বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা খাতে কেমন বাজেট

সম্প্রতি ঘোষিত হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা খাতের বরাদ্দের হার বাড়ানোর দাবি থাকলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। ফলে গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ইউনেসকোর চাওয়া হলো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হবে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে অবস্থা করছে। বিশাল আকারের এই বাজেটের মধ্যে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া বাজেট নিয়ে কি ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা?
রুমান হাফিজ
  ২৯ জুন ২০১৯, ০০:০০
শিক্ষা খাতে কেমন বাজেট

বরাদ্দকৃত বাজেটের বাস্তবায়ন জরুরি

উন্নয়নের দাবি নিয়ে যেসব খাত রয়েছে তার মধ্যে বরাদ্দের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। শতকরা হিসাবে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের জন্য। যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এমন বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে মোট জিডিপির অনুপাতে আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ। এটা খুবই অপর্যাপ্ত।

যেটুকু হয়েছে সেটার যথাযথ প্রয়োগ শিক্ষা খাতকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এজন্য অভিভাবকসহ সামাজিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে। ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি ও যথাযথ ব্যবহার দুই-ই নিশ্চিত করতে হবে।

জুরানা আজিজ, সহকারী অধ্যাপক

শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা খাতে সার্বিক পরিবর্তন দরকার

\হ

বিগত বছরগুলোতে শিক্ষা খাতে মোটামুটি বরাদ্দ থাকলেও এবছর কিছুটা বেশি পরিমাণ অর্থ এই খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে আগ্রহী, যা প্রধানমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় সুস্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমাকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই বাজেটের বিষয়টি অত্যন্ত সচেতনভাবেই পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে। হঁ্যা এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি। এজন্য সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেবে, শিক্ষার এই দুই স্তরে এই খাতে খরচ সব থেকে বেশি হয়ে থাকে। বরাবরের মতো, আমাদের উচ্চশিক্ষা খাত অবহেলিত এক কথায়। কোনো রকম প্রণোদনার ঘোষণা তো নাই, উপরন্তু বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসার কথা বলে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো অজ্ঞাতসারে দেশের হাজারো মেধাবী স্বনামধন্য শিক্ষকদের সফঙ্গ তামাশা করেছেন। অথচ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রায় বাংলাদেশকে অল্প সময়েই পুনর্গঠন করেছেন। শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসল আজকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু এ বছরের বাজেটে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় কোনো প্রণোদনা নেই। গতবছর অক্টোবরে 'শিক্ষক সম্মেলন'-এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ কয়েকটি দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হয়েছিল। বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাইনি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো নয়, শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সময়ে সময়ে আলোচনা জরুরি দেশের নীতি-নির্ধারকদের।

এটিএম শাহজাহান, সহকারী অধ্যাপক

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

প্রত্যাশিত বাজেট হয়নি

জাতীয় বাজেট ২০১৯ অনুযায়ী শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৭% যা টাকায় ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি এই অর্থের পরিমাণ শিক্ষা খাতের জন্য যথোপযুক্ত। যদিও আশানুরূপ বাজেট হয়নি। কিন্তু শিক্ষা খাত এর জন্য বরাদ্দ এরকম বাজেট থাকার পরেও শিক্ষা খাতের কোনো উন্নতি দেখতে পাওয়া যায় না। প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর যথোপযুক্ত মান উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় না। শিক্ষা খাতের বাজেট যথোপযুক্ত বণ্টন হচ্ছে না। আমাদের বাজেটের বড় ঘাটতি হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য বরাদ্দ খুবই কম, কিন্তু আমরা সবাই জানি একটি দেশের শিক্ষামান বিবেচনায় গবেষণাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি আমাদের বাজেটে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় তার সুষ্ঠু বণ্টন করতে হবে এবং গবেষণার জন্য অর্থের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। আমাদের মতো স্বাধীন রাষ্ট্রের পড়াশোনার খাতকে কম গুরুত্বের চোখে দেখা জাতি হিসেবে অবশ্যই লজ্জা। শিক্ষিত জাতিই পারে দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে। শিক্ষা খাত যত উন্নত হবে ততই উন্নত হবে আমার দেশ, দেশের মানুষ। এদিকটায় গুরুত্ব দেয়া খুব প্রয়োজন।

রুবামা তাবাসসুম ফাবীহা

শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম। .

বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হোক

শিক্ষা যে কোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমাদের দেশের জন্য তা আরও বেশি। শিক্ষার ভিত্তিমূল হলো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর। প্রাথমিক শিক্ষার গোড়া মজবুত না হলে, পরবর্তী স্তরের শিক্ষা জাতির জন্য তেমন কাজে আসে না। এ দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে কর্মমুখী শিক্ষায় জোর দেয়া উচিত। এ ছাড়া গবেষণা ক্ষেত্রে বেশি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া উচিত।

নতুন বাজেটে শিক্ষায় অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত এ বাজেটে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এটি শিক্ষাবান্ধব বাজেট।

ইউনেস্কোর মতে, একটি দেশের বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে হওয়া উচিত। এবছর ২০ শতাংশ না হলেও বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। সুতরাং অচিরেই ২০ শতাংশের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দুঃখের বিষয় দেশে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি হয় সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা খাতে দুর্নীতি রোধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য অভিভাবকসহ সামাজিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে। তাই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার এবং বণ্টন উভয়ই নিশ্চিত করতে হবে বলে আমি মনে করি।

মো,. আবু হানিফ

শিক্ষার্থী, অ্যানিমাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<55712 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1