বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাসে তারুণ্য ভাবনা

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ^বিদ্যালয় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়। বৃষ্টির আগমনে ক্যাম্পাস খুঁজে পায় স্নিগ্ধ প্রকৃতির সান্নিধ্য। বিশ^বিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মাকের্ট, ছিলছিলা, প্যারিস রোড, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন, ইবলিশ চত্বরসহ সব জায়গা যেন বৃষ্টির ছেঁায়া পেয়ে পবিত্রতার স্বাদ পায়। ক্যাম্পাস হয় সবুজে রঙিন। এমন দিনেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাসগুলো নিয়মিত চালু থাকে, যা সত্যিই রোমান্সকর। কিন্তু ভিন্নধমীর্ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে শিক্ষাথীর্রা ক্লাস করতে চলে আসে ক্যাম্পাসে...
নাজমুল মৃধা
  ০৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
ব্যস্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ বৃষ্টি যেন এনে দেয় গম্ভীর নীরবতা

বৃষ্টি যেন প্রকৃতির রাধা। বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে। আর সেই বৃষ্টি যদি হয় ক্যাম্পাসে। ব্যস্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ বৃষ্টি যেন এনে দেয় গম্ভীর নীরবতা। পিচঢালা রাস্তায় বৃষ্টির ফোটাগুলো যেন বষার্র দাম্ভিকতার জানান দেয়। বৃষ্টি মানে মধুর কলতান! বৃষ্টি মানে আকাশে কালো মেঘের মিছিল। বৃষ্টির দিনে দুপুর যেন অলসতার মূতর্ প্রতীক, শান্ত বিকেলে নিস্তব্ধ চারদিক। বৃষ্টির দিনের মৌনতা যেন মানবিকতাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ^বিদ্যালয় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়। বৃষ্টির আগমনে ক্যাম্পাস খুঁজে পায় স্নিগ্ধ প্রকৃতির সান্নিধ্য। বিশ^বিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্ত¡র, পরিবহন মাকের্ট, ছিলছিলা, প্যারিস রোড, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন, ইবলিশ চত্বরসহ সব জায়গা যেন বৃষ্টির ছেঁায়া পেয়ে পবিত্রতার স্বাদ পায়। ক্যাম্পাস হয় সবুজে রঙিন। এমন দিনেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাসগুলো নিয়মিত চালু থাকে, যা সত্যিই রোমান্সকর। কিন্তু ভিন্নধমীর্ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে শিক্ষাথীর্রা ক্লাস করতে চলে আসে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে তখন চলে পানির রাজত্ব, কেউ ছাতা মাথায় একা একা হঁাটে, আবার কেউবা একই ছাতার নিচে জোড়ে হঁাটে। বৃষ্টির কলতানের ছন্দে হেঁটে চলা এসব শিক্ষাথীর্র মনে আসে তখন নানা ভাবনা। কারও মন হারিয়ে যায় স্মৃতির মেলায় আবার কেউ প্রকৃতির রূপে মনে মনে কবিতা লেখা শুরু করে।

তাইতো মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত কবিতার কয়েকটি চরণÑ

“বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান

শিব ঠাকুরের বিয়ে হবে তিনকন্যা দান”

বৃষ্টির ছন্দ তরুণদের মনে এনে দেয় নতুনভাবে ছুটে চলার বাতার্। ক্যাম্পাসে এমন দিনে ক্লাস করার অভিজ্ঞতা যেন ভবিষ্যতে অবসরে স্মৃতির খোরাক।

রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বষের্র শিক্ষাথীর্ জারিন মীম বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে অনেক ভালো লাগে কারণ চারদিকে একটা শান্ত নিমর্ল পরিবেশ বিরাজ করে আমাদের মনটা প্রকৃতির মতোই সতেজ থাকে। ক্লাসে বন্ধুদের সঙ্গে স্মৃতির আড্ডা জমে উঠে।’

বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকমর্ বিভাগের দ্বিতীয় বষের্র শিক্ষাথীর্ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগে। তখন বন্ধুরা সবাই মিলে ক্যাম্পাসে ভিজতে ইচ্ছে হয়। গ্রামে শৈশবের কাদা মাটিতে বৃষ্টিতে ছুটে চলার কথা মনে পড়ে যায়।’

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষাথীর্ সজীব উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে ক্লাস করতে একেবারেই ভালো লাগে না। বৃষ্টি মানে একটু শান্তির ছেঁায়া, ঘুমকে আমন্ত্রণ জানানো। ক্লাস না করে সেদিন শুধু ঘুমোতে ইচ্ছে হয়। বন্ধুরা মিলে রান্না করে খাওয়া, মুড়িতে বেশি করে পেঁয়াজ, মরিচ মিশিয়ে মুড়ি পাটির্র উত্তম দিন সেদিন। মোটকথা বন্ধুদের সঙ্গে মুখরিত আড্ডায় বৃষ্টি উপভোগ করাই আমি শ্রেয় মনে করি।’

বাংলা বিভাগের ২য় বষের্র শিক্ষাথীর্ নুরে আফজা উমির্ বলেন, ‘বৃষ্টি উপভোগ করা সবাই পছন্দ করে আমিও আলাদা নয় তবে ক্যাম্পাসে যখন বৃষ্টির মধ্যে বের হই তখন অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। ¯িœগ্ধ পরিবেশে মনটা বড্ড বেশি কোমল হয়ে যায়। তখন মনের অজান্তেই ভিন্ন জগতে ফিরে যাই। আর এমন দিনে ক্লাস করাটা যেন মনের সাথে যুদ্ধ করা।’

রসায়ন বিভাগের শিক্ষাথীর্ ইফফাত মিতু বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে আমার ঘুমোতে অনেক ভালো লাগে কিন্তু ক্লাস থাকায় অনিচ্ছা সত্তে¡ও ক্লাসে আসতে হয়। তবে ক্যাম্পাসের যখন বৃষ্টিভেজা রূপ দেখি তখন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি প্রকৃতির দিকে।’

বিশ^বিদ্যালয়ে বষার্মুখর দিনে সকলের প্রকৃতির সৌন্দযের্ক বরণ করে নেয়ায় যেন আসল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। বৃষ্টিতে ভিজে কদমফুলগুলো বৃষ্টিস্নানে নববধূরূপে সাজে। ক্যাম্পাসের বৃক্ষগুলো যেন সবুজের কাপের্ট বিছিয়ে দেয় আর প্রকৃতিপ্রেমী তরুণদের ডাকে মানবিকতার দিকে। সতেজ, কোমল রক্তের ছন্দ নিয়ে বৃষ্টিগুলো সবাইকে আহŸান জানায় দুরন্ত গতিতে ছুটে চলতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে