বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অদম্য তের বছর

ড. মীজানুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকেির্টং বিভাগের অধ্যাপক। বতর্মানে দায়িত্ব পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ হিসেবে। তার দায়িত্ব পালনকালেই মূলত পুরনো কলেজের কালচার ছেড়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে লিখেছেন রাহুল শমার্
নতুনধারা
  ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ বছরে পদার্পণ সম্পকের্ ড. মীজানুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। শিক্ষা, সমাজ, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই এই বিদ্যাপীঠ গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা পালন করছে। ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা করা হয়, তখন অবকাঠামো বা অন্যান্য বিষয় চিন্তা না করেই মূলত তা করা হয়। তৎকালীন কলেজের শিক্ষক ও ছাত্ররা এখানে ছিল ২০১১ সাল পযর্ন্ত। কলেজের শিক্ষকরা চলে যাওয়ার পরই মূলত ২০১১ সালেই নতুন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। সেই অথের্ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স কিন্তু ১৪ বছর নয়।

বিভিন্ন পারিপাশ্বির্ক অবস্থা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মেধাবী শিক্ষক, শিক্ষার মান ইত্যাদি কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্র-শিক্ষকদের দ্বিতীয় আকষের্ণ পরিণত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই আমরা কলেজের যে কালচার ছিল তা পরিবতর্ন করতে পেরেছি। কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মূল পাথর্ক্য হলোÑ কলেজ কেবল জ্ঞান বিতরণ করে আর বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান আহরণ এবং বিতরণ দুটোই করে।

এখানে গবেষণায় ব্যাপক জোর দেয়া হচ্ছে। এখানকার বহু শিক্ষাথীর্ এবং প্রায় সব শিক্ষক কোনো না কোনোভাবে গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত। একাডেমিক দিক থেকেও গত কয়েক বছরে বিসিএস, জুডিশিয়াল সাভির্স, ব্যাংক রিক্রুটমেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষাথীের্দর অবস্থান অনেক ভালো। বতর্মানে চাকরির বাজারে তাদের অবস্থান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সবাই অনাবাসিক। এখানে রয়েছে ক্লাসরুম ও ল্যাবরেটরির স্বল্পতা, গবেষণাগার ও বইয়ের সংকট। কারণ, এটা আগে ছিল কলেজ। পরে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলেও কোনো রকমের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। গত ৪/৫ বছরের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ তৈরি এবং কয়েকটি ভবনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে পেরেছি। এতে ছাত্রীদের আবাসন সংকটের খানিকটা সমাধান হবে এবং ক্লাসরুমের সংকটও তুলনামূলকভাবে কমবে।

ড. মীজানুর রহমান উপাচাযের্র দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূণর্ কিছু বিষয়ে প্রাধান্য দেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্যÑ উপাচাযর্ হওয়ার পরেই আমার বক্তব্য ছিল, তাড়াহুড়ো করে সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ারও সুযোগ নেই। আমি প্রথমেই লক্ষ্য হিসেবে নিধার্রণ করেছিলাম শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি করাকে। যা ইতোমধ্যে করতে পেরেছি। নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে এর কোনো কোনোটায় ভাইস-চ্যান্সেলর ছাড়া আর কোনো অধ্যাপক নেই। আবার কোনো কোনটিতে দুই/তিন জন অধ্যাপক আছে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূতের্ ১০০ জন অধ্যাপক রয়েছে। এদের মধ্যে ৯৮ জনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। বতর্মানে ১৫০ জন শিক্ষক আছেন যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষারত। এই শিক্ষকরা যখন ফিরে আসবেন তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি জ্ঞানভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে। আমার ভালো লাগাটা এখানেই যে, আমি দেশের মেধাবী শিক্ষক এবং শিক্ষাথীের্দর এখানে আকষর্ণ করতে পেরেছি। মানুষ এক সময় মনে করত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মানে তো জগন্নাথ কলেজই। গত ছয় বছরের চেষ্টায় সেই ধারণাটা ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষাঙ্গনে ‘নতুন ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ ছাড়াও গত কয়েক বছরে বেশ কিছু যুগপোযোগী নতুন বিভাগ চালু করি, যেমনÑ চারুকলা বিভাগ, নাটকলা বিভাগ, সংগীত বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, ভ‚মি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এ ছাড়াও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম লিখিত পদ্ধতিতে ভতির্ পরীক্ষা নিচ্ছি। এ পরীক্ষা সম্পূণর্ বণর্নামূলক। প্রযুুক্তির সুবিধা নিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রেও নানা অসুদোপায় অবলম্বনে ঘটনা ঘটছে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্যই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস টেস্ট থেকে শুরু করে সব পরীক্ষাই এখন থেকে আর এমসিকিউ পদ্ধতিতে হচ্ছে না।

এখানে বড় সংকট ছিল শিক্ষক স্বল্পতা। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্র-শিক্ষকের যে অনুপাত আগে ছিল তা অনেক কমিয়ে এনেছি। এখানে তীব্র পরিবহন সংকট ছিল। ইতোমধ্যে ২০টি নতুন বাস পরিবহন পুলে সংযোজন করা হয়েছে আরও ৪টি বাস এই মাসেই যোগ হবে। এ ছাড়াও এখানে সেশনজটও এখন জিরো পযাের্য়। কোনো কোনো বিভাগে চার বছরের কোসর্ তিন বছর আট মাসেই শেষ হচ্ছে।

গত অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির ১১৭তম সভায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়ের পশ্চিমতি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। এ ছাড়া গত ৯ অক্টোবর একনেক সভায় ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই প্রকল্প অনুমোদন করেন। যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এত জায়গা ও টাকা স্বাধীনতা উত্তরকালে কোনো সরকার বরাদ্দ দেয়নি। এই প্রকল্পটা হলো অন্তবর্তীর্কালীন প্রকল্প। এটা আসলে মূল প্রকল্প তৈরি করার জন্য একটি প্রকল্প।

এখানে ভালো ক্যান্টিন নেই, আবাসন ব্যবস্থা নেই, লাইব্রেরিতে পযার্প্ত বই নেইÑ এগুলো উপাচাযর্ হিসেবে আমাকে খুব পীড়া দেয়। আশ্চযের্র ব্যাপার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বতর্মান জায়গাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কাগজপত্রে নেই, শুধু দখলে আছে। এখন আমরা সরকারের কাছ থেকে ২০০ একর জায়গা নামে বরাদ্দ পেয়েছি। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি জমির মালিক হলো। এই কাজটুকু অন্তত করে দিয়ে গেলাম। ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পেল তার আপন ঠিকানা। এটাই আমার তৃপ্তি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22325 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1