শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

শিয়াল ও হঁাসের বন্ধুত্ব

মোছা. শাকিলা আক্তার
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বহু বছর আগে, এক দেশে ছিল এক হঁাসের রাজা। তার দলে থাকত বিশ বাইশটির মতো হঁাস। তাদের নিয়ে তার নিজে হাতে গড়া তার রাজ্য। হঁাসের রাজা এক সময় বিয়ে করে ফেলে কোন দেশের এক হঁাসের রানীকে। বেশ সুখেই দিন কাটছিল তাদের। দেড় বছর পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় এক ছেলে হঁাস। সে কী আনন্দ রাজার ছেলে সন্তান পেয়ে। ইচ্ছা করেই ছেলে হঁাসের নাম রাখে হঁাসা। হঁাসার জন্মের পর থেকেই একা। কারণ হঁাসার সঙ্গে মিশতে পারত না অন্য অন্য হঁাসের মেয়ে ছেলেরা। তাই সব সময় পোকামাকড়ের সঙ্গে খেলা করে দিন কাটাতো হঁাসা। বাবা-মা যে সব খাবার এনে দিত হঁাসা তাই খেত। সে কোনো দিন খাদ্য সংগ্রহ করে খায়নি।

একদিন রাতে রানী আর রাজা এক পাহাড়ের কোণায় বিশ্রামের সময় রাজাকে বলল, রানী আমাদের ছেলে হঁাসা এখন বড় হয়েছে ওকে নদীতে নিয়ে যাওয়া উচিত। ওকে সঁাতার শিখাতে হবে। তাই রাজা হঁাসাকে ডাকল। হঁাসা এলে বাবা বলল, হঁাসা তুমি কাল থেকে আমার সঙ্গে নদীতে যাবে। হঁাসা বলল, বাবা আমি তো এখন বড় হয়নি, তোমার মতো। রাজা বলল, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব। তুমি এখন আসতে পার। হঁাসা চলে গেল তার রুমে। রুমে গিয়ে ভাবছে হ্যঁা আমি সঁাতার শিখব এবং সেখানে অনেক বন্ধু পাব। ঘরে একা একা আর ভালো লাগে না।

পরের দিন সকালে, হঁাসা বাবা-মা ও অন্যদের সঙ্গে চলল নদীর দিকে। হঁাসা চারদিক তাকিয়ে দেখছে এত সুন্দর এলাকা আমি তো এর আগে কোথাও দেখিনি। হঁাসা, হঁাটতে পারছে না। এমন সময় রাজা হঁাস এক হঁাসকে বলল, হঁাসাকে ভালোভাবে বোঝাও এখানে কী কী ভয়ানক জীবজন্তু আছে। সেই হঁাসটি হঁাসাকে বলছে, এখানে শিয়াল নামে বেশকিছু পÐিত আছে। হঁাসা সেই হঁাসটির দিকে মনোযোগ নাই তবুও বলল, শিয়াল পÐিত আবার কে? হঁাসটা বলল, শিয়াল ভয়ঙ্কর পশু ও আমাদের শত্রæ। ওকে দেখলে লুকিয়ে যাবে নইলে দৌড় দেবে নদীর দিকে। তাহলে ও আর ধরতে পারবে না। যদি ধরা পড় তাহলে কিন্তু তোমাকে খেয়ে ফেলবে। হঁাসটা বলেই যাচ্ছে এমন সময় হঁাসা দেখতে পেল একটা সুন্দর ঘাসফড়িং। পেছন থেকে হঁাসা দৌড় দেয় ফড়িংটার দিকে। সেই হঁাসটা কথা বলছেই সে যানে না হঁাসা পেছনে নেই। এখন তারা নদীতে নামবে এমন সময় হঁাসটা বলল, আস্তে আস্তে নামতে হঁাসাকে। হঁাসটা পেছনে তাকাতেই দেখল হাসা নাই। হঁাসটা রাজাকে বলল, কীভাবে পেছন থেকে হারিয়ে গেল হঁাসা। রাজা রাগে আগুন, রাজা বলল, একটা মাত্র ছেলে আমার, তাকে হারিয়ে ফেললে? তুমি যাও হঁাসাকে নিয়ে এসো। হঁাসটা আবার পেছনের দিকে এলো হঁাসার খেঁাজে।

