শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোমাঞ্চকর স্মৃতির খোঁজে 'চড়ুইভাতি'

মাহবুব আলম
  ১১ মে ২০১৯, ০০:০০
চড়ুইভাতিতে মেতেছিল শিক্ষার্থীরা

মনে আছে তো, শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর অম্স্নান স্মৃতিগুলোর কথা? হঁ্যা, একটু ভাবতেই দু'চোখের সামনে ভাসছে সেই স্মৃতির ডায়রি। তাই চলুন না স্মৃতির ডায়রিটা ঘেঁটে একটু পেছনে ফিরে যাই। সেই চিরচেনা গ্রাম, উচ্ছল শৈশব আর দুরন্ত কৈশোরে। বন্ধুদের সঙ্গে ঝড়ের সময় আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা, পুকুরের ঘোলা জলে ননস্টপ গোসল করে চোখ লাল করে ফেলা। গোলস্নাছুট, কানামাছি, বউচি, দাড়িয়াবাধা কিংবা ডাংগুলি খেলা। কতই না মজার ছিল সে দিনগুলো। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও সেই স্বর্ণালি স্মৃতিগুলো কিন্তু আজও মলিন হয়ে যায়নি। বরং মনে পড়লেই একটা প্রশান্তির মৃদু হাওয়া দোলা দিয়ে যায় মনে। সকালের নরম রোদের মতো এক চিলতে মৃদু হাসি খেলে যায় ঠোঁটের কোনায়।

শৈশব, কৈশোরের ফেলে আসা হাজারো মধুর স্মৃতির মধ্যে অন্যতম একটা স্থান দখল করে আছে পাড়ার বন্ধুরা মিলে 'চড়ুইভাতি' খেলা। স্থানভেদে যার আরেক নাম 'জোলাভাতি'। এই চড়ুইভাতিতে চাঁদা হিসেবে সবাইকে যার যার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হতো পরিমাণমতো চাল-ডাল। কারও কারও ওপর দায়িত্ব থাকত তেল আর মসলাপাতি জোগাড় করার। আবার কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়ত জ্বালানি সংগ্রহে। বনে-বাদাড়ে ঘুরে কুড়িয়ে আনা হতো গাছের নিচে পড়ে থাকা শুকনো পাতা আর চিকন ডাল। রান্না-বান্নার পর্বটা হতো সাধারণত খালের ধারে কিংবা খোলা প্রান্তরে, কিংবা ডাল-পালার বিশাল কোনো বটবৃক্ষের তলায়। বন্ধুদের মধ্যে বড় আপুরা যারা রান্না করার মতো শৈল্পিক দায়িত্বটা তারা নিজ দায়িত্বেই কাঁধে তুলে নিতেন। বাকিরা মেতে উঠত নানান খেলাধুলায়। রান্না হয়ে গেলে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ত খালের স্বচ্ছ পানিতে। অন্যদিন গোসল করতে দেরি হলেও তখন কার আগে কার গোসল শেষ হবে শুরু হয়ে যেত সেই প্রতিযোগিতা। গোসল শেষে শুকনো কাপড় পরে পেস্নট হাতে করে বৃত্তাকারে বসে যেত সবাই। বড় আপুরা একে একে ভাত তরকারি বেড়ে দিতেন। তারপর নিজেরা নিতেন। আপুরা যখন খাওয়া শুরুর ইঙ্গিত দিতেন তখন একসঙ্গে শুরু হতো খাওয়া। আহ! সে খাবারের কি স্বাদ। হলফ করে বলতে পারি এখনো সে স্বাদ মুখে লেগে আছে। কিন্তু এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছি। ব্যস্ততা ঘিরে ধরেছে চারদিক থেকে। কারণ পড়াশোনা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বমানের একটি সবুজ ক্যাম্পাসে। চাইলেই তো আর সেই আবেগ অনুভূতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই বলে কি আর বসে থাকা যায়? কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব। আর তাই তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চাঁদপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ'-এর আয়োজনে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নিয়ে করা হলো ক্যাম্পাসে চড়ুইভাতি। আনন্দঘন পরিবেশে ২৭ এপ্রিল সবাই মিলিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইজারল্যান্ডে। যদিও শৈশবের মতো কারও কোনো কিছু জোগাড় করতে হয়নি। সব জোগাড় করেছে সংগঠনটির সভাপতি মাঈনুদ্দিন রানা ও সম্পাদক মাসুম বিলস্নাহ। তবে সবাই দিয়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা। সেই চাঁদা করা হয়েছে খাবারের আয়োজন। পাশাপাশি গল্প, একে অপরের সাথে পরিচয়ে রোমাঞ্চকর এক মুহূর্ত পার করছে সবাই। এ মিলনমেলা যেন ক্যাম্পাসে নিজ জেলার মাটির গন্ধ ফিরিয়ে এনেছে। যেন নিজ পরিবারে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে। সবার অনভূতি প্রকাশে উঠে এলো এমন কথা। তার মাঝে বেলুন খেলা, সুঁই-সুতা খেলা ও হাঁড়িভাঙ্গা এই আয়োজনে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। সব মিলিয়ে শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোতে যেন ফিরে গেল সবাই আরেকবার। এমনটাই জানালেন সবাই। এ বিষয়ে 'চাঁদপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ'-এর সভাপতি মাঈনুদ্দিন রানা বলেন, 'অনেকদিন পর এ আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এ জাতীয় আয়োজন আমরা পরবর্তী দিনগুলোতেও অব্যাহত রাখবো। আশা করি এর মাধ্যমে জেলা সমিতির কাজে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।'

এই চড়ুইভাতিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (টিচিং) মোহাম্মদ আলী, সাবেক সভাপতি সফিউল আলম প্রধান, সহ-সভাপতি রেজহান সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল আলম, সম্পাদক মাহবুব আলম, বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি জুলফিশাহ রাবেয়া মুমু, সহ-সভাপতি ফারজানা লিজা, সাঈফ শাহরিয়ার প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<48806 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1