে হৃদি।

কারও মমতাভরা ডাক কানে আসে হৃদির। চোখ খুলে দেখে সে ঘরের মেঝেতে, মা-বাবার পাশে বসে আছে। মা বলছে খাট থেকে পড়ে গেছ মা? খুব ব্যথা পেয়েছে?

তাহলে এতক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিল হৃদি? উহ্‌ ... স্বপ্নের শেষটা কি ভফঙ্করই না ছিল। না, স্বপ্নেও হৃদি কখনো একা ঘরের বাইরে যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78731 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1