বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুষ্টুমির সাজা

অরুন কুমার বিশ্বাস
  ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দুষ্টু বলে দুষ্টু! কুসুমপুরের মহাডেঁপো ছেলে আমাদের অনিক। প্রাইমারির চৌকাঠ পেরোয়নি, অথচ এর মধ্যেই এই গঁায়ের সবাই তাকে চিনে ফেলেছে। অনিকের নাম বললেই সবাই একলাফে দুহাত পিছিয়ে যায়। পথচলতি কেউ ওর বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে ইশারায় দেখিয়ে দিয়েই অমনি তারা সটকে পড়ে।

ওর দুষ্টুমির ফিরিস্তি শুনতে চাও! শোনো তাহলে। ধরো তোমাদের বাড়ির পালানে নধর দেখতে দুখানা লাউ ধরেছে। সেই লাউ খাবার মতো বড় না হতেই অনিকের তাতে নজর লেগে যাবে। সে মনে মনে দিন গুণবে কবে কখন লাউখানা কেটে নেয়া যায়। না না, লাউ নিয়ে সে বাড়ি যাবে না, বাজারেও না। অন্যের টুকটাক অনিষ্ট করে বেজায় মজা পায় অনিক। ওর হাতে থাকবে একখানা ভাঙা বেøড নয়তো ¯্রফে একটা গøাস। স্টেনলেস স্টিলের গøাস কিনা, কিনারায় বেশ ধার। লাউজাংলার ধারে কাছে অনিক ঘোরাঘুরি করবে কতক্ষণ। এমন ভাব করবে যেন সে বকেদের ওড়াউড়ি দেখছে।

তারপর যেই দেখবে কাছেপিঠে কেউ কোথাও নেই, অনিক অমনি স্টিলের গøাসের এককোপে লাউয়ের অধের্কটা কেটে নিয়ে দে চম্পট। সেই লাউ খাবে নাকি নষ্ট করবেÑ সেটা নেহাতই অনিকের বিবেচনা।

কেউ কিছু বললে এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে সে বলে, উঁহু! আমি মানুষ তত মন্দ নই। পুরো লাউ তো নিইনি, আদ্দেকটা আমি গাছের মালিকের জন্য রেখে গেছি।

এই হলো গিয়ে আমাদের স্কুলের ক্লাস-ফোর পড়ুয়া ডাকাবুকো ছেলে অনিক। ভয়ডর কী জিনিস সে জানে না। ওর কাছে দিন-রাত্তির সব সমান। বটগাছ, ডুমুরগাছ বা শেওড়া গাছÑ কোত্থাও যেতে সে ভয় পায় না। ভ‚তের কথা উঠলে বলে, ফুঃ! ভূত আমার পুত, পেতিœ আমার ঝি। শেওড়াগাছের প্রেত তুই করবি আমায় কী! ছড়াটা পুরনো, তাতে কী! একা হলেই আনমনে ছড়াখানা আওড়ায় আমাদের অনিক।

ক্লাসেও সে মোটে সুস্থির নয়। টিচার একটু চোখের আড়াল হলেন কি হলেন না, সে অমনি পেছনের দুয়ার দিয়ে ঘুড়ির মতো ভোকাট্টা! কে গেল, কে গেল! টিচার চেঁচান, কিন্তু ততক্ষণে অনিক আর নেই, সে হাওয়া। শচীন তেন্ডুলকারের ব্যাটিংয়ের মতো মারের চোটে বল সীমানার বাইরে।

আবার কখনো আরো বাজে কোনো দুষ্টুমি করে বসে অনিক। টিচার ক্লাসে ঢুকলেন। তাকে সম্মান জানাতে ছাত্ররা সবাই বেঞ্চি থেকে উঠে দঁাড়ায়। অনিকও দঁাড়ায়, তবে ওর হাতে থাকে একখানা পেন্সিল। পেন্সিলের যে ধারালো বা চোখা দিক, সেটা পেতে রাখে পাশে যে বসেছে তার বেঞ্চিতে। তারপর কী হলো! সে তোমরা ভালোই জান নিশ্চয়। পাছায় খেঁাচা খেয়ে বেচারা চেঁচায়।

টিচার ভয়ানক রেগেমেগে ডেকে নেন অনিককে। চিকন বেত দোলান। মারতে যাবেন, অনিক অমনি আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলে, স্যার, আমরা আপনার সন্তানের মতো। নিজের সন্তানকে কেউ বেত মারে! তা ছাড়া স্যার, গায়ে হাততোলা তো আইনে নিষেধ। বলুন স্যার, বেতমারা ছাড়া আর কী শাস্তি দেবেন। মাথা পেতে নেব।

