শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

কয়েন কাÐ

রুমান হাফিজ
  ০৮ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

রোদ, বৃষ্টি, রোগ-শোক সবকিছু ছাপিয়ে রিপা ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হবেই, এতে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই!

অত্যন্ত ভালো এই গুণের জন্য রিপা যে শুধু শিক্ষকদের প্রশংসাই কুড়িয়েছে তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি ক্লাস উপস্থিতির জন্য সেরা পুরস্কারটা তার ঝুলিতেই জমা পড়ছে। টানা তিন বছর থেকে এই পুরস্কারের একচ্ছত্র মালিক রিপা! যেন আর কেউ এতে ভাগ বসাতেই পারবে না।

রিপা চতুথর্ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের রোল নম্বর দুই।

পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী। মাঝেমধ্যে আম্মু কোনো কারণে স্কুলে আসতে নিষেধ করলে রিপার ভীষণ মন খারাপ হয়। তবে আম্মু যৌক্তিক কারণ ছাড়া এমনটা বলেন না। এই তো কয়েকদিন আগে প্রবল ঝড় আর খারাপ আবহাওয়ার কারণে স্কুলে যেতে বারণ করেছিলেন। কে মানে কার কথা!

রিপাদের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মতো। এই পথটুকু প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে যায়। এক কথায় ‘স্কুল পোকা’ রিপাকে কোনো অবস্থাতেই ক্লাস মিস করানো সম্ভব নয়।

স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন আম্মু কিছু টাকা রিপাকে দেন। টাকার জন্য আম্মুকে কখনো বলা লাগে না। টিফিনের জন্য দেয়া টাকা থেকে কিছু বঁাচিয়ে রাখে রিপা। আম্মুর দেয়া টাকার পরিমাণ যতই হোক, সেখান থেকে রিপা কিছুটা জমিয়ে রাখে। সেই জমিয়ে রাখা টাকাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই কয়েন। এই ধরো, এক টাকা, দুই টাকা কিংবা পঁাচ টাকার কয়েন।

আর বঁাচিয়ে রাখা টাকাগুলো রিপা তার আম্মুর বিছানার নিচে রাখত। এভাবে অনেক টাকা জমা হয়ে যায়। রিপা ক্লাস যেভাবে মিস করে না ঠিক তেমনিভাবে টাকা জমানোও মিস করে না। ঈদের সময় পাওয়া সালামি কিংবা বড়দের থেকে পাওয়া বিভিন্ন সময়ের সব টাকাই রিপা জমা করে রাখে। বিশেষ করে কয়েনগুলো। জমানো কয়েনগুলো নিয়ে মাঝেমধ্যে বিছানার ওপর খেলতে বসে। খুবই ভালো লাগে রিপার।

এর কিছুদিন পর জমানো টাকাগুলো একসঙ্গে করে দেখবে বলে যেই না বিছানা তুলেছে রিপা তো একেবারেই ‘থ’ হয়ে যায়। একি! টাকাগুলো খুবই এলোমেলোভাবে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আবার টাকার পরিমাণও অনেকটা কম মনে হচ্ছে। কান্নাজুড়ে দেয় রিপা। সঙ্গে সঙ্গে আম্মু চলে আসেন।

-কি রে রিপা, কি হয়েছে?

-এই দেখো, আমার জমানো টাকাগুলো কে নিয়ে গেছে। কঁাদো কঁাদো কণ্ঠে উত্তর দেয় রিপা।

-কি বলিস! এটা কীভাবে হলো?

-এখন আমি কি করব আম্মু? আমার এতগুলো টাকা...

আচ্ছা কেঁদো না আমার ল²ী আম্মুটা। আমি দেখতেছি, কেমন!

এমন সময় এসে হাজির হয় নাহিদ। রিপার একমাত্র ছোট ভাই। বয়স মাত্র চারে পড়েছে।

হাত-পায়ে ময়লা দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করেন,

-নাহিদ, কোথায় ছিলে আর তোমার এমন অবস্থা কেন?

-আম্মু, আমি বাইলে খেলতে ছিলাম।

আম্মু আবার প্রশ্ন করার আগে নাহিদই প্রশ্ন করে বসে,

-আম্মু, আমার বলাপু কঁাদছে কেন?

আম্মু নাহিদকে বুঝিয়ে বললেন।

নাহিদ ঝটপট স্বীকারোক্তি দেয়,

-আম্মু, বলাপুর টাকা আমি চুলি কলেছি! তখনো হাসি লেগে আছে নাহিদের মুখে।

কি বলবেন আম্মু কিছু বুঝতে পারছিলেন না।

-আচ্ছা, টাকাগুলো কই?

-আম্মু, আমরা টাকা দিয়ে খেলেছি। তালপল টাকাগুলো ফেলে দিয়েছি!

-এটা মোটেও ভালো কাজ করোনি নাহিদ। এখন তোমাকে কি শাস্তি দিই বলো?

নাহিদ কোনো উত্তর দেয় না। আম্মুর কড়া কথা শোনে নাহিদ তার রিপা আপুকে জড়িয়ে ধরে।

রিপা তখন অশ্রæ ভেজা মুখে মৃদু হেসে নাহিদকে জড়িয়ে ধরে। পাশ থেকে দঁাড়িয়ে আম্মুও তখন হাসতেছিলেন।

-আচ্ছা, রিপা কোনো চিন্তা করো না। আম্মু তোমাকে আবার তোমার সব কয়েনগুলো এনে দেবো। ঠিক আছে।

তখনি রিপার কোলে বসে নাহিদ জিজ্ঞেস করে,

-এই বলাপু, কয়েন কি?

নাহিদের প্রশ্ন শুনে মা-মেয়ে দুজনেই সমস্বরে হাসিতে ফেটে পড়েন, সঙ্গে নাহিদও!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<6968 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1