মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ই স লা মী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

শাহজালালের পুণ্যভূমিতে আমরা

প্রকৃতি তার সুধা যেন সবটুকু ঢেলে দিয়েছে এখানে। হই হুলেস্নাড় করে সবাই নেমে পড়ল। ভারতের সঙ্গে লাগোয়া জাফলং যেন দুই দেশের মিতালি। নৌকাযোগে পার হয়ে আমরা গিয়েছিলাম খাসিয়া পলস্নীর চা বাগান আর জমিদার বাড়ি। চা বাগান, জল, পাথর, ঝরনা আর বালুর কী অপূর্ব সংমিশ্রণ এই জাফলং। প্রকৃতির পাশাপাশি নিজেদের কিছু স্মৃতিও রয়ে গেল জাফলংয়ে...
রুমি নোমান
  ০১ মে ২০১৯, ০০:০০
শাহজালালের পুণ্যভূমিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

'সুরমা নদীর তীরের শহর, সিলেট যে তার নাম, প্রকৃতি দিয়েছে মনোরম শোভা, কত না চমৎকার প্রকৃতির সেই মনোরম শোভা দর্শন করতেই আমাদের গমন ঘটেছিল এই স্বর্গপুরীর উদ্দেশে। কবির কবিতার থেকেও বাস্তবিক সিলেট যেন আরো মোহনীয় আর অপরূপ। অগ্নি ঝরা মার্চের প্রথম সপ্তাহে পরিকল্পনা মাফিক শাহজালালের সেই পুণ্যভূমির উদ্দেশে ট্রেনে যাত্রা করলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী অধ্যাপক আরমিন খাতুন ম্যাডাম ও আনিচুর রহমান স্যার। কুষ্টিয়ার পোড়াদহ জংশন থেকে শুরু করে সিলেট এবং ফিরে আসা অবধি পুরো সময়টা ছিল রোমাঞ্চকর।

সিলেট যখন আমরা পৌঁছাই সুবেহ সাদিকের আবছা আলো তখন চারিদিকে। আমাদের জন্য বাস ঠিক করাই ছিল। স্টেশন থেকে নেমে খাদিম পাড়ায় আমাদের থাকার স্থানে যখন পৌঁছাই সূয্যি মামা ততক্ষণে বেশ তেতে উঠেছে।

সকালের নাস্তা শেষে আমরা যখন জাফলংয়ের উদ্দেশে রওনা করলাম, ঘড়ির কাটায় তখন বাজে প্রায় এগারোটা। জাফলং যাওয়ার পথটা কিছুটা বন্ধুর হলেও এর আশপাশের প্রকৃতি ছিল দেখার মতো। জাফলং পৌঁছানোর পর সবার চক্ষু ছানাবড়া! প্রকৃতি তার সুধা যেন সবটুকু ঢেলে দিয়েছে এখানে। হই হুলেস্নাড় করে সবাই নেমে পড়ল। ভারতের সঙ্গে লাগোয়া জাফলং যেন দুই দেশের মিতালী। নৌকাযোগে পার হয়ে আমরা গিয়েছিলাম খাসিয়া পলস্নীর চা বাগান আর জমিদার বাড়ী। চা বাগান, জল, পাথর, ঝরনা আর বালুর কি অপূর্ব সংমিশ্রণ এই জাফলং। প্রকৃতির পাশাপাশি নিজেদের কিছু স্মৃতিও রয়ে গেল জাফলংয়ে। জিহান, সাগর, মিতুদের ছবি তোলার সেই অভিজ্ঞতার কথা আজ নাই বা বলি। দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা যখন হোটেলে ফিরি, ততক্ষণে রাত নেমে এসেছে। ক্লান্ত, শ্রান্ত হলেও পরবর্তী দিনের নতুন অভিযানের অনুভূতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন ভোর হতেই রওনা হলাম শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে। যাত্রাপথে সবাই নিষ্পলক চোখে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। কমলগঞ্জে পৌঁছে সেখানে পাহাড়ে মাধবপুর চা বাগান আর নীল পদ্মের মায়ায় জড়ানো দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া পাহাড় ঘেরা নয়ানভিরাম লেক।

