শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিবিলাসে একদিন

মো. রাকিবুল হাসান
  ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝুমঝুম শব্দে বৃষ্টি হচ্ছিল। একাডেমিক ভবনের এক কোণে কিছু শিক্ষার্থীকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলাম। দূর থেকে বুঝতে পারছিলাম তারা আড্ডা দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ জোরে জোরে হেসে উঠছে। সে হাসির গভীরতা প্রচুর আর যথেষ্ট প্রশান্তি দৃশ্যমান ছিল। হঠাৎ পরিচিত দুয়েকটা মুখ দেখে এগিয়ে গেলাম। কথা বলে জানতে পারলাম তারা ক্যাম্পাসের বৃষ্টির এই সময়টাকে দারুণভাবে উপভোগের চেষ্টা করছে। ক্লাসে গ্যাপ ছিল তখন সঙ্গে বৃষ্টি, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেছে। বলছিলাম সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের একদল শিক্ষার্থীর বৃষ্টিবিলাসের কথা।

এমনিতে এ সময়ে সারাদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি চলতেই থাকে। শিক্ষার্থীরা অবসর পেলেই বৃষ্টির টিপ টিপ ছন্দে মেতে ওঠে। বৃষ্টিতে জমে ওঠে তাদের গল্প, আড্ডা। এসব আড্ডাতে ছোট-বড়, ছেলেমেয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই। আড্ডাতে অনেক অপেশাদার কণ্ঠের গান নতুন মাত্রা যোগ করে। সবাই নিজের মতো করে প্রাণ খুলে সময়টা উপভোগ করে। ক্যাম্পাসের পরিচিত অনেক জুটিকেও এসময় হারিয়ে যেতে দেখা যায় বৃষ্টির টানে। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে একটুখানি রোমান্টিকতার সুযোগ মিস করতে চান না কেউই। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকরাও এসময় খোশগল্পে মেতে ওঠেন। জানালার পাশের বৃষ্টি তাদের গল্পে অন্যরকম আবহের সৃষ্টি করে।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দিকে তাকাতেই মনটা কয়েক বছর পেছনে চলে গেল। গ্রামে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলার দুরন্তপনার কথা মনে পড়ে গেল। কিছু শিক্ষার্থী যেন শুধু ফুটবলই খেলছিল না, সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করে ছোটবেলায় ফিরে যাচ্ছিল। ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ডে চোখ পড়ল বড় গাছের নিচে কয়েকটা কুকুরের কাকভেজা হয়ে জড়সড় হয়ে থাকার দৃশ্য। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈতনিক কর্মকর্তা, যারা বিরতিহীন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। মাঝেমধ্যে গাছের ফাঁকে পাখির কিচিরমিচির শব্দও ভেসে আসছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা এক প্রান্তে জড়ো হয়ে তাদের মতো করে সময়টা উপভোগ করছিল। দূরের প্রশাসনিক ভবনের দিকে তাকাতে মনে হলো সেখানেও যেন আড্ডার আবহ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিময় আবহাওয়া যেন পুরো ক্যাম্পাসে আড্ডার নানা রং নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।

গ্রাম ও শহরের মিশেলে এমনিতেই অপরূপ সৌন্দর্যময় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বর্ষায় এই ক্যাম্পাস সৌন্দর্যের নতুন এক জগতে প্রবেশ করে। যেন পূর্ণ যৌবনা এক তরুণীর রূপের বিভিন্ন ধাপ পরিলক্ষিত হয়। ক্যাম্পাসের বাদামতলা, ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ড, বকুতলা, মিডিয়া চত্বর, পিঠাঘর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সবই যেন নতুনভাবে সজ্জিত হয়। নতুন প্রাণের উদ্ভব ঘটে এসব স্থানে। বৃষ্টির অবিরাম বর্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দেয়ালগুলো চকচক করতে থাকে। হঠাৎ মনে হলো এই বৃষ্টির মধ্যে ক্যান্টিনের এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। ছাতা নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে বের হতেই দেখি একদল গায়ক গিটারের তালে তালে তাদের গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে ব্যস্ত। তাদের গিটারের সুর যেন বৃষ্টির সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের গান শুনলাম। সত্যি বলতে বৃষ্টিভেজা এই দিনে সবই যেন ভালো লাগছিল। তাদের গান শেষে কথা বললাম কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান জানালেন, 'বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসে আড্ডার মজাই অন্যরকম। বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, বড়ভাই, ছোটভাই সবার সঙ্গে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে। বৃষ্টির মধ্যে ক্লাসে মন বসতে চায় না তবে ক্লাস শেষে অনুভব করি, জানালার একপাশে বৃষ্টি আরেকপাশে ক্লাস, ব্যাপারটা মন্দ নয়।'

আরও কিছুক্ষণ কথা শেষে আবার ক্যান্টিনের দিকে হাঁটতে থাকলাম। পৌঁছে দেখলাম পুরো ক্যান্টিন ভর্তি। অগত্যা কফি নিয়ে বাইরেই দাঁড়িয়ে গেলাম। কফির প্রতিটা চুমুক যেন নতুনভাবে বৃষ্টিকে উপভোগের সুযোগ করে দিচ্ছিল। আমিও কফি হাতে উপভোগ করতে থাকলাম বৃষ্টির এই অপরূপ সৌন্দর্যকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<64654 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1