শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত‚যর্ সবুজে সুন্দর

রুমানা নাওয়ার
  ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ত‚যর্ প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে যায় পাখির ডাকে। বারান্দার গাছগুলোতে দু-একটা পাখি এসে বসে কিচিরমিচির করে ডাকে। তাতেই ত‚যর্র ঘুম ভেঙে যায়। মাস দুয়েক আগেও যা অসম্ভব ছিল। তমা ছেলেকে ডাকতে ডাকতে ক্ষান্ত দিত অবশেষে। কখনো-সখনো হালকা মারধর বকুনিও করতে হতো সঙ্গে। তবুও অফিস যাওয়ার আগে ছেলেটাকে উঠানো সম্ভব হতো না।

একদিন পিয়াস ডেকে বলল ‘তমা আমাদের ব্যালকনিটা তো অনেক বড় খোলামেলা। অল্প গাছ লাগালে কেমন হয়?’ তমা সম্মতি জানালো। বারান্দাটায় সবুজের সমারোহ হবে। ত‚যর্টার জন্য খুব দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। পিয়াস নাসাির্র থেকে দশ পনেরটা বিভিন্ন ফুল, ফলের গাছ ও টব নিয়ে এলো। তমা ত‚যর্ পিয়াস মিলে অনেক ঘটা করে গাছ লাগালো।

ত‚যর্র প্রশ্ন ‘এগুলো কেন লাগাচ্ছো বাবা?

সুন্দরের জন্য, সবুজের জন্য লাগাই বাবা। শহরে বসবাস আমাদের। সবুজ গাছপালা তো দেখাই যায় না। তাই ঘরে একটু হলেও সবুজ প্রকৃতিটাকে রাখার চেষ্টা করছি।

কি বলো ত‚যর্ সোনা ভালো করছি না?

ত‚যর্ হেসে মাথা দুলিয়ে বললÑ অ-নে-ক ভালো বাবা।

মাস দুয়েকের মধ্যে গাছগুলো যতœআত্তি পেয়ে তরতর করে বেড়ে উঠল। চোখ জুড়ানো সুন্দর। পিয়াস, তমা অবসরটা এখানে কাটায় আজকাল। ত‚যর্ তো আছেই সারাক্ষণ।

তমার একটা দুঃশ্চিন্তা ঘুচলো। একটা না দুটো। ত‚যর্র তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা আর অফিস যাওয়ার আগে নিজ হাতে খাওয়াতে পারা। বুয়া সারাদিন কি খাওয়ায় না খাওয়ায় কিছুই দেখে না। সকালবেলায় একটু খাওয়াতে পারলে দিনটা সারাদিন ভালোই যায়।

ত‚যর্র দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে তমার চিন্তার অন্ত ছিল না। যখন স্কুল যাবে তখন কী হবে? আর এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে শেষ। সামনের বছর চারে পা রাখবে ও। তিন বছর যখন হলো তমা চেয়েছিল স্কুলে ভতির্ করিয়ে দিতে। কিন্তু পিয়াস বাগড়া দেয় তাতে। বলে, এত তাড়াতাড়ি স্কুলভীতি ঢুকিয়ে দিও না ওর ভিতর। ঘরেই পড়ুক আমার ছেলে। স্বরবণর্ ব্যঞ্জনবণর্ অষঢ়যধনবঃ-এর ধারণাগুলো আমরা দিই ছেলেকে। পরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পাঠাবো কি বলো?

পিয়াসের যুক্তিটা খারাপ লাগল না তমার। ঠিকই তো আছে। অ আ ক খ আমরা শিখাই। সায় দিল পিয়াসের কথায়।

অফিস শেষে ঘরে ফিরে দুজনই ছেলেকে নিয়ে বসে। যখন যার সময় হয়। সেভাবে ওরা পালা করে শিখাতে থাকে বণর্মালার অক্ষরগুলো। খুব বেশি সময় বসে থাকতে চায় না ত‚যর্। তবুও যতটুকু বসে ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট। ওই সময়টুকু কাজে লাগায় তমা আর পিয়াস। একটা বণর্ শিখাতে এর চেয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন আছে বলে মনে করল না ওরা। ওই সময়টুকু আনন্দঘন করে পাঠে মনোনিবেশ করায় ছেলের। ত‚যর্ ও মহা উৎসাহ নিয়ে পড়তে বসে। একদিন বাবার কাছে। অন্যদিন মায়ের কাছে। কত গল্প শোনায় বাবা-মা। পড়ার ফঁাকে ফঁাকে। কি মজা।