এদিকে হঁাসা ফড়িংটার পিছেই দৌড়াচ্ছে। এমন সময় ফড়িংটা একটা গাছের ডালে বসে পড়ে। হঁাসাও একটু হঁাপাছে। হঁাসা বলল, ফড়িং ভাই তোমার নাম কী গো? আমি তোমার বন্ধু হতে চাই গো? তুমি কী আমার বন্ধু হবে? ফড়িং বলল, আমার নাম তিরিং। ফড়িং বলল, তোমরা তো আমাদের শত্রæ, তুমি আমার বন্ধু হবে কী করে। হঁাসা বলল, আমি তো জানিনা বন্ধু আমরা তোমাদের শত্রæ। তিরিং বলল, আমি আমার মার কাছ থেকে শুনেছি, তোমরা নাকি আমাদের খেয়ে ফেল। হাসা বলল, আমি তোমাকে খাব না, আমি তোমার বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। আমি কথা দিলাম তোমাকে কোনোদিন আমি খাব না। তিরিং বলল, ঠিক আছে আমি আজ থেকে তোমার বন্ধু হলাম। তারা কথা বলতেই আসে শিয়াল পÐিত। শিয়াল পÐিত বলল, শোনো তোমরা সবাইÑ আমি কী বলি। ঘাসফুড়িং বলল, বন্ধু এইটা শিয়াল তোমাদের বড় শত্রæ। শিয়াল বলল, আমি তোমাদের বন্ধু হবো। হঁাসাকে বলল, কী বন্ধু তুমি কী আমার বন্ধু হবে? হাসা বলল, আমি আজকেই প্রথম বাইরে বের হয়েছি। তার মধ্যে দুজন বন্ধু পেলাম। শিয়াল মনে মনে বলল, একবার শুধু রাজি হও পরে বুঝবে আমি তোমার বন্ধু না শত্রæ। হঁাসা বলল, আমার বন্ধু তিরিংয়ের সঙ্গে আগে কথা বলতে চাই। শিয়াল বলল, ঠিক আছে তোমরা কথা বলো। তিরিং আসলেই হঁাসার ভালো চায় না। কারণ ওর মাকে খেয়ে ফেলেছে এক হঁাস। সেই থেকে ঘাসফড়িংরা রাগে আগুন হঁাসদের ওপর, শুধু ওদের ওপর না। তারা রাগে আগুন মুরগিদেরও ওপড়। কারণ এক মুরগি ঘাসফড়িং তিরিংয়ের বাবাকে খেয়েছে। তিরিং মনে মনে বলল, এই-সুযোগ আর ছাড়া যাবে না। যাবে না। তিরিংয়ের সঙ্গে বুঝছে হঁাসা কী করা যায়। হঁাসা বলল, বন্ধু দেরি করো না শিয়ালের মতো বড় বন্ধু পৃথিবীতে আর কোথাও খঁুজে পাবে না। হঁাসা বলল, বন্ধু ঠিক আছে আমি তোমার কথাতেই রাজি হলাম। হঁাসা শিয়ালকে বলল, হ্যঁা বন্ধু আমি তোমার বন্ধু হয়ে গেলাম আজ থেকে। এর মধ্যে এসে হাজির সেই হঁাসটা। একটু দূরে থেকে দেখল শিয়ালের সঙ্গে হঁাসা কথা বলছে। তাই সে ভয়ে লুকায় আড়ালে। আকাশেরও অবস্থা ভালো না। চিন্তায় পড়ে যায় রাজা এবং রানী তাদের বুকের ধন কোথায় গেল। নেকি কুকুর পাষাণ আর শিয়ালের কাছে বন্দি হলো। হঁাসা পেছনে