শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

দৌড় নিয়েই স্বপ্ন দেখেন

নতুনধারা
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
দৌড় প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন সাজ্জাদ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাজ্জাদ হোসেন স্নিগ্ধ দৌড় নিয়েই স্বপ্ন দেখেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তার দৌড়ের গল্প শুনেছেন- আবুল বাশার মিরাজ

নিজেকেই নিজের প্রতিযোগী ভাবেন সাজ্জাদ। তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০০ একরের ক্যাম্পাসটিকে বেছে নিয়েছেন অনুশীলনের জন্য। দৌড়ানোর সময় ঘড়ি ধরে নিজের রেকর্ডকে ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন। দৌড়ে নাকি নিজেকেই নিজের প্রতিযোগী ভাবতে হয় বলে জানান তিনি। বন্ধুরাও তাকে বলে, তুই অটোরিকশায় কেন? দৌড়া... পাগলা। কিরে হাঁটিস কেন? দৌড় দে। বাসায় কবে যাবি? দৌড়ে দৌড়ে যাবি নাকি? চলার পথে এই সব কথা এখন হরহামেশাই শুনতে হয় তাকে। প্রথম প্রথম বিব্রতবোধ করলেও, এখন এই কথাগুলোই নাকি প্রতিদিনের মোটিভেশন সাজ্জাদের।

রংপুরে বেড়ে উঠা এ ছেলেটি বাকৃবিতে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন ২০১৭ সালে। থাকছেন শহীদ শামসুল হক হলে। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ার প্রতিযোগিতায় প্রতিবার ২ থেকে ৩টি প্রাইজ পাওয়া তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। কলেজে থাকতেও চারশত, আটশত মিটার দৌড়, লং জাম্পে পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালে কলেজে পড়ার সময় চারটি আলাদা ক্রীড়া ইভেন্টে প্রথম হয়েও অর্জন করেন সেরা অ্যাথলেট হওয়ার গৌরব। স্কুল-কলেজে ক্রীড়ায় পুরস্কার পাওয়া এই ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দৌড়ানোর ইচ্ছাকে দেন নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দুটি ইভেন্টে পুরস্কার পান। এরপর থেকে নতুনভাবে মেলে ধরতে থাকেন তিনি। দেশের যেখানেই দৌড় প্রতিযোগিতা হোক না কেন, ক্লাস বাদ রেখেও ছুটে চলে যান তিনি। আর যেখানেই অংশ নেন না কেন, পুরস্কার সে পাবেনই। তার উলেস্নখ্যযোগ্য পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে গাজীপুরে অনুষ্ঠিত 'ম্যারাথন বাংলাদেশে'র ৮০ কিলোমিটার দৌড়ে ১ম, বিওয়াইএলসি রানিং উইথ পারপোজে ২য়, রান লডস্‌ এ ২১.১ কিলোমিটারের দৌড়ে তৃতীয় প্রভৃতি। এ ছাড়াও সম্প্রতি ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে ৫০ কিলোমিটার দৌড়েছেন ৫ ঘণ্টা ৫৮ মিনিটে।

সাজ্জাদের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, দৌড় ঘিরেই স্বপ্ন দেখি। দৌড়ের মাধ্যমে দেশের জন্য সম্মান আনতে চাই, তুলে ধরতে চাই দেশের পতাকা। দৌড়ে মজার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাজীপুরে অনুষ্ঠিত ৮০ কিলোমিটারের ম্যারাথনে অন্ধকারের মধ্যে দৌড়ানো। জনমানবহীন রাস্তার মধ্যে দিয়ে একা একা দৌড়াতে হয়েছিল, পেছনে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। রাত ১০টায় শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা শেষ হয় সকাল ৯টায়। এ ছাড়াও পাহাড়ের উপর ট্রেইল হাফ ম্যারাথনে প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো পাহাড়ে উঠে দৌড়াই এবং তাতেও পুরস্কার পেয়েছিলাম।

সাজ্জাদ কেবল নিজেই দৌড়ান না, দৌড়াতে উব্ধুদ্ধ করেন সবাইকে। ক্যাম্পাসে 'বাউ রানার্স্‌' নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে একা একা কোথাও দৌড়াতে যেতাম। এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে একসঙ্গে যেতে পারি। পরিচিত করাতে পারি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। এটি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। স্কেটিংয়েও এ দক্ষ তিনি। এটিও শেখান অন্যদেরও। খেলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট টিমেও।

সাজ্জাদের ভবিষ্যৎ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার ইচ্ছা বাংলাদেশের হয়ে দেশের বাইরে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। আয়রন ট্রাই অ্যাথলেটে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার আনতে চাই। এ প্রতিযোগিতাটি বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের ৯০টি দেশে অনুষ্ঠিত হয়। সাইকেল, দৌড় ও সুইমিংয়ে তিনটির সমন্বয়ে পুরস্কার দেয়া হয়। কিন্তু দেশের বাইরে অংশ নেয়ার আর্থিক সে সামর্থ্য নেই আমার। ভালো অ্যাথলেট হওয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এই ধরুন, একটি জুতার দাম ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এটি কিনে দেয়ার সামর্থ্য আমার মা-বাবার নেই। কেবল জুতাই নয়, দরকার পড়ে অনেক কিছুই। শরীর ফিট রাখার জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়। আবার কোনো ইভেন্টে গেলে রেজিস্টেশন, থাকা খাওয়া ও গাড়িভাড়া সবমিলে ২-৩ হাজার টাকা লেগে যায়। আমি টিউশনি করে এগুলো ম্যানেজ করার চেষ্টা করি। দৌড়ের পাশাপাশি আমি সুইমিং ও সাইকেল প্র্যাকটিস শুরু করেছি। তবে জানি না, আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। যদি কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান আমাকে একটু সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসত তবে দৌড়ের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারতাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<68909 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1