শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছোটাছুটি দলের আড়িয়াল বিলে ঘোরাঘুরি

মো. জাহানুর ইসলাম
  ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ঘুরতে কার না ভালো লাগে! আর সেই ঘোরাঘুরি যদি কোনো হাওর কিংবা বিলে হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। সবাই একবাক্যে রাজি। সত্যি বলতে প্রকৃতির সান্নিধ্য সবাই পেতে চায়। আরও যারা শহরে বসবাস করে তাদের কথা আর কি বলব! তারা তো আরও একধাপ এগিয়ে। সুযোগ পেলেই কেউ আর তা হাতছাড়া করতে চায় না। পরিকল্পনা ছিল ২৬ তারিখ খুব সকালেই গুলিস্তান থেকে আড়িয়াল বিলের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করব। ছোটাছুটি দলের প্রেসিডেন্ট জাফরিনা হক বর্ণা কোথায় কখন কে কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সব কিছু গত রাতেই সবাইকে জানিয়েও দিয়েছিলেন কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটায়। মনে শঙ্কা তৈরি হয় আড়িয়াল বিলে যাওয়া হচ্ছে তো? প্রেসিডেন্ট জাফরিনা হক বর্ণা সবার শঙ্কা দূর করে দিয়ে জোরালো কণ্ঠে অভয় দিলেন যতই দেরিই হোক আজ আড়িয়াল বিলে যাবোই যাবো। সবার মনে সজীবতা ফিরে আসে। নিমিষেই শঙ্কা দূর হয়ে সবার মন ভালো হয়ে যায়। সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠি। টিম ছোটাছুটির প্রেসিডেন্ট জাফরিনা হক বর্ণার নেতৃত্বে দলের সেক্রেটারি মো. ফয়সাল আহাম্মদ ও বিনোদন সম্পাদক সৈয়দ মুনতাছির মুহাইমিন অনিক, কোষাধ্যক্ষ সোহেল রানা এবং দপ্তর সম্পাদক সজীব ও আমি আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টায় মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বাস শ্রীনগরে পৌঁছায়। সেখান থেকে অটোরিকশা করে গাদিঘাট বাজারে যাই। সেখান থেকেই শুরু হয় আমাদের আড়িয়াল বিল দর্শন। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এই তিন মাস আড়িয়াল বিল পানিতে টইটম্বুর থাকে। আমরা বিষয়টি আগে থেকেই জানতাম।

তাই এই সময়টায় আড়িয়াল বিল ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করি। চতুর্দিকে পানি আর পানি। বিলের পানিতে স্রোত নেই বললেই চলে। এ যেন ঢেউহীন এক পানির রাজ্য। আমাদের নৌকা আঁকাবাঁকা পথে চলতে থাকে। প্রকৃতির ছোঁয়া এসে শরীর ও মনকে শীতল করে দেয়। শরীর ও মন নিমিষেই হারিয়ে যায় প্রকৃতির মধ্যে। বিলের প্রতিটি দৃশ্যই আমাদের মুগ্ধ করে। আমরা দৃশ্যগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করার চেষ্টা করি। আমরা যতই সামনের দিকে এগোতে থাকি বদলে যেতে থাকে দৃশ্যাবলি। কি অপরূপ, কি মনোমুগ্ধ! বলেকয়ে তা বোঝানো যাবে না। দলনেতা জাফরিনা আপু আগেই বলে রেখেছিলেন পুরো দল মিলে বিলের মধ্যে ফুটন্ত শাপলা ফুলের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হবেন। সবাই একসঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলাম ঠিকই তবে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে শাপলা ফুলের সঙ্গে তোলা হয়নি। কেননা সকাল পেরিয়ে দুপুর হওয়ায় বিলের শাপলাগুলো ঘুমিয়ে পড়েছিল অর্থাৎ ফুল ফুটন্ত অবস্থায় ছিল না। আমরা পানিতে না নেমে নৌকা থেকেই শাপলা সংগ্রহ করি। শাপলা ফল ভক্ষণ করি। শাপলা ফলের স্বাদটা ছিল অসাধারণ। ক্ষণিকের জন্য শাপলা আর কলমি শাকের সবুজ সমারোহে বুঁদ হয়ে পড়ি আমরা। আর আকাশজুড়ে ছিল সাদা কালো মেঘের লুকোচুরি যা আমাদের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। নীলচে পানিতে সাদা-কালো মেঘের প্রতিবিম্ব দেখে কেউ কেউ ওয়াও বলে চিৎকার চেঁচামেচিও করেছিলাম। বারবার মনে হতে থাকল আহ! সৃষ্টিকর্তার কি অপার মহিমা।

যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। দূরপানে সাদা কালো মেঘে ঢাকা নীল আকাশ যেন বিলের পানি স্পর্শ করে আছে। বিলের দিগন্ত এতটাই বিস্তৃত এ যেন ছোটমোটো একটি সাগর। বিলের মাঝ দরিয়ায় কিছু পাখিও দেখতে পাই। কোনোটা উড়ছে কোনোটা আবার খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত। আহাম্মদ ভাই, অনিক আর আমি বিলের পানিতে নেমে পড়ি। শুরু হয় সাঁতার কাটার অঘোষিত প্রতিযোগিতা। সোহেল ভাই আমাদের সব কিছুই ক্যামেরাবন্দি করেন। গোসল শেষ হলে ফিরে আসার পস্তুতি নিই। দুপুর গড়িয়ে যখন বিকাল তখন আমরা আবার গাদিঘাট বাজারে ফিরে আসি।

বর্ষায় নৌকায় চড়ে আড়িয়াল বিল ভ্রমণের দৃশ্যগুলো ছিল উপভোগ করার মতো। এই স্মৃতিগুলো যে অনেক দিন হৃদয়ের আয়নায় তরতাজা হয়ে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আড়িয়াল বিল ভ্রমণ ছিল আমাদের জীবনে অসাধারণ একটি মুহূর্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62536 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1