বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠার একযুগ

স্বকৃত গালিব
  ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০
ক্যাম্পাসে বণার্ঢ্য র‌্যালিতে শিক্ষক ও শিক্ষাথীর্রা

চারদিকে সবুজের সমারোহ। দৃষ্টিনন্দন লালমাটির পাহাড়। সুউচ্চ টিলা। নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির। লালমাই বুকে ধবধবে সাদা রঙের সুউচ্চ দালান। প্রকৃতির এমন মনোলোভা লালমাই পাহাড়েই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সদস্যরা বণার্ঢ্য আয়োজনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যুগ পালন করে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় রঙিন সাজে সাজানো হয়। দিনটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ বণার্ঢ্য শোভাযাত্রার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। উপাচাযর্ ড. এমরান কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কযের্র সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের, প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়্যারম্যান, হলের প্রভোস্ট, শিক্ষক, কমর্চারী, কমর্কতার্, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সধারণ সম্পাদক, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিএনসিসি, সায়েন্স ক্লাব ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষাথীর্রা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে পাহাড়ি সমতল ভূমির ওপরে ৫০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। বতর্মানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬ হাজার ২৮০ শিক্ষাথীর্, ১৮০ শিক্ষক, ২৪৯ কমর্কতার্-কমর্চারী দিয়ে ৬টি অনুষদে ১৯টি বিভাগের শিক্ষা কাযর্ক্রমসহ প্রশাসনিক কাযর্ক্রম চলছে। বতর্মানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি, প্রতœতত্ত¡, অথর্নীতি, লোক-প্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইন, গণিত, পদাথর্, পরিসংখ্যান, রসায়ন, ফামেির্স, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্, মাকেির্টং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোসর্ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষাথীের্দর জন্য রয়েছে ৪টি আবাসিক হল। ছাত্রদের জন্য রয়েছে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল। এ ছাড়াও মেয়েদের জন্য নিমার্ণাধীন রয়েছে শেখ হাসিনা হল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থগার, তিনটি একাডেমি ভবনসহ নিমার্ণাধীন একটি একাডেমি ভবন। খেলাধুলার জন্য রয়েছে একটি খেলার মাঠ, শিক্ষকদের থাকার জন্য রয়েছে ২টি ডরমেটরি, নামাজের জন্য রয়েছে একটি মসজিদ। রয়েছে শহীদ মিনার ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কযর্। এ ছাড়াও রয়েছে সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং সোসাইটি, প্রথম আলো বন্ধুসভা, সায়েন্স ক্লাব, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ নাট্য ও আবৃত্তি গোষ্ঠী। পরিবহনের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের ইতিহাস বেশ পুরনো। আর এই ইতিহাস নানাভাবে ঐতিহ্য বহন করে। প্রাচীনকালে প্রাচীন বাংলার সমতট রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল লালমাই-ময়নামতী। খ্রিষ্টীয় চতুথর্ শতাব্দী থেকে দ্বাদশ পযর্ন্ত এই রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ৫০০ মাইল। সপ্তম শতাব্দীতে চন্দ্রীবংশীয় রাজা ভবদেব এখানে আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় এই বিহারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মযার্দা দেওয়া হয়। সেই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মরণ করতে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা ঘেঁষেই প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কুমিল্লাবাসী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আসছিল। কুমিল্লাবাসীর দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের স্পিকার ফজলুর কাদের চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামে। তারপর থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) কুমিল্লায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সরকার পরিবতর্ন হলে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কুমিল্লাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেয়। ২০০৪ সালের ১ জুলাই প্রকল্প করা হয়। ওই বছরের ৯ অক্টোবর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য মস্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় কুমিল্লায় একটি পূণার্ঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ৬ নভেম্বর একনেকের সভায় তা অনুমোদিত হয়। প্রায় ৬ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ টাকা ব্যায় ধরে একই বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা শুরু হয়। ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ওই বছরের ৮ মে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবষের্ ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষাথীর্, ১৫ জন শিক্ষিক ও ৫০ জন কমর্কতার্-কমর্চারী দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, শিক্ষাথীর্রা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। এটি একটি সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়। যতদিন অতিবাহিত করবে তত বেশি এ সম্ভাবনার বাস্তবতা দেখতে পাব আমরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে এবারের দিবস পালন জৌলুসপূণর্র্ না হলেও সামনের দিকে আরও জৌলুসপূণর্ভাবে পালিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ইতিমধ্যে সে পরিবেশ তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সদস্যরা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বঁাকে রয়েছে হাজারো স্বপ্ন, দীঘর্শ্বাস আর হাজারো সম্ভাবনার গল্প। তবুও পাওয়া না পাওয়ার সমীকরণের বাইরে হাজার বছর গৌরব আর অজের্ন জ্বলজ্বল করুক প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে