শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাণের ছেঁায়া মিলল এসে প্রাণে

আরাফাত শাহীন
  ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বহুদিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হচ্ছিল সাবেক ও বতর্মান সদস্যদের একত্রিত করে একটি মিলনমেলার আয়োজনের। তবে এখানে একটা শঙ্কা বরাবরই থেকে গিয়েছিল। যারা এখন কমর্জীবনে প্রবেশ করেছেন তাদের সবাইকে একসাথে পাওয়া কঠিনসাধ্য ব্যাপারই বটে। তবে মনে যদি আন্তরিকতার ঘাটতি না থাকে তাহলে যে কোনো কঠিনসাধ্য কাজকেই যে সহজে করা সম্ভব সেটাই প্রমাণ করেছে শাখা পাঠচক্র, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মেহরাজ মতিন সনি এবং ইশরাক পারভীন খুশি সুদূর আমেরিকা থেকে চলে এসেছেন। মূলত তাদের আগমনকে উপলক্ষ করেই এই মিলনমেলার আয়োজন। আবার যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছিলেন তারাও সানন্দে এসে হাজির হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ যেন সত্যিই এক অন্যরকম মিলনমেলা!

আমি নিজেকে মহা সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। কারণ এমন একটা আয়োজনে আমি নিজেও অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। শাখা পাঠচক্র, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৭ বছর পার হয়েছে। এই দীঘর্ সময়ের মধ্যে এটাই ছিল পাঠচক্রের সাবেক ও বতর্মান সদস্যদের অংশগ্রহণে সবর্বৃহৎ মিলনমেলা। বতর্মান সময়ে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে পাঠচক্র পরিচালিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মধ্যে অন্যতম এবং সাফল্যের দিক দিয়ে প্রথম সারিতে রয়েছে। এই সংগঠনের প্রতি সদস্যদের ভালোবাসা যে কতটা আন্তরিক তা আমি নিজেও এবার বেশ ভালোভাবে কাছে থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। এমন একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা বতর্মান সদস্যদের জন্য বিরাট বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল বলেই মনে করি। তবে পাঠচক্র সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এই কঠিন কাজটিকে একেবারেই সহজ করে দিয়েছে।

এবারের এই মিলনমেলার সবচেয়ে বড় আকষর্ণ ছিল শাখা পাঠচক্রের নিয়মিত প্রকাশনা সমাজ ও সাহিত্যবিষয়ক ছোটকাগজ ‘বহতা’। সবার একত্রিত হওয়াকে কেন্দ্র করেই বহতা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। নিদির্ষ্ট দিনে সবার হাতে বহতা তুলে দেয়া বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বহতার সম্পাদক এবং শাখা পাঠচক্রের বতর্মান সমন্বয়কারী নাফিস অলির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই বহতা সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আমি নিজেও বহতার সঙ্গে সামান্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি সদস্য যখন বহতা হাতে নিয়ে পড়েছেন এবং এর প্রশংসা করেছেন তখন সত্যিই মনে হয়েছে, এই শ্রম যেন সাথর্ক হলো!

সকালের নাশতা দিয়ে শুরু হয়ে রাত প্রায় নয়টা পযর্ন্ত চলমান এই মিলনমেলাতে একবারের জন্যও ছন্দপতন ঘটেনি। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে সবার আন্তরিকতার জন্যই। যেসব সাবেক সদস্য বাইরে থেকে এসেছেন তাদের সবার বন্ধুসুলভ আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। এর আগে কারও সঙ্গেই আমার পরিচয় ছিল না। তারপরও তারা আমাকে যেভাবে কাছে টেনে নিয়েছেন, আমাকে তাদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় সিক্ত করেছেন তাতে আমি বিমোহিত হয়েছি। সত্যি কথা বলতে কী, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সংগঠনই আছে এবং তার বেশ কয়েকটির সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। কিন্তু কোথাও এমনটা পাইনি। এর কারণ আসলে কী? এই কারণ হলো, পাঠচক্রের সদস্যরা প্রত্যেকেই বই পড়েন এবং বইয়ের ভাষাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। আর বই যে আমাদের বিশ্বমানব হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে তাতে আর সন্দেহ কী!

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘আলোকিত মানুষ চাই’। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার সবসময় এই দিকটাতেই নজর দিয়ে এসেছেন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র জন্মলগ্ন থেকে সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। শাখা পাঠচক্রের এই অনুষ্ঠানে থেকে আমার বারবারই মনে হয়েছে আমি যেন কিছু আলোকিত হওয়া মানুষের সঙ্গেই রয়েছি! তাদের আলোয় আলোকিত হতে পারবো কিনা এটা আমি জানি না। তবে তাদের কাছ থেকে যে মানুষ হওয়ার একটা বাসনা মনের ভেতর জেগে উঠেছে তাতে সংশয় নেই।

আমাদের অনেকের ধারণা, সাহিত্য পড়ে লাভ কী! চাকরির জন্য তো আর এসব বিষয় কাজে লাগবে না! আমাদের সামাজিক অবস্থান আমাদের বারবার এদিকেই ঠেলে দিচ্ছে। এই মিলনমেলাতে এসে আমার একবারও মনে হয়নি যে সাহিত্য পড়ে কোনো লাভ নেই; সাহিত্য পড়ে চাকরি পাওয়া যাবে না। পাঠচক্রের সাবেক যেসব সদস্য এসেছিলেন তারা সবাই আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। তারা সরকারের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত আছেন। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো তারা প্রত্যেকেই কমর্জীবনে পাঠচক্রের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের বলা কথাগুলো নিঃসন্দেহে আমাদের উৎসাহিত করেছে।

অনুষ্ঠানের সময় বাদেও বেশকিছু সময় আমি সাবেক সদস্যদের সঙ্গে কাটিয়েছি। সত্যিকারাথের্ আমার মনে হয়েছে আমি কিছু ভালো মানুষের সঙ্গে থাকতে পেরেছি। যারা বই পড়েন তাদের ভেতরটা যে সত্যি সত্যিই আলোকিত হয়ে থাকে এই মানুষদের সঙ্গে না মিশলে এটা হয়তো আমার উপলব্ধির বাইরেই থেকে যেত। এই মিলনমেলাটি পুরোপুরি আলাদা ধরনের। এই মিলনমেলা কেন অন্যরকম? সাধারণত বিভিন্ন সংগঠনের পুনমির্লনীগুলো হয়ে থাকে পুরোমাত্রায় আনুষ্ঠানিক। কিন্তু আমাদের এই মিলনমেলা ছিল পুরোপুরি অনানুষ্ঠানিক। এখানে কৃত্রিমতার বিন্দুমাত্র ছাপ ছিল না। ঘরোয়া পরিবেশে এই সুন্দর একটা আয়োজন সবাইকেই সীমাহীন তৃপ্তি দিয়েছে। দিনশেষে তাই অনেককেই বলতে শোনা গেছে, এমন আয়োজন যেন বারবার করা যেতে পারে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<27729 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1