চট্টগ্র্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। ছোটো বড় সবুজ পাহাড় বেষ্টিত ক্যাম্পাস। প্রকৃতি যেন দুহাত ভরে সাজিয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। শহর থেকে ক্যাম্পাস প্রায় ২২ কিলোমিটার দূর। তাই শিক্ষাথীের্দর যাতায়াতের জন্য ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্যটা এখানেই। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্ পরিবহনের জন্য ছিল নিজস্ব ট্রেন। কিন্তু বতর্মানে তা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর একমাত্র শাটল ট্রেনের বিশ্ববিদ্যালয়। ২টা শাটলের পাশাপাশি আছে ১টি ডেমুও। প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার শিক্ষাথীর্র বিশ্ববিদ্যালয় যাতায়াতের মাধ্যম এই শাটল ট্রেন। শাটল দেখতে শুধু যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দশর্নাথীর্রা আসেন তা কিন্তু নয়। বিদেশ থেকেও শাটল দেখতে চবিতে আসার অনেক নজির আছে। শাটলই হলো চবির প্রাণ। অনেকে এই শাটলকে ‘ভ্রাম্যমাণ বিশ্ববিদ্যালয়ও’ বলেন। আড্ডা, গল্প, সান, পড়ালেখা কী নেই এই শাটলে! বিভিন্ন বগিতে সবাই একসঙ্গে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখে পুরো ট্রেন। এবার চবির সৌন্দযর্ আর ঐতিহ্যে যোগ হলো নতুন মাত্রা।
লাইভ কাস্টিং মেথডে তৈরি করা হয়েছে এ ভাস্কযির্ট। যা বাংলাদেশে প্রথম। ধূসর রঙের আস্তরণে মাবের্ল ডাস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে রোদ বৃষ্টিতেও ভাস্কযর্ মলিন হবে না। এই ভাস্কযের্র মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ ও সমান অংশগ্রহণ বুঝানো হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের ভূমিকাও উপজাতি এক নারীর অবয়বে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মূল বেদীসহ নিমির্ত ভাস্কযির্টর উচ্চতা ২০ ফুট, প্রস্থ ১৮ ফুট। এর মধ্যে ওপরের স্তরে তিন মুক্তিযোদ্ধার উচ্চতা ১১ ফুট এবং নিচের স্তরে প্রতিটি মানব অবয়বের উচ্চতা সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট। প্রকল্পটির নিমাের্ণ ব্যয় ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চবির নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ লাখ ও বাকি ১০ লাখ টাকা ব্যক্তি অনুদান।
ভাস্কযর্ দৃশ্যমান দেখে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক শিক্ষাথীর্বৃন্দ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জয় বাংলা’ নামে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কযর্ স্থাপিত হয়েছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীঘর্ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মানুষ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অজির্ত হয় স্বাধীন সাবের্ভৗম বাংলাদেশ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বীরত্ব ও গৌরব গাথাই তুলে ধরছে ‘জয় বাংলা’ ভাস্কযর্। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বতর্মান ও ভবিষ্যতে ‘জয় বাংলা’ ভাস্কযির্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের সমৃদ্ধ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরবে বলেই বিশ্বাস করি। ভাস্কযর্ নিয়ে এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসানুল কবির পলাশ। অথর্নীতি বিভাগের তৃতীয় বষের্র শিক্ষাথীর্ দেওয়ান তাহমিদ বলেন ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস। দীঘির্দন এখানে মৌলবাদী রাজনীতির আধিপত্য ছিল। সে পরিস্থিতির বদল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভাস্কযর্ ছিল না। এ অভাব অনুভব করে ’৫২ থেকে ’৭১ সংগ্রামের গণমানুষের ভাস্কযর্ চাই’ দাবিতে ‘আমরা চবিয়ান’ প্ল্যাটফমর্ থেকে ২০১৬ সালে কিছু শিক্ষাথীর্ আন্দোলন করেছিল। আমরা চেয়েছিলাম চবির সুবণর্জয়ন্তীর আগেই এ ভাস্কযের্র কাজ শুরু হোক ।
উদ্বোধনকালে উপাচাযর্ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের ঠিকানা। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ‘৭১’ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ বীর বাঙালির অগ্রিম ত্যাগের মহিমা এ প্রজন্মের সন্তানদের কাছে চির অ¯øান করে রাখার প্রত্যয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ভাস্কযির্ট নিমার্ণ করা হয়েছে। আমাদের সবাইকে ইতিহাসের এ সত্যতা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে হবে।