স্যার পড়ে যান মহাফঁাপরে। এমন ত্যঁাদোর ছেলেকে মেরে তিনি আবার কোন ফ্যাসাদে পড়বেন কে জানে। কিন্তু ডেকে যখন এনেছেন, কিছু না কিছু তো করতেই হয়। শেষে টুকটাক কান মলে বলে দেন, দ্যাখ অনিক, ফের যদি এমন করেছিস, মেরে তোর হালুয়া টাইপ করে দেব। তাতে আবার সারা ক্লাসে হাসির রোল ওঠে। স্যার নাকি হালুয়া শক্ত করবেন! পারবেন কি! অনিক যা বিচ্ছু! এ তল্লাটে এমন কে আছে, যে কি না তাকে ভয় পায় না।

সামনে পৌষমেলা। মেলায় এবার মোরগলড়াই হবে। জিতলে ভালো প্রাইজ আছে। স্মাটের্ফান নাকি দেয়া হবে। আরো আছে ভরপেট রসগোল্লা খাবার সুযোগ। অনিক জানে এই লড়াইয়ে তার একমাত্র প্রতিযোগী কাজল, যে কিনা এক ঢুস মেরে তাকে মাটিতে ফেলে দিতে পারে।

অমনি অনিকের মাথায় বদমতলব চক্কর দেয়। যেমন করে হোক, কাজলকে ঠেকাতে হবে। কিন্তু কীভাবে! আইন ভেঙে তো কিছু করা যাবে না। কৌশলে কাজ করতে হবে। মাথা ঠাÐা রেখে।

কাল মোরগলড়াইয়ের দিন। যা করার আজকেই করতে হবে। অনিক এক কাজ করল। ওর আরেক দুষ্টু স্যাঙাতকে নিয়ে মেলার মাঠের সবচে চিপা জায়গায় ছোট্ট একটা গতর্ খঁুড়লো। অনিক জানে, কাজল আজ সন্ধ্যার দিকে একবার মেলার প্রস্তুতি দেখতে আসবে। তখন তাকে কৌশলে ওই গতের্র কাছে নিয়ে গিয়ে আলতো ঠেলা মেরে ফেলে দিতে হবে। তাতেই পা মচকাবে কাজলের। তখন সে আর মোরগ লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবে না। আর এই সুযোগে অনিক খালি মাঠে গোল দেবে।

তোফা বুদ্ধি, তাই না। বুদ্ধি তো না, কুবুদ্ধি। অনিক তখনো জানত না যে, অন্যের ক্ষতির চিন্তা করলে আদতে নিজেরই ক্ষতি হয়। যারা ভাল, তারা অন্যের কীসে ভাল হয় শুধু তাই করে। আর আমাদের অনিক! পাজির পাঝাড়া, মহাদুষ্টু ছেলে।

ওর ইচ্ছেমতই সব হচ্ছিল। সঁাজের মুখে কাজল এলো মেলার মাঠ দেখতে। অনিক তক্কে তক্কে ছিল। যেমন করে হোক, তাকে গতের্র কাছে নিতেই হবে। কিন্তু তখনই বঁাধলো গোল। কে বঁাধালো! পাশের বাড়ির কালো কুকুর।

কী জানি কার তাড়া খেয়ে কুকুরটা এমন ক্ষেপামি শুরু করল! ঘেউ ঘেউ করতে করতে তেড়ে এলো অনিকের দিকে। ও ভাবলো যে কুকুরটা ‘পাগলা’ হয়ে গেছে। এই কুকুরে কামড়ালে নিঘার্ত জলাতংক রোগ হবে। তাই ভয় পেয়ে অনিকও ছুটতে শুরু করে। কুকুরের তাড়া খেয়ে বেখেয়ালে অনিক শেষে নিজের খেঁাড়া গতের্ই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সামনে ছিল কিছু বরইগাছের শুকনো ডাল আর কঁাটা। তাতে ওর মুখ ছিললো, আর পা মচকে খঁুড়িয়ে খঁুড়িয়ে সে বাড়ি ফিরল বটে। তবে দিন দশেক কেউ আর তার মুখ দেখতে পেল না। ডাক্তার এসে নাকি তার পা ব্যান্ডেজ করে গেছেন, আর বলে দিয়েছেন দিন পনেরো তাকে বিশ্রাম নিতেই হবে। এই কদিন তার অবস্থা একেবারে নট নড়ন-চড়ন।

তাহলে বোঝো, দুষ্টু অনিকের কেমন বিশ্রী সাজা হলো। অন্যকে ঠকাতে গেলে নিজেই ঠকতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<30082 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1