এভাবে ত‚যর্ খুশিতে হাসিতে শিখতে লাগল। লিখতে থাকল আজকে অ কালকে আ পরশু ই তারপরদিন ঈ। মাঝেমধ্যে তমা বকাবকি করে। ত‚যর্ যখন ফঁাকি দিতে চায় তখন। পিয়াস আশ্বস্ত করে তখন তমাকে।

এক আধ দিন এরকম ফঁাকি দিতেই পারে ত‚যর্র বয়সী যে কেউই। তাতে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। ও যেভাবে শিখছে এগুচ্ছে ওটায় বেষ্ট মনে করো। এর বেশি চাপ প্রয়োগে ওর মন বিগড়ে যাবে। ভীতি চলে আসবে। অনীহা সৃষ্টি হবে পড়ায়। তারচেয়ে এটাই ভালো। এভাবে চলুক। কি বলো?

প্রশ্ন ছুড়ে তমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল পিয়াস।

তমা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো পিয়াসের কথায়। কিছু কিছু জিনিস এত বেশি বোঝে পিয়াস। যুক্তিগুলো দঁাড় করায় সামনে। তমা যা একবাক্যে মেনে নেয়। পিয়াসের এ স্বভাবটা খুবই পছন্দ তমার। তমার হঠাৎ বিগড়ে যাওয়া মেজাজটাকে শান্ত করে দেয় পিয়াসের ধারালো যুক্তিগুলো।

অন্যসব বাবা-মায়ের মতো তমারও ইচ্ছা ছিল ত‚যর্টাকে স্কুলে পাঠাবে। তমার কলিগ শান্তনুর মেয়েটাও ত‚যর্র বয়সী। ওকেও স্কুলে ভতির্ করাচ্ছে যখন। তখন তমাও মন স্থির করল তার ছেলেকে দিয়ে দেবে স্কুলে। কিন্তু পিয়াসটা এত সুন্দর করে বোঝানোর পর। আর মন চাইল না দিতে। এত ছোটো বয়সে বাচ্চাগুলোকে দৌড়ঝঁাপের প্রতিযোগিতায় না পাঠিয়ে ঘরে পড়ানো ভালো মনে করল তমা। শান্তনুকে বলল পিয়াসের বলা কথাগুলো। শান্তনু আমল দিল না তেমন। বলল, আরে আমাদের ওই সময় কি আছে? ধরে ধরে অক্ষর জ্ঞান দেয়া। তার চেয়ে স্কুলে ভতির্ করিয়ে দিই। ওরাই দায়িত্ব নেবে সব।

তমা আর কথা বাড়ালো না। শান্তনুকে বোঝানো সম্ভব না ও বুঝে গেছে। তাই চুপ করে রইল। মাস দুয়েক পরে জানতে চাইল মেয়ের পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?

উত্তরে শান্তনু যা বলল তার জন্য তমা প্রস্তুত ছিল না একটুও।

তোমার কথা না শুনে ভুল করলাম মনে হয়। মেয়ে আমার কেমন বিমষর্ হয়ে থাকে সারাদিন। এত পড়ার চাপ। না পারছে শিখতে, না পারছে ফেলতে। দিশাহারা অবস্থা তার। প্রজাপতি মেয়ে আমার এখন কেমন হয়ে গেছে।

তমার বুক চিরে একটা দীঘর্ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।

ধন্যবাদ দিল মনে মনে পিয়াসকে। শান্তনুর মেয়ের জায়গায় ত‚যের্ক ভাবল তমা। দিনে একটা বণর্ শিখাই আমার ছেলেকে আমরা। একদিনে দশ বিশটার ভার সইতে পারবে না জেনেই। একটু একটু করে আগাচ্ছি আমরা ত‚যের্ক নিয়ে। আমার মনে হয় আমাদের মতো প্রতিটি বাবা-মায়েরই এটা করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<15419 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1