অন্তুর বুদ্ধি খুলছে না। সবাই বোকা বলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। টিটকারী করে। এ নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তার অন্ত নেই। একদিন বাসায় এলো ছোট মামা। বাবা মা ছোট মামাকে বলল অন্তুর কথা। জানো বাবু, আমাদের অন্তুর বুদ্ধি খুলছে না। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। সব কাজ করে বোকার মতো।
ছোট মামার নাম বাবু হলে কী হবে? সে কিন্তু আদৌ বাবু নয়। অনেক বড়। পড়ে ঢাকায়। নামিদামি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোট থাকতে নানা-নানি তাকে আদর করে বাবু ডাকত বলে এখনও সবাই তাকে বাবু বলেই ডাকে। সব শুনে ছোট মামা মাথা চুলকাল। বলল, দেখি কি করা যায়?
কিছুদিন পর ছোট মামা আবার বাসায় এসে হাজির। হাতে একগাদা গল্পের বই। গল্পের বই দেখে অন্তু খুব খুশি। সব বই নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। একটা বইয়ে গিয়ে চোখ আটকে গেল তার। বইয়ের নাম ‘নীল হাতি’। লেখক হুমায়ূন আহমেদ। হাতির বই! খুশিতে অন্তুর চোখ চকচক করে ওঠে। হাতি যে তার খুব প্রিয়। কিছুদিন আগে গ্রামে হাতি এসেছিল। কী বিশাল বড় হাতি রে বাবা! কুলার মতো বড় বড় কান । খুঁটির মতো বড় বড় পা। পা ফেলে ধপাস ধপাস করে। কী সুন্দর করে শুঁড় দোলায়! শুড় দিয়ে সালাম করে। টাকা নেয় । অন্তু তো হাতির পেছনে পেছনে পুরো গ্রামটাই ঘুরল ।
সেই যে অন্তুর হাতিকে ভালো লাগা শুরু হলো ।
নীল হাতি বইটি নিয়ে অন্তু পড়া শুরু করল।
পরেরদিন অন্তু স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের বলল, বলো তো তোমরা, কখন তিন আর এক যোগ করলে পঁাচ হয়?
সব বন্ধুরা হতভম্ব। তারা মাথা চুলকায়। উত্তর দিতে পারে না।
ক্লাসে অঙ্ক স্যার এলেন। সবাই স্যারকে বলল, স্যার, কখন তিন আর এক যোগ করলে পঁাচ হয়?
স্যারও হতভম্ব। বিব্রত। তিনিও উত্তর দিতে পারেন না। মাথা চুলকান; কিন্তু কিছু তো একটা বলতে হবে। বললেন, কখনো তিন আর এক যোগ করলে পঁাচ হয় না ।
পিছন থেকে লাফিয়ে উঠে অন্তু। হয় স্যার।
স্যার অবাক। কখন?
যখন কেউ অঙ্কে যোগ ভুল করে।
সবাই থ । ঠিকই তো!
স্যার বিব্রত। এত সহজ উত্তরটা মাথায় এলো না কেন? তিনি ভাবলেন অঙ্কে টেনেটুনে ৩৩ পাওয়া ছেলেটা এরকম মজার অংক শিখল কি করে?
অন্তু কিন্তু কাউকে কিছু বলল না।
ছোট বন্ধুরা, আমি তোমাদের কানে কানে চুপিচুপি বলে দিচ্ছি, অন্তু কিন্তু এই অঙ্কটা শিখেছে হুমায়ূন আহমেদের নীল হাতি বই থেকে।
আস্তে আস্তে অন্তুর বুদ্ধি খুলে গেল। সে চালাক হলো। মাথায় ভালো বুদ্ধি এলো।
বন্ধুরা এখন আর অন্তুকে বোকা বলে টিটকারী করে না। বরং ভয় পায়। বেশি কথা বলে না। এড়িয়ে চলে। না জানি কখন আবার কী প্রশ্ন করে বসে। বোকা বানিয়ে দেয়।
সবার কাÐ দেখে অন্তু মুখ টিপে হাসে।
বাষির্ক পরীক্ষা এলো। অন্তু পরীক্ষায় প্রথম হলো। সবাই অবাক।
স্যার বলল, অন্তু, তুমি হঠাৎ এত ভালো ছাত্র হলে কি করে? ক্লাসের লাস্টবয় থেকে ফাস্টর্বয়!
অন্তু হেসে বলল, বই পড়ে স্যার। আমি এখন সবসময় বই পড়ি। ছোট মামা আমাকে গল্পের বই পড়িয়ে বই পড়ার অভ্যাস শিখিয়েছেন ।