মা, তাহলে আমি যাই।
- যা বাবা। যাবি যখন হাসিমুখে যা। মুখ কালো করে কেউ কি বাড়ি থেকে বের হয়?
- ভয় হয় মা আশ্রমের স্যার যদি..!
- বকবে। শাস্তি দেবে এই তো! বলবি আমাকে দেখতে এসেছিস।
- যদি বলে আশ্রম প্রধানের অনুমতি নিয়ে আসিনি কেন?
- বোকা ছেলে আমার। বলবি ভুল হয়ে গেছে। ভয় পাসনে তো। আশ্রম স্যার তোকে বকবে না। কোনো শাস্তিও দেবে না।
যা বাবা ভালোমতো লেখাপড়া করিস।
সারাদিন বৃষ্টি। থামবার নাম নেই। মানিক গ্রামের এক কাকার সঙ্গে অনেকটা কাক ভেজা হয়ে আশ্রমে পৌঁছল।।
আশ্রমে পৌঁছল ঠিকই। কিন্তু মন থেকে ভয় পালালো না। সহপাঠী কাজল বলল, 'পন্ডিত স্যারের ক্লাস ফাঁকি। কাল দেখাবে মজা।'
- মজা মানে? শাস্তি দেবে এই তো! কি আর করা শাস্তি মেনে নেব।
- চিন্তা করিস না। গতকাল পন্ডিত স্যার আমাদের সঙ্গে গল্প করেছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে আলাপ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন সংকেতের বর্ণনা দিয়েছে।
- তাই নাকি? আমি তো ভয় পাচ্ছি।
পরের দিন ক্লাসে পন্ডিত স্যার মানিককে বলল, 'দুদিন স্কুলে আসনি কেন? ঠিক ঠিক উত্তর দেবে কিন্তু...
- মাকে দেখতে গেলাম স্যার। বাড়িতে মা একা থাকে তাই। বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর আমাদের গ্রাম। সমুদ্রের কাছাকাছি স্যার...।
- কি বলো। জানতাম না তো!
- আশ্রমে সবাই যখন ঘূর্ণিঝড় ফণীর কথা বলাবলি করছিল তখন মায়ের কথা ভেবে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলাম স্যার...।
- একি! মানিক কাঁদছো কেন? তুমি তো ভালো কাজ করেছ। বিপদের সময় মায়ের কাছে চলে গেছ।
- মা আমাকে বলেছে স্যার, 'তোমার স্যারকে আমার কথা বলো। দেখবে তোমাকে কোনো শাস্তি দেবে না।
- না না তোমাকে শাস্তি দেবো কেন। তুমি তো মাতৃভক্তির প্রমাণ দিয়েছ। দুর্যোগের দিন মায়ের সঙ্গে গিয়ে থেকেছ।
আজ যে চলে এলে?
- মা বলল ফণীর ভয় কেটে গেছে। মা পাঠিয়ে দিল। তাই চলে এলাম।
- তোমাদের এলাকার লোকজন ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন সংকেত সম্পর্কে জানে?
- হঁ্যা স্যার জানে। আমাদের এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আগে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলে। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মা তো নিয়মিত রেডিও শোনে।
স্কুল ছুটির পর মানিকের আনন্দ আর কে দেখে। মানিক মনের আনন্দে বলে, 'মা তোমার কথাই ঠিক। তোমার কথা বলাতে স্যার আমাকে কেন শাস্তিই দিল না।