শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

এসো প্রাণে প্রাণ মেলাই

রাত পোহালেই বসন্তের সোনালি সূর্যের উদয় হবে। চারদিকে ঝলমলে আলো। সবুজের বুকে বাহারি রঙের এক রাজপ্রাসাদ। সমানেই উপহার সংগ্রহের দীর্ঘ লাইন। অন্যদিকে চলছে গান-বাজনা আর হইহুলেস্নাড়। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুরাতন কোনো রাজ্যের রাজপ্রাসাদ। যেন রাজ্য জয়ের উৎসবে মেতে উঠেছে রাজপুত্ররা। রাত পোহানোর অপেক্ষা। সকাল থেকেই শুরু হবে নবীন-প্রবীণের মহামিলন। প্রজাপতি হল খ্যাত আবির রাঙ্গা হল ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় যাত্রা। ভুবুজেলা আর বাঁশির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত। সাবেক বর্তমানের পার্থক্য আড়াল করেই মিছিল হয়ে ওঠে সর্বজনীন। থেকে যায় সবুজ ক্যাম্পাসের বুকে একবুক ভালোবাসার অমর স্মৃতি। ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি, সহযোগিতা আর সহমর্মিতার প্রত্যয়ে চলতে থাকে সাবেক-বর্তমানের যাত্রা ...
মুহাম্মদ মূসা
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। সন্যাসী মাঘের বিদায়ক্ষণ। রাত পোহালেই বসন্তের সোনালি সূর্যের উদয় হবে। চারদিকে ঝলমলে আলো। সবুজের বুকে বাহারি রঙের এক রাজপ্রাসাদ। সমানেই উপহার সংগ্রহের দীর্ঘ লাইন। অন্যদিকে চলছে গান-বাজনা আর হইহুলেস্নাড়। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুরাতন কোনো রাজ্যের রাজপ্রাসাদ। যেন রাজ্য জয়ের উৎসবে মেতে উঠেছে রাজপুত্ররা। রাত পোহানোর অপেক্ষা। সকাল থেকেই শুরু হবে নবীন-প্রবীণের মহামিলন। বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পুনর্মিলনীর কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় আবাসিক হলের প্রথম পুনর্মিলনী।

'এসো প্রাণে প্রাণ মেলাই'- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই এ মহামিলনের আয়োজন। শুক্রবার ১৪ ফেব্রম্নয়ারি দিনব্যাপী উৎসব। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচ থেকে শুরু করে ৪৮তম ব্যাচ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা। সবাই একই হলের অগ্রজ-অনুজ। ১৯৭৩ সালে সর্ব বৃহৎ আবাসিক হল হিসেবে নির্মিত হয় মীর মশাররফ হোসেন হল। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৪৮ বছর পর শিক্ষার্থীদের এই প্রথম মহামিলন।

হইহুলেস্নাড় করে রাত কাটালেও ক্লান্তি স্পর্শ করেনি তাদের। সকাল হতেই মাঠে নেমে পড়ে সাবেক-বর্তমান সবাই।

ব্যাচ, বয়স, পদবি নির্বিশেষে সবাই কাজ করছেন। বিশেষভাবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন স্যারের কথা না বললেই নয়। উৎসবের আহ্বায়কের দায়িত্বে তিনি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েও শিক্ষার্থীদের সাধারণ কোনো সিনিয়রের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন। কখনো জুনিয়রদের ডেকে পরামর্শ দেয়া, কখনো ডেকোরেশন পরিদর্শন; কখনও আবার নিজ হাতে উপহার বিতরণ করছেন। একইসঙ্গে তারুণ্যের আরেক উদাহরণ উৎসবের সদস্য সচিব ও সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক জোনের নির্বাহী পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন।

উৎসবের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনুষ্ঠানের পুরো চাপ সামলানোর মতো অদম্য কর্মস্পৃহা দেখিয়েছেন এই ভদ্রলোক। যেমন দক্ষ নেতৃত্ব, তেমনি বন্ধুসুলভ। হলের জুনিয়রদের সঙ্গে তার সম্পর্কের জুড়ি মেলা ভার। এদিকে হলের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে সর্বক্ষণ কর্মব্যস্ত ছিলেন স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আমীর হোসেন। হলের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সর্বক্ষণ। অনুষ্ঠানে প্রাণ সঞ্চারে আরেক মহানায়ক ছিলেন সাবেক শিক্ষার্থী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তার বন্ধুত্বের ইতিহাস আর স্মৃতিচারণ আবেগাপস্নুত করে সবাইকে।

সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। উদ্বোধনী ভাষণে নবীন- প্রবীণের এ মহামিলনকে বিষেশায়িত করেন তিনিও। ভ্রাতৃত্ববোধ আর সাবেক-বর্তমানের মেলবন্ধনের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ দেখেন তিনি। একটু পরেই শুরু হয় আনন্দর্ যালি। যেন রাজপুত্রদের শোভাযাত্রা। কে ছিলেন না মিছিলে? দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার, সুনামধন্য ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বহুজন ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন, প্রথম প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রভোস্ট এবং প্রাক্তন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমামউদ্দিন, প্রাক্তন প্রভোস্ট এবং কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমির হোসেন খান প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম,  কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুর রহমানসহ হলের প্রায় তিন হাজার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। প্রজাপতি হল খ্যাত আবির রাঙ্গা হল ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় যাত্রা। ভুবুজেলা আর বাঁশির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত। সাবেক বর্তমানের পার্থক্য আড়াল করেই মিছিল হয়ে ওঠে সার্বজনীন। সোহেল ভাই, ইসমাইল ভাই, সিনিয়র-বন্ধু- ছোটভাইদের অনেকেই গলা বিসর্জন দিয়েছে মিছিলে। স্স্নোগান, বাদ্য, বাঁশির তালে তালে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে আসে শিক্ষার্থীরা। দিনভর চলে পিঠা উৎসব, নবীন-প্রবীণের আড্ডা আর সেলফিবাজি।

বিকালে শুরু হয় আরেক পর্ব। সাবেকদের স্মৃতিচারণা। অধ্যাপক আমীর হোসেনের স্মৃতিতে, 'যখন আমরা হলে থাকতে শুরু করি, তখন পুরো এলাকায় সাপ আর শেয়ালের রাজত্ব ছিল।' বলেন রাজ্য উদ্ধারের সোনালি দিনের কথা। একের পর এক স্মৃতি রোমন্থনে কখনো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে পুরো মুক্তমঞ্চ; কখনো আবার শিহরণ জাগে হৃদয়ে। এভাবেই আড্ডার ছলে কেটে যায় বিকালটা। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 'জলের গান', 'মিজান অ্যান্ড ব্রাদার্স' আর সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের অসাধারণ পারফরমেন্স। নাচে-গানে পুরো মুক্তমঞ্চকে নাচিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। থেকে যায় সবুজ ক্যাম্পাসের বুকে একবুক ভালোবাসার অমর স্মৃতি। ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি, সহযোগিতা আর সহমর্মিতার প্রত্যয়ে চলতে থাকে সাবেক-বর্তমানের যাত্রা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হবে এ যাত্রা। কালের প্রবাহে অস্তিস্ত হারিয়ে গেলেও হারাবে না স্মৃতি। থেকে যাবে বন্ধন। দৃঢ় হোক সব সাবেক-বর্তমানের আত্মার বন্ধন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89772 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1