সেখান থেকে সিলেটি আনারসের স্বাদ নিয়ে আমরা চললাম লাউছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রাচীন আর বিলুপ্ত প্রায় হাজারো বৃক্ষের সমারোহ এই উদ্যানে। পাহাড়ি বনাঞ্চল আর বৃক্ষরাজির সমারোহে এ এক অন্য জগৎ। এ উদ্যানের মাঝেই একটি টিলাতে বিক্রি হয় সাত রঙা চা। বিখ্যাত সেই চায়ের স্বাদ গ্রহণ শেষে আমরা চললাম শ্রীমঙ্গল মূল শহরের উদ্দেশে। পানসিতে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম সিলেটের উদ্দেশে। সন্ধ্যা নামতেই গাড়িতে শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। জামিল, টুম্পার নাচ গিফারীর অবাক চাহনি আর সবার গানের তালে তালে কখন যে মূল শহরে চলে এলাম বুঝতেই পারিনি। রাতের বেলা চাইনিজ খাইয়ে ম্যাডামের চমকটি ছিল তৃপ্তির ঢেকুর তোলার মতো।

ভ্রমণের শেষ দিন যে আমাদের জন্য এত বড় চমক জানতে পারলে হয়তো কেউই ঘুমাতে পারতো না। সকালে উঠেই আমরা চলে গেলাম হজরত শাহজালালের মাজারে। শুক্রবার হওয়ায় মানুষের ঠাঁই নেই সেখানে। মাজার পরিদর্শন ও ইবাদাত শেষে রওনা হলাম রেইন ফরেস্ট খ্যাত রাতারগুলের উদ্দেশে। নৌকায় চড়ে অভ্যন্তরে পৌঁছতেই সবার চোখ ছানাবড়া! কী অপূর্ব! বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে জেগে ওঠা বনাঞ্চল সত্যিই প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি। নৌকায় পা ঝুলিয়ে আমরা শুধু অবাক নয়নে দেখছিলাম বাংলা মায়ের রূপের সুধা। ওয়াচ টাওয়ারে যখন উঠে চারিদিক অবলোকন করার পর মনে হলো একটি কবিতার লাইন, 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর'।

\হফেরার পথে সেই মুগ্ধ চাহনির রেশ ছুয়ে ছিল সবার মাঝে। এরপর রওনা হলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে। মিসবাহ ভাইয়ের সহযোগিতায় ঘুরে দেখলাম টিলা আর পাহাড়ে ঘেরা সুন্দর এক ক্যাম্পাস। শত সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত শহীদ মিনারটির কথা না বললেই নয়।

এবারে ফেরার পালা। শেষ হলো আমাদের তিন দিনব্যাপী সিলেট ভ্রমণ। এত সুন্দর ভ্রমণ পেছনে যাদের নীরব অবদান ছিল তারা ছিল সর্বদাই ব্যতিব্যস্ত। ছয়জন গ্রম্নপ লিডারের সমন্বয় আর ওষুধ নিয়ে সাদিয়ার সার্বক্ষণিক তদারকি আর আরমিন ম্যাডামের দিক-নির্দেশনা ছিল সত্যিই অসাধারণ। আর গাইড হিসেবে তিনদিন ধরে শাকিব, মুরাদদের কথা তো ভোলার মতো নয়।

তিনদিন টানা ভ্রমণের ক্লান্তি কাউকে স্পর্শ না করলেও রাত ১০টায় উপবন ট্রেনে চড়ে যখন ফিরছি সবাই তখন একটু ক্লান্ত। ঝিক ঝিক ট্রেনের শব্দের সঙ্গে সবাই বিভোর হয়ে ছিল সিলেটের নয়ানভিরাম দৃশ্যগুলোর মাঝে। পরদিন বেলা ২টায় যখন কুষ্টিয়ার মাটিতে পা রাখতেই সবাই যেন সমন্বিত ফিরে পেল। আবারো সেই যান্ত্রিক জীবনের রুটিনে ফেরা। কিন্তু সবকিছুর মাঝে স্মৃতিপটে অম্স্নান হয়ে রবে বন্ধুদের সঙ্গে এ সিলেট ভ্রমণ। কবির ভাষায়, 'হয়তো হারিয়ে যাবে বহুদূর, সীমান্ত-সাগর পেরিয়ে এ জীবন, তবু স্মৃতি পটে অম্স্নান তুমি-তোমরা আমাদের এ ভ্রমণ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<47510 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1