বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
কু মি লস্না বি শ্ব বি দ্যা ল য়

সমাবর্তন তারুণ্যের উলস্নাস

ইসরাত জাহান
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

চারিদিকে উৎসবের আমেজ। একে একে সবাই কালো টুপি আর কালো গ্রাউন পরে গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্র্যাজুয়েটদের মিলন মেলায় পরিণত হয় প্রিয় ক্যাম্পাসে। যেখানে দীর্ঘদিন পর আজ আবার ফেলে আসা পুরুনো স্মৃতিগুলো সজিব হয়ে উঠবে। দেখা হবে দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিক্রম করা সেই বন্ধুদের সঙ্গে। এসব ভেবেই সবার চোখে মুখে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। কিন্তু সেই হাসি মুখ ক্ষণিকেই মলিন হয়ে যায়, আজ যে তাদের সমাবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো সেই সোনালি দিনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। 

বলছিলাম কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত ১ম সমাবর্তনের কথা। আর এই সমাবর্তনকে সামনে রেখে সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করেছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার থেকেই বিতরণ করা হয় সমাবর্তনের পোশাক ও গিফটসামগ্রী। কালো গ্রাউন পরে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলে সমাবর্তন প্রস্তুতি। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ বন্ধুদের নিয়ে মেতে উঠছেন উৎসবে। আর এই উৎসবের  শামিল হয়েছেন গ্র্যাজুয়েটদের  বাবা-মা ও তাদের ছোট্ট শিশুরাও।  প্রতিটি শিক্ষার্থীরই ইচ্ছে থাকে কালো গ্রাউন গায়ে জড়িয়ে গ্র্যাজুয়েট সম্মাননা অর্জনের। এর  সম্মাননার দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের। গেল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে জমকালো আয়োজনে শেষ হয় সমাবর্তনটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তনে ২ হাজার ৮৮৮ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী ১ হাজার ২২২ জন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ১ হাজার ৬৬৫ জনকে ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া শিক্ষায় অসমান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হয় চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক। 

শিক্ষা জীবনের শেষ দিনটাকে আরো স্মৃতিময় করে রাখতে অনেকে নিয়ে এসেছেন বাবা-মাকে। কেউ গ্রাউন আর টুপি পরিয়ে ছবি তুলছেন তাদের সঙ্গে। আবার কেউ নিচ্ছেন পদধূলি। এমনিভাবে বাবাকে গ্রাউন পরিয়ে ছবি তুলছিলেন ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নূরুল আমীন। বাবার থেকে দোয়া নিতে নিতে বলছিলেন, 'বেশ কয়েক বছর আগে আমার বাবা আমাকে ভর্তি করিয়ে দিতে এসেছিলেন এই ক্যাম্পাসে,  আর এখন আবার আসলেন আমার সঙ্গে সমাবর্তনে। বাবাকে এই আনন্দের সময়ে পাশে পেয়ে অসাধারণ লাগছে। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ এই অসাধারণ আয়োজন করার জন্য।'

কথা হয় সন্তানকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসা গ্র্যাজুয়েট ফাতেমা নুর জন্নাতের সঙ্গে।  তিনি বলেন, 'আমার বাবা একদিন আমাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়। আজ বাবা আমার পাশে নেই, আমার ছোট বাবাটাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কাটানো দুইটি দিন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল। ছেলেটি ক্যাম্পাসে এসে বুঝতেই পারছে না তার মায়ের বিদ্যাপীঠে এসেছে। এ যে আমার কতটা আনন্দের। যার প্রতিটি ধুলোবালিতে জড়িয়ে আছে আমার আবেগ ও ভালোবাসা।'

সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে। এক সময় গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। শেষ হয় সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এবার ছেড়ে যেতে হবে লাল পাহাড়ে ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসকে।  ফিরতে হবে সেই কর্মচঞ্চল জীবনে। আর হয়তো কখনো দেখা হবে না এতগুলো বছর একসঙ্গে কাটানো বন্ধুদের সঙ্গে। আড্ডার আসর বসবে না স্মৃতি জড়ানো সেই  কাঁঠালতলায়, শহিদ মিনার আর  মুক্তমঞ্চে। এসব কথা মনে আসতেই সবার চোখ অশ্রম্নতে ভিজে যায়। এ অশ্রম্ন কিসের আনন্দের নাকি বিষাদের জানা নেই কারো। জীবনযুদ্ধে যে এবার নামতেই হবে। সামনে হাতছানি দিচ্ছে আগামী। তাই চলতে হবে সামনে। পিছনে স্মৃতি হয়ে থাকবে লাল পাহাড়ের সবুজ ক্যাম্পাস কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88838 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1