শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

স্বপ্ন পূরণের গল্প

আসিফ হাসান রাজু
  ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে দশম সমাবতর্ন

সমাবতর্ন বলতে আমরা সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের আনুষ্ঠানিক শেষকে বুঝি। সহজভাবে বললে, একজন শিক্ষাথীর্র শিক্ষা কাযর্ক্রমের সমাপন শেষে যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেয়া হয়, ওই দিনটাই সমাবতর্ন নামে পরিচিত। দিনটিকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষাথীর্র থাকে হাজারো স্বপ্ন। সদ্য জন্ম নেয়া শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, সেই সঙ্গে সে নানা ধরনের স্বপ্নও দেখতে থাকে। স্বপ্নের জালে তৈরি করে সে তার আপন পৃথিবী। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তার শুরু হয় পথচলা। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকে তার পরিবারের সদস্যরাও। পড়ালেখা শুরু করে সে একটি সময় স্কুল, কলেজের গÐি পার করে স্বপ্ন দেখে স্বনামধন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা করার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন শিক্ষাথীর্ নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে পড়ালেখার সুযোগ পায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর সে পার করে এক মধুর জীবন। গড়ে ওঠে অচেনা অজানা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব। আবার সময়ের প্রয়োজনে শেষ হয়ে যায় সেই সুখের মুহ‚তর্গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, হলে একই সঙ্গে রান্না করে খাওয়া, দলবেঁধে কোথাও হুট করে ঘুরতে যাওয়া এমন আনন্দের মধ্যে দিয়ে কাটে পঁাচটি বছর। তারপর তার শিক্ষাজীবন শেষ হয় একটি কালো রঙের গাউন ও একটি কালো রঙের হ্যাটের সমাবতের্নর মাধ্যমে। যা প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের শত প্রতিক্ষার ফল। ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ পায় এদিন। স্বপ্ন যেন ধরা দেয় বাস্তব রূপে।

সম্প্রতি দেশের অন্যতম শেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জমকালো আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দশম সমাবতর্ন। এদিন যেন নতুন সাজে সেজেছিল মতিহারের সবুজ চত্বর। সবর্ত্র কালো গাউন পরা একদল লোকের এলোমেলো ঘোরাঘুরি। প্রিয় ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে স্মৃতি খুঁজে ফিরছেন তারা। দিনভর এক সময়ের নিত্যসঙ্গী, বতর্মানে ‘না-দেখা বন্ধু’দের সঙ্গে আনন্দ-উচ্ছ¡াসে সময় কাটাতে দেখা যায় তাদের। এদিন জীবনকে যেন নতুন ভাবে অনুধাবন করছে তারা। ফিরে যায় কিছু সময়ের জন্য সেই চিরচেনা ক্যাম্পাসের সেই দলবেঁধে বন্ধুদের সাথে কপি সফে বসে আড্ডা দেওয়া, কারণে অকারণে গলা ছেড়ে দলবেঁধে গান গাওয়া এমন নানা অতীতের স্মৃতিতে। অতীত সে স্মৃতিকে ফিরে পেতে তাইতো দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় টুকিটাকি চত্বর, আম বাগান, শহীদ মিনার, সিনেট, সাবাস বাংলাদেশ, প্যারিস রোড, বদ্ধভূমি, বুদ্ধিজীবী চত্বর, পশ্চিম পাড়া, পুরাতন ফোকলোর মাঠ, চারুকলা, রেললাইনে সময় পার করতে। অনেকেই একটুখানি বসেছেন পুরনো দিনের স্মৃতিময় স্থানে। একটু হয়তো আবেগাপ্লুতও হয়েছেন। আর এমন পরিস্থিতিতে মজাও নিচ্ছেন কাছের অনেক বন্ধুরা। সবমিলিয়ে এদিন সদ্য গ্রাজুয়েটদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ¡াসের ছাপ। ক্যাম্পাসজীবনে কাটানো প্রাণের সতীথের্দর সঙ্গে নিজের স্মৃতিকে ফ্রেমে বন্দি করতে দেখা যায় অনেকের। শুধু সাবেক নয় এদিন তাদের সঙ্গে উচ্ছ¡াসে দিন কাটাতে দেখা যায় বতর্মান শিক্ষাথীের্দরও। এ যেন নবীন প্রবীণের মিলনমেলা।

সমাবতর্ন উপলক্ষে এদিন ক্যাম্পাস সেজেছিল এক নতুন সাজে। লাল, সবুজের বাতির সাথে রঙের তুলির অল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেট থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম পযর্ন্ত নবরুপে সাজিয়ে তোলা হয় ক্যাম্পাসকে। পাশাপাশি বিভিন্ন ভবন, রাস্তা, গাছপালা রঙের আচড়ে যেন প্রাণের ছেঁায়া পেয়েছিল সমাবতর্ন উপলক্ষে।

সমাবতের্ন অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েট নিজেদের অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে রহিদুল ইসলাম নিরব, বাধন হোসেন ও নওরীন সুলতানা বলেন, “অনেক প্রতিক্ষার পর আমরা পেয়েছি সমাবতর্ন। আজ আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ফেলে আসা সেই সোনালি দিনগুলো খুব মনে পড়ছে। আবার ওই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। কষ্ট নিয়ে আর স্মৃতির পাতায় গেঁথে থাকা অতীত স্মৃতিকে সজীব করে ফিরতে হবে প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে। সাথে নবীনদের অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে। সবমিলিয়ে বলতে পারি, স্বপ্ন আজ পূণর্ হলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<15425 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1