শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাকু

মুক্তিযুদ্ধের গল্প
মিতুল সাইফ
  ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা হাঁটতে থাকে লোকটা। সাদা পাঞ্জাবি ছোপ ছোপ রক্ত মাখা। ডান পায়ের ব্যান্ডেজ নিয়েই পা টেনে টেনে তবু দুবার্র গতি পা ফেলে চৌরাস্তা থেকে ডানে রেলস্টেশনের দিকে ছুটে চললেন তিনি। চারিদিকে নিঝ্ঝুম নীরবতা। যেন কোথাও কেউ নেই। মধ্য রাতের নিস্তব্ধতা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে গোটা সুন্দর পুর। অথচ তখন জলন্ত দুপুর। পাতা ঝরার শব্দেও চমকে উঠতে হয়।

তেমাথার চায়ের দোকান বন্ধ। দোকানের বঁাশের বেঞ্চে শুয়ে আছে পাগলা মাকু। লোকটাকে দেখে হাত তুলে সালাম দিয়ে মাকু জিজ্ঞেস করেÑ ভালো আছেন স্যার? আজ স্কুল হবে না ? আমি সেই কখন থেকে বসে আছি।

লোকটা অস্পষ্ট স্বরে বললেনÑ

Ñবাড়ি যা মাকু। চারিদিকে আগুন জ্বলছে দেখিসনি?

Ñকনে যাব? বাড়িতো পুড়িয়ে দিয়েচে।

Ñ তোর বাপ মা?

Ñ মারে মেরে ফেলেছে। বাজানরে ধরে নিয়ে গেছে। আমি পাগলাতো, তাই ছেড়ে দিয়েছে । তাও খুব মেরেছে। (হাতে পায়ের ফোলা আর রক্ত জমাট ক্ষত দেখায় মাকু)

Ñ খেয়েছিস কিছু?

Ñ মতি খাতি দিতো, সে তো আজ দুকান খোললে না। পুকুরির থেকে পানি খাইচি।

অত কথা ক্যান, আপনি কি খাতি দুবা?

Ñহ্যা দেবো। যাবি আমার সঙ্গে?

Ñখাতি পালি আমি সব জাগায় যাতি রাজি। চলেন স্যার।

স্যারকে এভাবে রক্ত ধুলো মাখা, আহত অবস্থায় দেখে চমকে যায় সুমন আর রফিক।

সুমন বলে

Ñকি করে হলো! আপনি ঠিক আছেন তো স্যার?

Ñধরে নিয়ে গিয়েছিলা। তোমাদের কথা জিজ্ঞাসা করছিল। বলিনি। তাই এ হাল করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে এসেছি। ও সব পরে শুনো। যদি পারো আগে মাকুকে কিছু খেতে দাও। ওর খুব খিধে পেয়েছে।

মাকু চিৎকার দেয় Ñখিদে লেগেচে খাতি দ্যাও। খুব খিদে। মতি নেই তা কিডা খাতি দেবে! ও সুমন ভাই খাতি দ্যাও। খুব কষ্ট হচ্চে।

থেকে থেকে অনগর্ল গুলি। মটার্র শেল বাতাস কঁাপিয়ে দানবের মতো আছড়ে পড়ে। গাছে গাছে সবুজ পাতারা পুড়ে ছাই। এখানে সেখানে আগুন জ্বলছে। লাশের গন্ধ। স্কুল পড়–য়া একমাত্র ছোট বোনকে নিযার্তন করে হত্যা করেছে পাকসেনা আর তাদের দোসররা। বোনের লাশ বুকে করে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে রফিক।

সুমন সহযোদ্ধা মুক্তিসেনাদের নিদের্শ দেয়Ñ সুন্দরপুর রেলস্টেশনে পাক আমির্ ক্যাম্প আজই দখলে নিতে হবে। আমাদের লোকবল অস্ত্র কম। কিন্তু আমাদের মনোবল সবার ঊধ্বের্। ভয় নেই। চারদিক থেকে ভালো খবর আসছে। আমরাই জিতব ইনশাল্লাহ। আমাদের মিশন যদি ব্যথর্ হতে বসে তবে খবর পাওয়া মাত্র এই মাইন বুকে বেঁধে ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা চালাব। ওই সময় পাহারার দায়িত্বে আমরা যে থাকব সেই করব এই কাজ। দেখে নাও কিভাবে করতে হবে। এসো মা মাটি দেশের নামে শপথ করি। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে শপথ নেয়। মাকু মনে মনে আওড়াতে থাকে কথাগুলো। স্যার সবাইকে সাহস দেন, বিজয়ের গল্প শোনান।

শেষ বিকেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে। অতকিের্ত আমির্ ক্যাম্পে মিশন চালায় সুমন, রফিক আর সহযোদ্ধারা। মাগরিবের আজানের আগেই শহীদ হন মহসীন স্যারসহ আরো অনেকে। বাকিরা আহতবস্থায় লড়তে থাকে। পরাজয়ের পূবার্ভাস জানিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কে একজন মুক্তিসেনা। কথা মতো আত্মঘাতী বোমা হামলায় পাক আমির্ ক্যাম্প চূণর্ বিচূণর্ হয়ে যায়। অবাক চোখে তাকায় সুমন। দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন দাশু গায়ে জ্বলন্ত আগুন নিয়ে একটু এগিয়েই সবুজ ঘাসে লুটিয়ে পড়ে। যেন সে বলতে চেয়েছিল পেরেছি, পেরেছি। রাতের ঘোর কেটে ওঠে নতুন সূযর্। বাতাসে ওড়ে বিজয়ের লাল সবুজ পতাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<26618 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1