তাকাতেই বলল, আমি এখন যাই, মা আবার বকবে। ঘাসফড়িং তিরিং বলল, বন্ধু তুমি এত বড় হয়েছ মাথায় যেন একটুও বুদ্ধি নাই তোমার। আকাশের অবস্থা ভালো না এই অবস্থায় কেমন করে যাবে বাবা-মায়ের কাছে। তুমি আজ আমার রাজ্যে থেকে কাল চলে যাবে। শিয়াল খুশি হয়ে বলল, বন্ধু তিরিংয়ের বুদ্ধি আছে। ঠিক বলেছে তিরিং। আমার বাড়ি এখানেই। বন্ধু তুমি ইচ্ছা করলে যেতে পার। আকাশ ভালো থাকলে বা ভালো হলে বাড়ি চলে যাবে। আর যেতে যেতে তোমার পরিচয় নেবো। হঁাসা বলল, ঠিক আছে চলো। শিয়াল ওর পরিচয় পেয়ে খুব খুশি। কারণ হঁাসা, হঁাসদের রাজার ছেলে। হঁাসাকে সঙ্গে নিয়ে অনেক হঁাসকে আনা যাবে এখানে। হঁাসার কথা শুনলে ওরা আসবে। শিয়াল হঁাসাকে ওর আস্তানায় নিয়ে গেল। সেখানে বেশ কয়েক জন হঁাস আর মুরগি জেলখানায় বন্দি। শিয়ালকে হঁাসা বলল বন্ধু ওনারা এখানে বুঝলাম না। শিয়াল মিথ্যা বলল, বন্ধু ওরা আমার কাছে পড়ে। আমি ওদের পড়াই তুমি পড়বে আমার কাছে। হঁাসা বলল, হ্যঁা পড়ব তবে বাবা-মাকে তো বলতে হবে। এই কথা বলতে হঁাসা দেখতে পেল বেশকিছু শিয়াল মিলে সেই হঁাসটাকে ধরে এনেছে। হঁাসা বলল, বন্ধু ওই হঁাসটাকে কেন আনছে ওরা? শিয়াল বলল, আমি তোমাকে পরে সব বলব। হঠাৎ আকাশে প্রচÐ মেঘ আবারও জমে যায়। হঁাসা বলল, বন্ধু আমি যাই নইলে আমার বাবা-মা খুব চিন্তা করবে। শিয়াল বলল, তোমার বাবা-মা কোথায় আছে আমাকে বল, আমি নিয়ে আসি তাদের। হঁাসা বলল, আসলে মা-বাবারা অনেকগুলো আছে সেখানে। শিয়াল কৌশলে শুনছে আসলে ওরা কোথায়। হঁাসা বলেও দিল ওই নদীর ধারে। শিয়াল মনে মনে বলল, আজ শিকার করে আর শিকার করব না। এত দিনে যা জমাইয়াছি তা খেতে খেতে আমাদের জীবন কেটে যাবে। এই সব মনে মনে বলছে শিয়াল। শিয়াল হঁাসাকে বলল, বন্ধু আমরা তোমার বাবা-মাকে নিয়ে আসি। এবং তাদের সঙ্গে যারা যারা আছে তাদেরও নিয়ে আসব। হঁাসা খুশি হয়ে বলল, তাহলে যাও। আমি এখানে আছি। শিয়ালরা সবাই চলে গেল বন্ধু শিয়াল বলল, হঁাসাকে বন্ধু ভুলেও যেন ওইখানে যেও না। ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। হঁাসা ভয়ই পেল। হঁাসা বলল, ঠিক আছে তাই হবে। শিয়ালরা ছুটল শিকার করার জন্য রাজার বাহিনীকে নিয়ে।

ওই হঁাসটা বলল, হঁাসা তুমি এ কী বললে, তোমার মা-বাবাকে ওরা ধরে নিয়ে আসবে এবং খাবে তোমার বাবা মাকে। হঁাসা বলল, এসব হঁাসগুলো না কি পড়ার জন্য এখানে আছে? ওই হঁাসটা বলল, সব মিথ্যা কথা। তুমিও রক্ষা পাবে না হঁাসা তোমাকেও খেয়ে ফেলবে ওরা। হঁাসা বলল, তাহলে আমি এখন কী করব। ওই হঁাসটা বলল, হঁাসা তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে দাও। আমাদের বঁাচাও।

এদিকে ঘাসফড়িং গান গাইতে গাইতে বাড়ির দিকে যাচ্ছে, পথে তার দেখা হয় এক বয়স্ক ফড়িংয়ের সঙ্গে। ঘাসফড়িং তিরিং বলল, চাচা আজ আমি খুব খুশি আমার বাবার খুনিকে শিয়ালের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। চাচা বলল, তোর বাবাকে তো শিয়ালগুলোই মেরেছে। কিছু বদমায়েশ শিয়াল মুরগি এবং হঁাসকে শিকার করতে যায় তখন হঁাস আর মুরগি দৌড় দিলে শিয়ালের পায়ের নিচে পড়ে তোর বাবা মারা যায়। তিরিংয়ের মাথার মধ্যে যেন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছে শিয়ালগুলো এবং বলছে রাজার ছেলে হঁাসাকে ধরে নিয়ে গেছি। এখন রাজা-রানী অন্যদের ধরতে পারলে বঁাচি। বসে বসে খাব সারাটা জীবন। এই কথাগুলো শুনলো তিরিং। তাই তিরিং মনে মনে ভাবল না আমি ভুল করেছি এবার রাজা-রানীকে বঁাচাতে হবে। তাই শিয়ালের আগে উড়ে গেল নদীর পাড়ে তিরিং। রাজা এবং রানীকে তিরিং হঁাপাতে হঁাপাতে বলল, আপনাদের শিয়াল জানোয়ার বাহিনী ধরতে আসছে। আপনারা নদীর মধ্যে যান যদি প্রাণে বঁাচতে চান। এই কথা শুনে হঁাসগুলো সবাই নদীর মধ্যে গেল। তিরিং ওখান থেকে এলো শিয়ালদের আস্তানায় তিরিং হঁাসা বন্ধুকে দেখে দৌড়ে এলো তিরিং বলল, বন্ধু এই সুযোগে হঁাস-মুরগি যারা জেলে আছে তাদের সবাইকে ছেড়ে দাও। হঁাসা আর ঘাসফড়িং মিলে সবাইকে ছেড়ে দিল। সবাই হঁাসাকে এবং তিরিংকে ধন্যবাদ দিল। এবং সবাই চলে এলো নদীর পারে। মুরগিগুলো উঠল গাছের ডালে আর হঁাসগুলো উড়াল দিল নদীতে। নদীতে নেমে হঁাসা বলল, বন্ধু আমরা সবাই পালিয়ে এসেছি তোমার ওইখান থেকে তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছ। গাছের ডাল থেকে মুরগিগুলো বলল, কি রে আমাদের খেয়ে সারা জীবন কাটাবি বলে আশা করেছিলি তাই না? শিয়াল দক্ষিণে তাকিয়ে দেখল, তিরিং। তিরিং বলল, তুই আমার বাবা-মাকে মেরেছিলি। আজ আমি তার বদলা নিলাম। এই কথা শুনে শিয়ালগুলো সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে গেল মাটিতে। আকাশ গুড় গুড় করছে। ঘাসফড়িং হঁাসা এবং সবার কাছ থেকে বিদায় নিল এবং বলল, আজ আসি বন্ধু আবার দেখা হবে। হঁাসা টাটা দিয়ে বলল, ঠিক আছে বন্ধু আবার দেখা হবে। গাছ থেকে নেমে এলো মুরগিগুলো। নদীর মধ্যে থেকে আসে হঁাসের রাজা ও রানী এবং অন্যরা। এসে মুরগি এবং হঁাস বন্ধু হলো। তাই তো তারা একসঙ্গে থাকে কোনো ভেদাভেদ নাই তাদের মধ্যে। তারা একে অন্যের ডিম তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায়। রাজা-রানী হঁাসাকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি। হঁাসাকে বুকে নিয়ে রানী এবং রাজা আদর করতে লাগল। তারা চলে গেল বাড়িতে এর মধ্যে তুফান হয়ে যায় এবং শিয়ালদের পানির সঙ্গে ভেসে নিয়ে যায় নদীর মধ্যে। মারা যায় শিয়ালগুলো সবাই। সেই দেশ থেকে মুক্ত হলো শিয়াল পÐিত। সুখে হঁাস-মুরগি বসবাস করতে লাগল।

অষ্টম শ্রেণি

মান্নান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মহেশপাড়া, সোনাতলা, বগুড়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13144 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1